হিমালয়া (Himalaya Drug Company) আজকের আয়ুর্বেদ উৎপাদক পণ্য এবং ওষুধের একটা পরিচিত নাম। গোটা দেশেই কিছুদিন থেকে টুইটারে এর একটি হালাল পলিসি ফটো ভাইরাল হয়েছে এবং বয়কট হিমালিয়া ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল। কিন্তু আপনি কী জানেন যে এই কোম্পানি যখন শুরু হয়, তখন কত সমস্যা এবং প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাকে উঠে আসতে হয়েছিল এবং আজকের পৃথিবীতে আয়ুর্বেদের পর্যায়ে কিভাবে তৈরি হয়েছে?
মায়ানমারের জঙ্গল থেকে পাওয়া জড়িবুটি থেকে তৈরি হয় কোম্পানি
Himalaya-র কো-ফাউন্ডার মহম্মদ মানাল এটি শুরু করার যে গল্প জানিয়েছিলেন, তাও অত্যন্ত চমকপ্রদ। হাজার ১৯৩০ সালে তিনি বার্মার জঙ্গলে কোনও কাজে গিয়েছিলেন। তখন স্থানীয় লোকেরা পাগল হাতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি জরিবুটি ব্যবহার করছিলেন। তিনি সেটা দেখেন। আয়ুর্বেদের এই শক্তি তাঁকে অত্যন্ত প্রভাবিত করে ফেলে এবং আয়ুর্বেদের দুনিয়াতে নিজের কোম্পানি খুলতে পরবর্তীতে তাঁকে প্ররোচিত করে।
স্বদেশি ভাবধারায় শুরুর পথে হিমালয়া
সেই সময় দেশে স্বদেশি আন্দোলন জোরতোড়ে চলছে এবং মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে শামিল গোটা দেশ। সেই সঙ্গে বিদেশি পণ্য বয়কট করার ট্রেন্ড চলছিল। সেই সময় স্বদেশি উপায়ে কিছু করার ভাবনা সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের ভেষজকে পণ্যে পরিণত করতে ভাবনা শুরু করেন।
দেরাদুন থেকে শুরু হয় নতুন যাত্রা
নিজের স্বপ্নপূরণ করতে মহম্মদ মানাল এরপর দেরাদুন চলে যান এবং সেখানে গিয়ে তিনি Rabophilia seperantina নামে একটি জরিবুটি ওপর নিজের গবেষণা শুরু করেন। এটি সেই জরিবুটি ছিল যেটা তিনি বার্মায় হাতিদের উপর ব্যবহার করতে দেখেছিলেন। চার বছর ধরে চলে গবেষণা। জরিবুটিকে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধে পরিণত করতে শুরু হয়।
বন্ধক রাখতে হয়েছিল মায়ের হাতের কঙ্কণ
নিজের গবেষণা শুরু করতে গিয়ে তাঁকে নিজের মায়ের হাতের বালা বন্ধক রাখতে হয়েছিল। দেরাদুনে তিনি দুই টাকা প্রতি মাসে হিসেবে ভাড়ায় বিনামূল্যে বিল্ডিংয়ে এই গবেষণা শুরু করেন। এবং ১৯৩৪ সালের লঞ্চ হয় সেউ ওষুধ, যার নাম Serpina. এটি গোটা দুনিয়ার প্রথম আয়ুবের্দিক অর্থাৎ প্রাকৃতিক হাইপারটেনশনের ওষুধ। পাগলা হাতিকে বশ করার জরিবুটি থেকে তৈরি হল হাইপারটেনশনের ওষুধ।
LIV.52 দিয়েছে পরিচিতি
১৯৩৪ সালে স্বাধীনতার পর মহাম্মদ মানাল আয়ুর্বেদে নিজের রিসার্চ আরও বাড়িয়ে দেন। এরপর তাঁর কোম্পানি ১৯৫৫ সালে বানায় লিভ ৫২ নামে একটি টনিক। যা মানুষের লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এরপর ধীরে ধীরে হিমালায়া নিজের বিস্তার হারবাল ওষুধের ওপর ছাড়াও পার্সোনাল কেয়ার, বেবি কেয়ার, কসমেটিক প্রোডাক্টে করতে শুরু করে। কোম্পানি ২০০১ সালে নিজের হিমালয়া নিম ফেসওয়াশ পেশ করে। যা এই মুহূর্তে হিমালয়ার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া প্রোডাক্ট।
হিমালয়া এখন আন্তর্জাতিক, বিশ্বে বিচরণ সর্বত্র
ভারতে শুরু করা হিমালয় আজ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। কোম্পানি একশ-র বেশি শাখা দেশে-বিদেশে নিজের উৎপাদন করার প্রোডাক্ট বিক্রি করছে। ৯২ বছর এই কোম্পানির ব্যবসা এশিয়া থেকে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশগুলিতে ছড়িয়ে রয়েছে।
কিন্তু কেন ট্রেন্ড হচ্ছে বয়কট হিমালয়া?
গত কিছুদিন ধরে টুইটারে বয়কট হিমালয়া ট্রেন্ডিং এ রয়েছে। এটি শুরু হয় যখন হিন্দু জাগৃতি সমিতি রামসেনা এবং বজরং দল কর্নাটকে হালাল মিট বয়কট দাবি করে। এর পরে টুইটারে ভাইরাল হওয়া শুরু হয় যেখানে কোম্পানি হালাল পলিসি কথা উল্লেখ করা হয়। এর সঙ্গে বয়কট হিমালয় ট্রেন্ডিং শুরু হয়ে যায়। কিন্তু হিমালয়া ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী কোম্পানি এনিমেল ক্রুয়েলটির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ এবং নীতি নিয়ে চলছে। এমনকী তারা নিজেদের প্রোডাক্ট এবং ওষুধের অ্যানিমেল টেস্টিং এর বিরোধিতা করেন।