তখন মাত্র ১ রান বাকি নীতিশ রেড্ডির সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে। সেই সময়ই আউট হলেন জসপ্রীত বুমরা। ৯ উইকেট হারাতে হল ভারতকে। মহম্মদ সিরাজ ক্রিজে আসার আগেই টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠল নীতিশের বাবার মুখ। উত্তেজনায় প্রার্থনা করছেন মুত্যালা রেড্ডি। পারথের পর অ্যাডিলেডেও তাঁর ব্যাট গর্জে উঠেছে। তবে সেঞ্চুরি আসেনি। এবারেও কী স্বপ্নভঙ্গ? সেই সময়ই সেঞ্চুরি করে ফেললেন রেড্ডি।
তাঁর ভারতীয় দলে ঢোকা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তবে গৌতম গম্ভীরের চোখ যে সোনা চিনেছে তা বোঝা গেল মেলবোর্ন টেস্টে। প্রথম ইনিংসেই বিপদে পড়েছে ভারতীয় দল। সেখান থেকে যতটা সম্ভব মেরামতির চেষ্টা চালিয়েছেন নীতিশ। তিনি যখন ক্রিজে আসেন, ভারতের স্কোর ছিল ছয় উইকেটে ১৯১ রান। ফলে ফলোঅনের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু নীতিশের সাহসী ইনিংস ভারতকে সঙ্কটের থেকে উদ্ধার করে। ডানহাতি ব্যাটার নীতীশ ও ওয়াশিংটন সুন্দর অষ্টম উইকেটে ১২৭ রানের জুটি গড়েন। এই জুটির কারণে ফলোঅন বাঁচাতে সফল হয় রোহিত ব্রিগেড।
একেবারে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একটা ছেলে নীতিশ। নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন, 'আমার এই ক্রিকেটের জন্য বাবা একটা সময় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। একদিন তো সংসারে টাকা-পয়সার এতটাই টানাটানি ছিল যে আমি বাবাকে কাঁদতেও দেখেছিলাম। এই দৃশ্যটাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মনস্থির করে ফেলি, যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন, ক্রিকেটার আমি হবই। অবশেষে কঠোর পরিশ্রমের ফল আমি পাচ্ছি।'
এদিন ছেলের সেঞ্চুরির পর তাঁর বাবা বলেন, 'এই দিনটা আমাদের সারা জীবন মনে থেকে যাবে।' ৯৯ রানে ব্যাট করা ছেলের জন্য উদ্বেগে ছিলেন স্বীকার করে মুত্যালা বলেন, 'খুব টেনশন হচ্ছিল। দারুণ অনুভুতি হচ্ছে। প্রথম সেঞ্চুরি।'
রেডিড শুরু থেকেই ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলির বড় ভক্ত ছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে টপ অর্ডারে দারুণ খেলা ভারতীয় দলের রাস্তা খুলে দেয়। ২০১৭-১৮ মরসুমে নীতিশ বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে রেকর্ড গড়েন। নীতিশ ১,২৩৭ রান করেন। গড় ছিল ১৭৬.৪১। যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান।
নাগাল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৬৬ বলে একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন। ২০১৮ সালে বার্ষিক পুরষ্কার অনুষ্ঠানে BCCI 'অনূর্ধ্ব-16 বিভাগে সেরা ক্রিকেটার' নির্বাচিত করে নীতিশকে। সেই অনুষ্ঠানে আইডল বিরাটের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল।