
Legal Literacy And Awareness: শহরের বিভিন্ন এলাকায় পার্কে-বাগানে প্রেমিকযুগলের গা-ঘেঁষে বসে থাকা বা ঘনিষ্ট হওয়ার মতো দৃশ্য অনেকরই চোখে পড়েছে। বর্তমানে ‘ব্যক্তি-স্বাধীনতা’র যুগে এ দৃশ্য আখচার দেখা যায়। নদীর পাড়ে, পার্কে একটু বেশি কাছাকাছি গা-ঘেঁষে বসলেই হাজির পুলিশ! ‘ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড’ করলেই প্রেমিকযুগলকে (বা একাধিক জোড়া কপোত-কপোতি) ধরে তোলা হবে পুলিশের গাড়িতে, নিয়ে যাওয়া হবে স্থানীয় থানায়। প্রেমিকযুগলের সঙ্গে এমন পুলিশি ‘শাসন-তর্জন’ নতুন নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, পুলিশ কি এ ভাবে প্রেম করার বা ঘনিষ্ট হওয়ার ‘অপরাধ’-এ কাউকে থানায় ধরে নিয়ে যেতে পারে? জেনে নিন এ ক্ষেত্রে আইন কী বলছে...
আরও পড়ুন: UPI-লেনদেনে দোকানদারদেরও চার্জ গুনতে হবে? যা জানা জরুরি
সাবালক যুবক-যুবতীর শরীরী ঘনিষ্ঠতায়, প্রেমে পুলিশ কি কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে?
এই প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রাধামোহন রায় জানান, পার্কে বসে প্রেম করার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। এটা কোনও অপরাধ নয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে অশালীন কিছু ঘটলে, দৃষ্টিকটূ কিছু নজরে এলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪ ধারায় মামলা রুজু করতে পারে। সামাজিক সততনতা বৃদ্ধির স্বার্থে, সামাজিক স্বাস্থ্যরক্ষার্থে অশালীন, দৃষ্টিকটূ বা আপত্তিকর কাজে লিপ্ত কোনও যুগলের বিরুদ্ধে ২৯৪ ধারায় মামলা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে দোষীদের সর্বোচ্চ ৩ মাসের জেল বা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে।
প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ ছাড়াও অশ্লীল গান-ছড়া বা কথা বলার ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য। দেশের সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেকেরই সামাজিক শালীনতা ও নৈতিকতার বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত নদীর পাড়ে-পার্কে বসে থাকা প্রেমিকযুগল দৃষ্টিকটূ, অশালীন বা আপত্তিকর কিছু করছেন, ততক্ষণ পুলিশেরও কিছু বলার বা করার একতিয়ার নেই।
কিন্তু যদি অন্যায় ভাবে বা ভুলবসত কোনও যুগলের বিরুদ্ধে ২৯৪ ধারায় মামলা করা হয়?
এ ক্ষেত্রে রাধামোহনবাবুর পরামর্শ, ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীকে প্রথমে সাধ্যমতো ঠান্ডা মাথায় বোঝানোর চেষ্টা করুন এবং আপনার মতামত জানান। যদি তাতে কাজ না হয়, তাতে যে পুলিশকর্মী আপনাকে হেনস্থা করছেন তাঁর উর্দিতে থাকা নাম ও ক্রমিক নম্বর জেনে নিন। আপনার সঙ্গে অন্যায় হলে আপনিও পাল্টা ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। থানা ওই অভিযোগ নিতে না চাইলে সেটি রেজিস্ট্রি করে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠালেও পুলিশ সেটি নিতে বাধ্য। আর বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া কারও গায়ে হাত তোলার অধিকার পুলিশের নেই। বর্তমানে অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ আইন ও মানবাধিকার মেনে পদক্ষেপ করে। তাই প্রাথমিক আলোচনাতেই প্রায় সব ক্ষেত্রে পুলিশি সহযোগিতা পাওয়া যায়।