কলা (Banana) নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে যে এর ভিতরে এমন তিনটি জেনেটিক মার্কার রয়েছে, যা তিনটি ভিন্ন বন্য কলার (Wild Banana)। কিন্তু এমন কলা সারা বিশ্বে আবিষ্কৃত হয়নি। কলা পাকলে হলুদ রঙের হয়। মিষ্টি, নরম এবং মসৃণ হয়। কিন্তু আসলে একটি কলা আপনি যা ভাবেন তা নয়। এগুলি হলুদ, সবুজ, নীল, বাল্বের মতো, বীজযুক্ত বা বীজহীন হতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম কলা।
পৃথিবীতে অনেক ধরনের, অনেক আকারের ও রঙের কলা পাওয়া যায়। উদ্ভিদবিদ জুলি সার্ডোস (Julie Sardos) বলেন, 'কলার বৈচিত্র্য সমগ্র বিশ্বে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। আমরা আমাদের অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি যে বর্তমানে সারা বিশ্বে যে সাধারণ কলা খাওয়া হচ্ছে তা তিনটি বন্য কলা থেকে এসেছে। কিন্তু তিনটি বুনো কলা সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। এমনকি খুঁজেও পাওয়া যায়নি। কলার এই তিন বন্য পূর্বপুরুষ মিলিত হলে মনে হয় কলা নিয়ে আমাদের চিন্তাধারা বদলে যাবে।'
বন্য কলা (Wild Bananas), যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে Musa Acuminata বলা হয়। এর মধ্যে অনেক বীজ আছে। এটা খাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কলার ইতিহাস ৭ হাজার বছরের পুরনো। আমরা এখন যে কলা খাচ্ছি, তার জন্ম ৭ হাজার বছর আগে পাপুয়া নিউ গিনিতে (Papua New Guinea)। তখনকার মানুষ কলার উৎপাদন করত, তাও কোনও সার ছাড়াই। তারপর প্রথমবার বীজ ছাড়াই কলা বের হলো। এটা খাওয়ার মতো ছিল। কিন্তু কীভাবে উৎপাদন করা হয়েছিল, তা আমরা জানি না।
আরও পড়ুন:TET Agitation: 'সবার গ্রহণযোগ্যতা সমান', টেট ইস্যুতে অনড় পর্ষদ সভাপতি
কীভাবে সারা বিশ্বে কলা ছড়িয়ে পড়ল?
পাপুয়া নিউগিনি থেকে বাণিজ্যপথে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতে কলা পৌঁছেছিল। এখানে আসার পর ক্রসব্রিড হয়েছে। আরও অনেক জাতের কলা তৈরি হতে থাকে। ছোট কলা, মোটা কলা, হাই পাল্প কলা, পাতলা কলা, হাই পাল্প কলা ইত্যাদি। বিভিন্ন রঙের কলা। মিষ্টি কম আর মিষ্টি বেশি। আপনি শুধু ভারতেই দেখুন, কয়েক ডজন ধরনের কলা পাবেন। কেরলের লাল রঙের কলা এবং ভুসাওয়ালের হলুদ কলা।
এভাবেই তিন বন্য কলার কথা জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা
জুলি সার্ডোস বলেন, 'আমরা কম্পিউটারে তিনটি কলার জেনেটিক মার্কার দেখেছি। কোন রুট থেকে তারা মিলিত হয়েছে, তা খুঁজে বের করেছি। তদন্ত এখনও চলছে। এই কলা কোথা থেকে শুরু হয়েছে তা এই তদন্তে জানা যাবে। তাদের ক্রসব্রিডিং কোথায় করা হয়েছিল? কলার আগে বড় বীজ ছিল, কীভাবে বীজহীন ফল হয়ে উঠল, তাও জানা যাবে।'
বি়জ্ঞানীরা কী পেয়েছেন?
তিনটি বন্য কলার জেনেটিক মার্কারগুলির মধ্যে একটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। দ্বিতীয়টি স্থানীয়ভাবে বোর্নিও দ্বীপে প্রজনন করা হয়েছিল। তৃতীয়টি এসেছে পাপুয়া নিউ গিনির কলা থেকে। এসব জায়গা থেকে জেনেটিক চরিত্র অবশ্যই পাওয়া যায়, কিন্তু তার পরেও কলা সবচেয়ে রহস্যময় ফল। তাদের গোপন কথা প্রকাশ করা হচ্ছে না। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জেমস লাইবেনস ম্যাক বলেন, সার্ডোসের তথ্য থেকে জানা যায় যে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কোথাও কলা জন্মেছিল।
আগে কলা নরম ফল ছিল না:
কলা ছিল বীজসহ প্রথম শক্ত ফল, যা খাওয়া যেত না। তাহলে হঠাৎ করে মিষ্টি মণ্ডসহ বীজহীন ফল হল কী করে? এই প্রশ্নের উত্তরে জুলি বলেছেন, 'কলার প্রজনন এত সহজ নয়। একটি ভোজ্য কলা তৈরি করা সহজ নয়। আপনাকে এক জাতের কলা অন্য জাতের সঙ্গে ক্রসব্রিড করতে হবে। এটা যে সফল হবেই তা নয়। তারপর কলা এমন হতে হবে, যেন খেতে হয়। অন্যথায় প্রজনন নষ্ট হয়ে যাবে। এই গবেষণাটি সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন প্ল্যান্ট সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।'