scorecardresearch
 

কোভিড বিধি শিকেয়, চৈত্র সেলে বাঙালির 'দিল মাঙ্গে মোর'

হাতিবাগান টু গড়িয়াহাট, নিয়মিত জ্যামপ্যাক্ট ভিড়। সুদে আসলে গতবারের সব আক্ষেপ মিটিয়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর বাঙালি করোনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে শপিংয়ের বিজয় ধ্বজের মতো প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলিয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবখানা এমন, দেখো আমি লড়ছি মাম্মি...

Advertisement
মাস্ক যখন থুতনির শোভা মাস্ক যখন থুতনির শোভা
হাইলাইটস
  • লড় কে লেঙ্গে পাকিস্তান মনোভাব নিয়েই চৈত্র সেলের ময়দানে ঢাল-তরোয়াল ছাড়া নেমে পড়েছে বাঙালি
  • করোনাকে জব্বর ভেংচি কেটে চলছে চৈত্র সেলের উৎসব
  • বাঙালি এখন নয়ের দশকে ফিরে গিয়েছে। পেপসির বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন আউড়ে যাচ্ছে। মনে মনে বলছে, ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর...

গত বছরের আক্ষেপ রয়েই গিয়েছিল। তার সঙ্গে গতবার পুজোর কথাও মনে করে দেখুন একবার। খাঁচার পাখির মতো ছটফট করেছে প্রাণ। তবুও কোনও ক্রমে অনলাইনে মান-সম্মান রক্ষা করা গিয়েছে। কিন্তু আর না। ঢের হয়েছে। লড় কে লেঙ্গে পাকিস্তান মনোভাব নিয়েই চৈত্র সেলের ময়দানে ঢাল-তরোয়াল ছাড়া নেমে পড়েছে বাঙালি। অন্তত শহুরে বাঙালি তো বটেই। হাতিবাগান টু গড়িয়াহাট, নিয়মিত জ্যামপ্যাক্ট ভিড়। সুদে আসলে গতবারের সব আক্ষেপ মিটিয়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর বাঙালি করোনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে শপিংয়ের বিজয় ধ্বজের মতো প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলিয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবখানা এমন, দেখো আমি লড়ছি মাম্মি...

লড়ার কথায় মনে পড়ল, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফের একবার টলে গিয়েছে সব সমীকরণ। যদিও ভোট রাজনীতির কল্যাণে বঙ্গদেশে করোনা ব্রাত্য। কেমন যেন মেদামেরে গিয়েছে। করোনার কথা উচ্চারণ করলেই আশপাশ থেকে আওয়াজ আসে, হ্যাট চুপ কর তো! মানে শব্দটা এখন গালাগালেরও অধম। বেচারা ভাইরাস, হু হু বাওয়া, জানে তো না কাদের পাল্লায় পড়েছে। ইয়ে অ্যায়সা ওয়্যাসা দম নেহি ইয়ে বাঙালিকা দম হ্যায়... তাই করোনাকে জব্বর ভেংচি কেটে চলছে চৈত্র সেলের উৎসব।

গত বছর থেকে বলা হয়েছে এবং এখন সকলের হয়তো মুখস্থও হয়ে গিয়েছে, করোনার দুই ঢাল তলোয়ার হল মাস্ক আর স্যানিটাইজার। নিধিরাম সর্দার বাঙালি জানে না এ কথা। না, ঠিক জানে না বলা ভুল। তবে এখন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছে ওসব। মাস্ক কোথায়? প্রশ্নটা করলেই এখন এক চোখের ভ্রূ নাচিয়ে এমন একখানা শক্তি কাপুর লুক দেন লোকজন যে আপনার বুকে বরফ জমে যাবে! সে সময় ফু দিলেও মুখ থেকে ধোঁয়া বেরতে পারে, যেমন শীতকালে বার হয় ২-৩ দিন। কয়েকজন আবার ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবির অভিনেতাদের মতো হার্মলেস হাসি হেসে সুন্দর করে উত্তর দেন, 'আরে মশাই প্রাণ ভরে একটু নিঃশ্বাস নেব না, এ কী কথা! দেখছেন এমন কুকুর ঠাসা ভিড়, তার উপর আপনি আবার... এক কাপ চা খেয়ে আসুন, প্রাণটা এট্টু ঠান্ডা হবে।'

Advertisement

অনেকে গত বছরের ভাইরাল ভিডিওর মুডে রয়েছেন। স্বামীর হাতে সাতাশ খানা ব্যাগ ঝুলিয়ে নিয়ে সতেরোটা হাতে নিয়ে হিমশিম খেতে খেতে গাড়ি ধরার চেষ্টা করছেন। মুখে যথারীতি মাস্ক নেই। জিজ্ঞাসা করলেই বলছেন, 'শপিং করতে বেরিয়েছিলাম, শপিং করা হয়ে গেছে এ বার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।' স্বামী বেচারা আসামীর মত কাচুমাচু মুখ করে পাশ থেকে বলেন, 'শপিং কি আমরা করব না, করবনা আমরা শপিং?' বউয়ের হালকা কনুইয়ের গুঁতোয় রাস্তা পার করে ওপাড়ে। ট্যাক্সি মিলেছে শেষে।

এক বছরের বিরহে অনেকে আবার নস্ট্যালজিক। ঘুরে ঘুরে ফুট থেকে শপিং মল, সব জায়গায় গিয়ে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে দেখাচ্ছে, অমুক বছর বাঁ হাতের কড়ে আঙুলের ঝুটো মুক্তোর আংটিটা কিনেছিলাম এই কাকুর দোকান থেকে। বা ডান পায়ের তিন নম্বর আঙুলে যে চেরি কালারের নেলপালিশ পরি, সেটা এই দিদির দোকানের থেকে কেনা। মনে করেই একবার চোখ বন্ধ করে সে দিনের সেই সোনা ঝরা স্মৃতিকে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখে নেন। আহা গো! চোখে একটুখানি জল চলে এল। সে যাক, মাস্ক কিন্তু এঁরাও পরেননি। নিদেনপক্ষে কোন দোকান থেকে মাস্কটা কিনেছিল, সেটা দাখোনের নামেই পরা যেত, তবে সে সব এখন অতীত, পাঁচ তলা শরীর পুরোটাই ভয়ডরহীন।

বাঙালি এখন নয়ের দশকে ফিরে গিয়েছে। পেপসির বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন আউড়ে যাচ্ছে। মনে মনে বলছে, ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর...। করোনা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বলে দেখতে পাচ্ছেন না। সে-ও থাবা চেটে বলছে ওই একই সংলাপ, ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর...।

 

Advertisement