West Bengal College Dropout: ঢিমেতালে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কলেজ ড্রপআউট বাড়ছে বাংলায়? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in

সাইকেল মিলল, মোবাইল মিলল, ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ভর্তির আগ্রহ বাড়ল কি? রাজ্যের কলেজগুলিতে চলছে স্নাতক স্তরে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। গত ১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ তারিখ। তা বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, একেতেই বেশ খানিকটা বিলম্বের পর শুরু হয়েছে আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদনেই মাসখানেক সময় লাগলে, ভর্তি হয়ে পঠনপাঠন শুরুতে দেরি হয়ে যাবে না তো? 

Advertisement
ঢিমেতালে ভর্তি প্রক্রিয়ায় কলেজ ড্রপআউট বাড়ছে বাংলায়? খোঁজ নিল bangla.aajtak.inকলেজে ভর্তির অপেক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা (গ্রাফিক্স: শুভঙ্কর মিত্র)

সাইকেল মিলল, মোবাইল মিলল, ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ভর্তির আগ্রহ বাড়ল কি? রাজ্যের কলেজগুলিতে চলছে স্নাতক স্তরে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। গত ১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ তারিখ। তা বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। প্রশ্ন উঠছে, একেতেই বেশ খানিকটা বিলম্বের পর শুরু হয়েছে আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদনেই মাসখানেক সময় লাগলে, ভর্তি হয়ে পঠনপাঠন শুরুতে দেরি হয়ে যাবে না তো? 

রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলপ্রকাশে দেরি
এখনও পর্যন্ত রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রাসের ফলপ্রকাশ হয়নি। জুন পেরিয়ে জুলাই... রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফলের দেখা নেই। তারওপর রাজ্যের কলেজগুলিতে ভর্তি প্রক্রিয়া যে হারে ঢিমে তালে চলছে তাতে বিলক্ষণ পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তির পরিসংখ্যান নিয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালের পর থেকে স্কুলের পর কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কমেছে।

বাড়ছে কলেজ ড্রপআউট?
উত্তরবঙ্গ সংবাদের তথ্য অনুযায়ী, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ কলেজে ১,৬০০টি আসন থাকলেও গত ১ জুলাই বিকেল পর্যন্ত সেখানে ১,৬৫০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ২৯৮ জনের প্রথম পছন্দ ওই কলেজ। গত ১৮ জুন থেকে কলেজগুলিতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় আবেদন কম জমা পড়ায় হতাশ হন কলেজের অধ্যক্ষ মিঠু দেব। উত্তরবঙ্গ সংবাদকে তিনি প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানান, গ্রামীণ এবং প্রান্তিক কলেজগুলিতে পড়ুয়াদের সংখ্যা এবার গতবারের তুলনায় কমেছে। 

কোচবিহারের আরও এক কলেজ বক্সিরহাট মহাবিদ্যালয়ে গত বছরের তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে বলে জানান কলেজের টিআইসি কার্তিক সাহা। উত্তরবঙ্গ সংবাদকে তিনি বলেন, ‘এবার উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণের সংখ্যা কম থাকায় আবেদনকারীর সংখ্যাও কম। তাছাড়া সাধারণ ডিগ্রি কোর্সের প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহও কিছুটা কমেছে।’

দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা ও জেলার কলেজগুলির কী পরিস্থিতি?
এ তো গেল উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গের কলকাতা ও জেলার কলেজ গুলির কী পরিস্থিতি? খোঁজ নিল bangla.aajtak.in। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মফঃস্বলের মহেশতলা কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর রুম্পা দাস বলছেন, "এই অঞ্চলের কৃতী ছাত্রছাত্রীরা কলকাতার নামী কলেজের দিকে বেশি ঝোঁকে। মধ্য মেধা ও পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই এই কলেজ ও আশেপাশের কলেজে ভর্তির আবেদন করে। সরকারি প্রকল্পগুলির সাহায্যে  তারা পড়াশোনা চালায়। করোনার পর পড়ুয়া ভর্তি কমলেও গতবারের থেকে এবছর ভর্তির আবেদনে খুব বেশি ফারাক পড়েনি। ১৫ জুলাইয়ের পর পুরো চিত্রটা পরিষ্কার হবে।"

Advertisement

অন্যদিকে, সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর ইন্দ্রনীল কর জানান, "এবছর ৩০ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। তবে গতবছরের তুলনায় সংখ্যাটা সামান্য কম। ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ায় আরও ৪-৫ হাজার আবেদন পড়েছে।"

হাওড়া উলুবেড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর দেবাশিস পাল আবার জানান, এ বছর আবেদনের প্রক্রিয়া গতবছরের মতোই রয়েছে। তবে কিছু সাবজেক্টে পরিসংখ্যান ওপর-নীচে হয়েছে। সংস্কৃত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পিওর সায়েন্স জেনারেলের মতো বিষয়গুলিতে আবেদন খানিকটা কমেছে।

নিউ আলিপুর কলেজের চিত্রটা আবার ভিন্ন। অধ্যক্ষ ডক্টর জয়দীপ ষড়ঙ্গী জানাচ্ছেন, 'তাঁদের কলেজে আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। কিছু বিষয়ে গতবারের তুলনায় ২০ গুণ আবেদন সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি, জার্নালিজম, জুওলজির মতো বিষয়।'

১২ জুন থেকে শুরু হয়েছে কলেজে ভর্তির আবেদন
গত ১২ জুন রাজ্য সরকার স্নাতক কোর্সের জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১ জুলাই নির্ধারণ করেছিল। এরপর তা ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদ বাড়ানোর কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু একটি পোস্টে জানিয়েছিলেন, "উচ্চশিক্ষা দফতরের সেন্ট্রাল অনলাইন পোর্টাল চালুর দু’সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই লক্ষাধিক আবেদন জমা পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের আরও সুযোগ দিতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী ভর্তির সময়সীমা ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।"

পাশাপাশি তাঁর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নাম নথিভুক্ত করেন ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৪২ জন পড়ুয়া। নাম নথিভুক্তদের মধ্যে ২ হাজার ৯০১ জন ভিনরাজ্যের বাসিন্দা। যদিও রাজ্যে কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সংখ্যাটা খুব কম নয়, তবে খুব একটা আশাজনকও নয়। তবে কি রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে পড়ুয়ারা?

অন্তরায় ওবিসি সংরক্ষণ বিল?
ওবিসি সংরক্ষণ বিলটি আইনি জটিলতায় আটকে থাকার কারণে সেন্ট্রাল পোর্টালের মাধ্যমে কলেজগুলিতে আবেদন প্রক্রিয়া চালু হতে খানিকটা দেরি হয়েছে।

গত কয়েক বছরে যা প্রবণতা দেখা গেছে, তাতে আর্থিকভাবে সামর্থ্য পরিবারগুলি নিজের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য রাজ্যের বাইরের কলেজগুলিতে পাঠিয়ে দিতে দেখা গেছে। মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে চিত্রটা এক। 

শিক্ষাক্ষেত্রে যে হারে দুর্নীতির খবর উঠে আসছে তাতে ভরসা হারাচ্ছেন রাজ্যের একাংশ অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীরা। পড়াশোনা শেষে কাজের জন্য বাক্স-প্যাঁটরা ঘুছিয়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে ভিন রাজ্যে। তারওপর এভাবে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা হেলেদুলে চলতে থাকলে ছাত্রছাত্রীদেরই বা কতদিন রাজ্যে আটকে রাখা যাবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

POST A COMMENT
Advertisement