ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৯৩ রান। অথচ লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে তারা হেরে বসল ২২ রানে। ম্যাচটা যখন মনে হচ্ছিল হাতের বাইরে, তখন রবীন্দ্র জাডেজা, জশপ্রীত বুমরাহ এবং মহম্মদ সিরাজ মিলে লড়াইটা করে তুললেন স্মরণীয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, এই লড়াই কি জিতেও যেতে পারত?
চতুর্থ দিনের সন্ধেয় ৫৮ রানে ৪ উইকেট, পঞ্চম দিনে সকালে ১১২ রানে ৮। একদিকে জোফ্রা আর্চার, বেন স্টোকস, আর ব্রাইডন কার্সের পেস আক্রমণ, অন্যদিকে ভারতের শীর্ষ ও মধ্যক্রমের আত্মসমর্পণ। এমন সময় জাডেজা যখন নামলেন, তখন ভারতের হারের কাউন্টডাউন যেন শুরুই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখানেই বদলে গেল চিত্র। জাডেজা ১৮১ বল খেলে অপরাজিত ৬১ রান করলেন। শেষ দুই উইকেটে বুমরাহ ও সিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ২১২ বলের পার্টনারশিপ, শুধু সময় নয়, এই লড়াই ইংল্যান্ডকে মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেয়। মাঠে তখন ‘লর্ডস লাঞ্চ’ নয়, বরং জাডেজার ধৈর্য আর ইনটেনসিটির পরীক্ষা চলছিল।
‘আরও ঝুঁকি নেওয়া যেত’, মত কুম্বলের
ম্যাচের পরেই বিশ্লেষণ শুরু। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক অনিল কুম্বলের মতে, জাডেজা আরও কয়েকটা ‘ক্যালকুলেটেড রিস্ক’ নিতে পারতেন। বিশেষ করে ক্রিস ওক্স, বশির কিংবা জো রুটের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে। কুম্বলের বক্তব্য, 'জাডেজা তো এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে খেলেছেন। এই পিচে স্পিনের খুব একটা ভয় ছিল না। ও হয়তো একটু ঝুঁকি নিয়ে ওদের ওপর চাপ বাড়াতে পারত।'
গাভাস্কার-গিল বলছেন, ‘যতটা সম্ভব করেছে’
তবে এর জবাবও এল। সুনীল গাভাস্কারের মতে, 'জাডেজা নিচের দিকের ব্যাটারদের সঙ্গে খেলছিল, ওর কাজ ছিল স্ট্রাইক ফার্মিং করা। ওই পিচে তখন রিস্ক নেওয়া মানেই উইকেট বিলিয়ে দেওয়া। ভারতের তো একটাই রাস্তা ছিল—খেলা যতটা সম্ভব গভীরে নিয়ে যাওয়া।' এদিকে অধিনায়ক শুভমান গিলও জানালেন, পরিকল্পনা ছিল দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগ পর্যন্ত সময় কাটিয়ে দেওয়ার। তখন স্রেফ ৫ ওভার বাকি। গিল বলেন, 'যতবার আমরা ৫-৬ রান করছিলাম, ইংল্যান্ড চাপে পড়ছিল। একটা ছোট পার্টনারশিপ খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে পারত।'
শেষরক্ষা না হলেও লড়াইটা ছিল মর্যাদার
শেষ পর্যন্ত বুমরাহ আউট হলেন স্টোকসের একটি শর্ট বলে। সিরাজ বশিরকে সামলাতে সামলাতে একটি বল ব্যাটে লাগিয়ে ফের স্টাম্পে! ব্যাটার ছিলেন জাডেজা, কিন্তু হেরে গেল পুরো দল। ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেলেও, শেষবেলায় ভারতীয় টেল এন্ডারদের এই লড়াই ভোলার নয়। জাডেজা ও সিরাজের চোখের জল শুধু পরাজয়ের নয়, এক অপ্রাপ্তির। যেটা হয়তো আরও একটু সাহস, আরও একটু আগ্রাসন দিলে জয়েও বদলে যেতে পারত।