মাঝে আর দুই দিন। তার পরেই কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারি উপছে পড়বে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ২০২৪-২৫-এর ফাইনালে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও বেঙ্গালুরু এফসি-র মধ্যে জমজমাট ফাইনালের টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে দ্রুত। টানা তিনবার ফাইনালে ওঠা মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ঘরের মাঠে বরাবরই ফেভারিট। এ মরশুমে একটিও হোম ম্যাচে হারেনি কলকাতার দল। মরসুমের প্রথম ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে ড্র করার পরে যুবভারতীতে টানা ১২টি ম্যাচে জিতেছে তারা।
শনিবারের ফাইনালে কেন ফেভারিট মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তার অনেক কারণ দেখাতে পারেন। তবে তাদের যে দুর্বলতাগুলি এখনও রয়ে গিয়েছে, সেগুলির জন্য ফাইনালে তাদের সমস্যায় পড়তেও হতে পারে। সবুজ-মেরুন বাহিনীর কোথায় শক্তি আর দুর্বল জায়গাগুলিই বা কী, এই প্রতিবদনে সেগুলিই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
দুর্বলতা
গোলের সুযোগ নষ্ট
প্রচুর গোল যেমন করেছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, তেমনই গোলের সুযোগ তৈরি করেও তা হাতছাড়া করেছে প্রচুর। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২৬টি ম্যাচে ৫০টি গোল করেছে তারা। কিন্তু সুযোগ তৈরি করেছে ২৮৮টি। অর্থাৎ, মাত্র ১৭.৩৬ শতাংশ সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে তারা। এ পর্যন্ত ১৫১টি শট তারা লক্ষ্যে রেখেছে এবং তার প্রায় ৩৩ শতাংশ থেকে গোল পেয়েছে। আর লক্ষ্যভ্রষ্ট শটের সংখ্যা ২৬৫। এতগুলি গোলের সুযোগ, শটের সংখ্যার পরও গোলের সংখ্যা ৫০, ভাবলে অবাকই লাগে।
রক্ষণে ধারাবাহিকতার অভাব
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখার নজির অবশ্যই মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের। ১৬টি ম্যাচে ক্লিন শিট রেখেছে তারা। সবচেয়ে কম গোল খেয়েছেও, ১৮টি। কিন্তু কবে যে তাদের রক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়বে, তার কোনও ঠিক নেই। যেমন সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে শুরুতেই গোল খেয়ে যায় তারা। ম্যাচ যখন প্রায় ১-১ ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই শেষ মুহূর্তের গোলে ১-২-এ হেরে যায় তারা। শুরুর দিকে টানা তিনটি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখে তারা। তার পরে ওডিশার বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে। ফের তিনটি ম্যাচে কোনও গোল খায়নি তারা। চলতি বছরের শুরুতে টানা ছ’টি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখে তারা। কিন্তু গত চারটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে কোনও গোল খায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু বাকি দু’টি ম্যাচে দু’টি করে গোল খায়।
বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ নয়
এই লিগে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের কোনওটিতেই খুব একটা স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারেনি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সারা লিগে যে দু’টি ম্যাচে তারা খেলে, তার মধ্যে একটি ছিল বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে। সেই ম্যাচে তিন গোলে হারে তারা। রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে সে দিন সবুজ-মেরুন বাহিনীকে হারিয়েছিল ছেত্রী-বাহিনী। সেই ম্যাচে হেরে ছ’নম্বরে নেমে যায় শিল্ডজয়ীরা আর বেঙ্গালুরু জিতে উঠে যায় লিগ টেবলের শীর্ষে। ঘরের মাঠে ১-০-য় জিতলেও যে অনায়াসে জিতেছে তারা, তাও নয়। ম্যাচের একমাত্র গোলটি পেতে ৭৪ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় তাদের। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে বেঙ্গালুরুর দলের বিরুদ্ধে এ বার খুব একটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।
পেট্রাটস, স্টুয়ার্ট ধারাবাহিক নয়
অন্যরা ভাল খেললেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গত দু’বারের সেরা গোলদাতা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস এ বার তেমন ফর্মে নেই। ২৩টি ম্যাচে মাত্র চারটি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। গতবার এই দিমিই ২৩ ম্যাচে দশটি গোল ও সাতটি অ্যাসিস্ট করেছেন। প্রথমবার ২৩ ম্যাচে ১২ গোল ও সাতটি অ্যাসিস্ট দিয়েছিলেন। গ্রেগ স্টুয়ার্টের অবস্থাও প্রায় সে রকমই। এ বার তিনটির বেশি গোল করতে পারেননি তিনি। পাঁচটি অ্যাসিস্ট করেছেন অবশ্য। গতবারও পাঁচটি গোলে অবদান ছিল তাঁর। দু’টি গোল করেছিলেন। প্রথম মরশুমের তুলনায় (১১ গোল ও ১০ অ্যাসিস্ট) ক্রমশ যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছেন গ্রেগ। এই দু’জন ফর্মে থাকলে সবুজ-মেরুন আক্রমণ আরও ধারালো হয়ে উঠত।