Kolkata Book Fair 2022: সারা বছর আর কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেন না বললেই চলে। তবে জানুয়ারি মাস শেষ হতে শুরু করলে মনটা চনমন করে ওঠে। আনন্দ যেন ধরে না। কারণ কলকাতা বইমেলা আসছে। বিভিন্ন স্টলে থরে থরে সাজানো বই ডাকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে নদিয়ার চাকদা থেকে হাজির হন গৃহশিক্ষক দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়।
লাখ লাখ টাকার বই কেনেন
আর তার পরের ঘটনার কথা শুনলে চমকে উঠতে হয়। লাখ লাখ টাকার বই কিনে যান। নিজের জন্য, ছাত্রছাত্রীদের জন্য, পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য। বই পড়েন এবং উপহার হিসেবে তুলে দেন। গত কয়েক বছর ধরে এই নেশা যেন আরও বেশি করে জাঁকিয়ে বসেছে। প্রতি মাসে হিসেব করে টাকা জমাতে ভোলেন না। আর কিছু কেনা হোক বা না হোক, বই কেনা চাই।
আরও পড়ুন: রাত-বিরেতে ঘুঙুরের শব্দ, ধূপধুনোর গন্ধও, শান্তিপুরের সেই বাড়িতে যাবেন?
টিউশনি এবং বই
আগে কলেজে পার্ট টাইম পড়াতেন। সে সব ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পুরোপুরি মনোযোগ টিউশনে। থাকেন নদিয়ার চাকদায়। দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ছোটবেলা থেকেই যাই। গত কয়েক বছর ধরে বই কেনার নেশা বেড়েছে। এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। প্রতি মাসে ১২-১৪ হাজার টাকা জমিয়ে রাখি।" বলা যায় সে কারণে কোনও অনুষ্ঠানেও যাওয়ার বালাই নেই।
তিনি বলেন, "পড়তে এবং পড়াতে ভালবাসি। বেশ কয়েক বছর ধরেই বেশি বেশি করে বই কিনছি। সেটা ২০১৯, ২০২০ এবং এবার। এ বছর ২ লক্ষ ২০ হাজার কিনেছি। এবং পুরস্কার হিসেবে ১৭ হাজার টাকার বই পেয়েছেন।"
দেখার সুযোগ বেশি
তিনি জানান, কলেজ স্ট্রিটে এত বই দেখার সুযোগ-সুবিধা থাকে না। ছাড় গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজে ৭-৮ ঘণ্টা পড়েন। কী কী বই আছে, সেই তালিকা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যখন যেমন চান, তেমন তাঁদের দিয়ে দেন। তিনি ইংরেজি অনার্স এবং এমএ পড়ান। তার বইয়ের তালিকার মধ্যে রয়েছে দর্শন, সিনেমা, গান, বিজ্ঞান।
তাঁর প্রায় ৭০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। ১৯৯৯ সাল টিউশন পড়ান। ইউপিএসসি মেনে দু'বার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে ইন্টারভিউ ঠিকঠাক হয়নি। তাই ঠিক করে নেন আর নয়। এবার টিউশনি পুরোদমে। তাঁদের দু'টো বাড়ি রয়েছে। চাকদার তিনতলা বাড়িতে থাকে থাকে থরে সাজানো বই। রানাঘাটের বাড়িতেও বই থাকে।
গাড়ি ভরে বই নিয়ে চললেন
তিনি বলেন, "এবার কলকাতা বইমেলায় ৫ দিন এসেছি। সঙ্গে ছিল দু'টো গাড়ি। আর ৩-৪ ছাত্রছাত্রী থাকে। তাঁদের সাহায্যে বই কিনে বাড়ি এসেছি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বই থাকবে এটাও দেখতে ভাল লাগে। বই দেখলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। যে করে হোক কিনতেই হবে। এবার ভেবেছিলাম বেশি কিনব না। তবে ছাড়িয়ে গেল। এখন হাজার দশেক বই রয়েছে।"
কলকাতা বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু দে জানান, বইয়ের জন্য এরকম পাগলামো! এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে।