scorecardresearch
 

Rabindranath and Bangladesh:পূর্ববঙ্গের সঙ্গে রবি-যোগ? জমিদারির বেশির ভাগ তো ছিল সেখানেই

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। পিছিয়ে নেই প্রতিবেশী বাংলাদেশও। করোনা মহামারির জন্য দুই বছর নীরবে উদযাপনের পর বাংলাদেশে এবার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নোবেলজয়ী কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বকবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

Advertisement
হাইলাইটস
  • পূর্বপুরুষের আবাস থেকে শ্বশুরবাড়ি
  • পূর্ববঙ্গের সঙ্গে ছিল রবি কবির নাড়ির যোগ
  • টানা ১০ বছর কাটিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গে

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। পিছিয়ে নেই প্রতিবেশী বাংলাদেশও। করোনা মহামারির জন্য দুই বছর নীরবে উদযাপনের পর বাংলাদেশে এবার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নোবেলজয়ী কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে।  বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বকবির স্মৃতির প্রতি  গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। 

আসলে ঠিক এপার বাংলার মতোই বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারতের মতোই বাংলাদেশের  জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশের অনেক জায়গার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে কবির স্মৃতিচিহ্ন। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কুঠিবাড়ি, শাহজাদপুর কাচারিবাড়ি, সিরাজগঞ্জের পতিসর, নওগার কুঠিবাড়ি ও খুলনার কুঠিবাড়ি ও কবির শ্বশুরবাড়ি তারমধ্যে অন্যতম।

 

 

বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা থানার পিঠাভোগেই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষের বসবাস। কবির পূর্বপুরুষের উপাধি ছিল কুশারী, যারা ছিলেন নিচু বংশীয় ব্রাহ্মণ। পরবর্তীকালে তাদের পরিবারের অধিকাংশ কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। কলকাতার জোড়াসাঁকোয় ১৮৬১ সালের ৭ মে কবি জন্মগ্রহণ করেন। কবির পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেছিলেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামের সারদা দেবীকে। ১৮৮৩ সালে কবির মামাবাড়ির দিঘির অপর পাড়ের বেণীমাধব রায় চৌধুরীর কন্যা মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এভাবে আত্মীয়তার নিগূঢ় বন্ধনে কবি আবদ্ধ ছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে।

 ১৮৯৮ সাল থেকে স্ত্রীপুত্রকন্যা নিয়ে শিলাইদহে বাস করতে থাকেন রবি কবি। ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে শিক্ষার নতুন দর্শনের সূচনা করেন। তিরিশ বছর বয়সে জমিদারি দেখতে এসে দশটি বছর পূর্ববঙ্গে কাটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তীতে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর ইচ্ছায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ফিরলেও পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়নি কখনও।  ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯১৫ এই সময়ে বহুবার পূর্ববঙ্গে আসেন রবীন্দ্রনাথ। থেকেছেন অগণিত দিন। নিজের জমিদারি অঞ্চল পাবনার (বর্তমানের সিরাজগঞ্জ জেলা) শাহজাদপুর, নওগাঁর  পতিসর, কুষ্টিয়ার  শিলাইদহ ছিল তাদের জমিদারির অঞ্চল। এই তিন কাছারিতে রবীন্দ্রনাথ এসেছেন অনেক বার। রবীন্দ্রনাথ শেষ আসেন ১৯৩৭ সালে পুণ্যাহ উৎসব উপলক্ষে। তখন তিনি জমিদার নন, বরং অতিথি হিসেবে আসেন। এই তিন জায়গাই নয়, রবীন্দ্রনাথ ঘুরেছেন পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী। চাঁদপুর দিয়ে কুমিল্লা হয়ে গিয়েছিলেন ত্রিপুরার আগরতলায়ও।

Advertisement

 

 

 রবীন্দ্রনাথ তার জীবনে ঢাকায় এসেছেন দুবার। একবার ১৮৯৮ সালে, অন্যবার ১৯২৬ সালে। প্রথমবার ১৮৯৮ সালে (১৩০৫ বঙ্গাব্দ) তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের ১০ম অধিবেশনে যোগ দিতে। প্রথমবার তথা ১৮৯৮ সালে রবীন্দ্রনাথের ঢাকা আসা নিয়ে তেমন শোরগোল হয়নি। সেবার তিনি ঢাকায়  ছিলেন তিন দিন।  দ্বিতীয়বার রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন ১৯২৬ সালে ৯ দিনের সফরে। দ্বিতীয়বার রবীন্দ্রনাথের ঢাকা সফর নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় গোটা শহরে। রবীন্দ্রনাথ কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন গোয়ালন্দ, নারায়ণগঞ্জ হয়ে। ১৯৩৭-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট্, উপাধি দেয়, তিনি অবশ্য নিজে এসে তা গ্রহণ করতে পারেননি।

রবীন্দ্রনাথ বিয়েও করেছিলেন যশোহর থেকে, যদিও তাঁর শ্বশুরের বাস ছিল খুলনায়, দক্ষিণ ডিহিতে। পূর্বপুরুষের বা আত্মীয়তার যোগ কখনো গভীরভাবে তাঁকে বাঁধতে পারেনি। বরং জমিদারি-সূত্রে বারবার যাতায়াতের ফলে পূর্ববঙ্গের পল্লিপ্রকৃতি ও পল্লিজীবনের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ তৈরি হয়। রবিঠাকুরের ৮টি মিউজিয়াম রয়েছে। যার মধ্যে ৩টি ভারতে হলেও বাকি ৫টি কিন্তু বাংলাদেশে। 

 

 

তবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাংলাদেশে যে বিতর্ক হয়নি, এমনটাও বলা যায় না। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বড়রকম বিতর্ক দেখা দিয়েছিল ১৯৬১ সালে। সারা বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষের আয়োজন হচ্ছে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা স্বদেশে তা করতে দিতে চান না। পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক মাত্রা তাঁর সাহিত্যিক বা সাংস্কৃতিক মাত্রা থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, তখন বহু জায়গায় তা অশুদ্ধ উচ্চারণে ও ভুল সুরেও  সত্যিকার আবেগ দিয়ে গাইতে শোনা যেত। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম দশ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতরূপে গৃহীত হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীতের জনপ্রিয়তার কারণে তা শিক্ষাদানের লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনে শিক্ষালাভ করতে এসেছিলেন – তাদের কেউ কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম।  
 

Advertisement