scorecardresearch
 

বিরোধী শিবিরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মমতা, ঐক্য় মজবুত করতে পারবেন? 

গোটা দেশের জনমত সমীক্ষা করে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ গোষ্ঠী যে ‘মুড অফ দ্য নেশন সার্ভে’ উপস্থাপনা করে সেটা গোটা দেশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। কেননা, বহু বছর ধরে এই সমীক্ষা হয়ে আসছে। সেই সমীক্ষা বলছে, নরেন্দ্র মোদী তো এখন শাসক দলের প্রধানমন্ত্রী। এখন তাঁর একটা সাংঘাতিক জনপ্রিয় ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের মধ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পরে আছেন কেজরিওয়াল এবং তার অনেক পরে আছেন রাহুল গান্ধী।

Advertisement
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়
হাইলাইটস
  • মমতা বন্দোপাধ্যায় কি বিরোধী সমস্ত দলগুলোর বিরোধী ঐক্যের মূখ্য ছবি হয়ে উঠতে পারবেন? 
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করছেন ১৭ শতাংশ
  • ২০২১ সালে যেটা ছিল ১১ শতাংশ

গোটা দেশের জনমত সমীক্ষা করে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ গোষ্ঠী যে ‘মুড অফ দ্য নেশন সার্ভে’ উপস্থাপনা করে সেটা গোটা দেশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। কেননা, বহু বছর ধরে এই সমীক্ষা হয়ে আসছে। 

সেই সমীক্ষা বলছে, নরেন্দ্র মোদী তো এখন শাসক দলের প্রধানমন্ত্রী। এখন তাঁর একটা সাংঘাতিক জনপ্রিয় ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের মধ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পরে আছেন কেজরিওয়াল এবং তার অনেক পরে আছেন রাহুল গান্ধী। এমনকি, মায়াবতীর সমর্থনেও শতকরা ২ ভাগ জনমত। আমি আপনাদের শতকরা ভাগ গুলো পরে বলছি। 

আসলে বিষয়টা হল, বিরোধী শিবিরে মমতা বন্দোপাধ্যায় যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন, তিনি কি পারবেন এই বিরোধী ঐক্যকে মজবুত করতে? তিনি কি পারবেন বিরোধী ঐক্যের প্রধান মুখ হয়ে উঠতে? এখন এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন আমরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে এবং বিপক্ষে কিছু যুক্তি আছে। আসুন, আমরা এই বিষয়টিকে একটু নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করি। 

মমতা বন্দোপাধ্যায় কি বিরোধী সমস্ত দলগুলোর ‘ফালক্রাম অফ অপজিশন ইউনিট’, অর্থাৎ বিরোধী ঐক্যের মূখ্য ছবি হয়ে উঠতে পারবেন? 

আরও পড়ুন, গোয়ায় TMC অফিসে হামলার অভিযোগ, চিঠি নির্বাচন কমিশনে

দেখুন, ইন্ডিয়া টুডে-র ‘মুড অফ দ্য নেশন সার্ভে’ কিন্তু বলছে মমতা বন্দোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে অন্যান্য সমস্ত বিরোধী দলের নেতা বা নেত্রীর থেকে এগিয়ে আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করছেন ১৭ শতাংশ। ২০২১ সালে যেটা ছিল ১১ শতাংশ। আজ ২০২২ এর জানুয়ারিতে তাঁর পক্ষে সমর্থন এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। তার মানে, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পক্ষে সমর্থন সাংঘাতিক ভাবে বাড়ছে। অপরদিকে কেজরিওয়ালের পক্ষে সমর্থন কমছে। ২০২১-এ কেজরিওয়ালের পক্ষে সমর্থন ছিল ১৮ শতাংশ। আর এখন সেটা হয়ে গেছে ১৬ শতাংশ। তাহলে ২০২১ থেকে এই এক বছরে কেজরিওয়ালের পক্ষে সমর্থন এতোটা কমে গেছে। মায়াবতীর পক্ষে ২ শতাংশ। নবীন পট্টনায়কের পক্ষে ১ শতাংশ। শারদ পাওয়ারে পক্ষে ৫ শতাংশ। জগমোহন রেড্ডির পক্ষে ১ শতাংশ। তাহলে, নরেন্দ্র মোদীর থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও বিরোধী শিবিরের মধ্যে তো মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম। তাহলে, মমতা কি পারবেন? 

Advertisement

এক্ষেত্রে আমি শুধু বলব, সবাই যেটাকে ভাবছে ‘মিথ’ সেই মিথ আর রিয়েলিটির মধ্যে অবস্থান করছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। একটা সময় ছিল, যখন বিজেপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছিলেন, উমা ভারতী আর মমতা বন্দোপাধ্যায় আমাদের কাছে একইরকম। তাঁরা দু’জনেই আবেগ নিয়ে চলেন। আবেগটাই তাঁদের মূলধন। মানছি, মমতা বন্দোপাধ্যায় আবেগ দিয়ে শুরু করেছেন, কিন্তু এখন তো মমতার রিজন, pragmatism আছে। মমতা জানেন, উত্তরপ্রদেশে তাঁর সংগঠন নেই। সেই কারণে, সেখানে তিনি ভোটে লড়বেন না। 

আচ্ছা, মমতা যে বলছেন, তিনি অখিলেশ কে সমর্থন করবেন? তিনি কি প্রার্থী দিচ্ছেন? দিচ্ছেন না তো? অখিলেশও চাইছেন না, আর উনিও বলছেন না। তাহলে তিনি কী করবেন? মোদীর বিরুদ্ধে মমতা একটা সাংবাদিক বৈঠক কেন করছেন? এটাই হল টোকেনিজম। আসলে ২০২৪ এ মোদীর বিরুদ্ধে বিকল্প যদি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে হতে হয় তাহলে তাঁর অখিলেশেরও সমর্থন দরকার। তিনি স্ট্যালিনের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো রাখছেন। শরদ পাওয়ার হলেন ‘ওল্ড পেট্রিয়ট’। তিনি সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন।  যদিও এই মুহূর্তে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেজরিওয়ালের একটু খিটমিট হচ্ছে, তবে বিরোধী সমস্ত নেতা, আঞ্চলিক নেতা –সবার সঙ্গেই মমতা ভালো সম্পর্ক রাখছেন। 

কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক নিয়ে আমরা ভাবছি, তাদের সম্পর্কটা একদম খারাপ হয়ে গেছে। সেটা কিন্তু একদম নয়। মমতা আসলে নিজের মতো করে বাড়তে চাইছেন। তার মানে, তিনি কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ঝগড়া করতে চাইছেন না। তিনি চাইছেন তাঁর নিজের দলটাকে আরও শক্তিশালী করতে। 

এই বিষয়ে প্রণব বাবু আমাকে খুব ভালো একটা কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মহাজনের কাছে ধার চাইতে যাওয়ার সময় হাতে হিরের আঙটি পরে যেতে হয়। মমতা এখন নিজের পজিশনটাকে রেখে বার্গেন করতে চাইছেন। সেই বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে তিনি একটা কনসলিডেশন করতে চাইছেন অপজিশন পলিটিক্সে। 

ভুলে যাবেন না, মমতার লক্ষ্য হল ২০২৪। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতলো কি হারলো, তাতে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কিছু যায় আসে না। সুতরাং, এই পলিটিক্সটা মমতা করছেন এবং সেই রোড ম্যাপ নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। কীভাবে মমতা বন্দোপাধ্যায় এগোবেন, আপনারা সেটাও দেখুন। ত্রিপুরা একটা মস্ত বড় ফ্যাক্টর। ২০২৩-এ গোয়াও হল টোকেনিজম। তবে মমতার লক্ষ্য হল ২০২৪।

Advertisement