FIFA World Cup 2022 লিওনেল মেসি ভাল না খেললে নাকি বড় ম্যাচে জেতে না আর্জেন্টিনা। এমন কথার প্রচলন রয়েছে মাঠে। এমনকী আর্জেন্টিনা দলটাই মেসি নির্ভর বলেও প্রচলন।
কাতার বিশ্বকাপে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকা আর্জেন্টিনা পোল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই পা রেখেছে শেষ ষোলোয়।
পোল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে দেখা গেল উল্টো ছবি। মেসিকে অতিরিক্ত মার্কিংয়ে রেখে দেওয়ায় অন্যরা আরামে ম্যাচ বের করে নিয়ে চলে গেল আর্জেন্টিনার পক্ষে।
এমনকী মেসির পেনাল্টি মিসের পর আলবিসেলেস্তেরা জয় পেয়েছে মেসির গোল-অ্যাসিস্ট ছাড়াই। মেসির দিকে নজর রাখতে গিয়ে বাকিদের গুরুত্ব কম দেওয়ার ট্যাকটিক্স বুমেরাং হয়ে গিয়েছে পোলিশদের পক্ষে।
হেরেও মেক্সিকোর সঙ্গে গোল পার্থক্যে এগিয়ে পরের রাউন্ডে গিয়েছে পোল্যান্ড। কিন্তু তারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে একটা দল টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকতে হলে একটা মেসিতে হয় না। যতই তিনি মেসি হন না কেন।
মেসির ওপর আর্জেন্টিনার অতিনির্ভরশীলতা অনেক সময়ই কাল হয়েছে তাদের। প্রয়োজনের মুহূর্তে এই কিংবদন্তি জ্বলে উঠতে না পারলে ম্যাচ আর বের করে নিয়ে আসতে পারে না আলবিসেলেস্তেরা। যার বড় প্রমাণ তো ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল।
তবে প্রথম ম্য়াচে সৌদির কাছে হারের পর বদলে গিয়েছে আর্জেন্টিনা বলছে অনেকেই। তবে যাঁরা বলছে তাঁরা গত কয়েক বছরে আর্জেন্টিনার খেলা ফলোই করেন না। কারণ কোয়ালিফায়ার হোক বা কোপা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এমনটাই খেলেছে টিম আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম দুই ম্যাচে হওয়া ৩ গোলের ৩টিতেই অবদান রয়েছে মেসির। প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করা আর্জেন্টাইন তারকা দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল তো করেছেনই, এঞ্জো ফার্নান্দেজের গোলেও রেখেছেন অবদান। তবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে চিত্র ভিন্ন।
এমন নয় যে মেসি পোল্যান্ডের বিপক্ষে খারাপ খেলেছে। একটা পেনাল্টি মিসের পরও সোফাস্কোর মেসিকে রেটিং দিয়েছে ৮.২। পুরো ম্যাচে গোলে ৭টি শট নিয়ে ৪টি রেখেছেন লক্ষ্যে। দুটি গেছে লক্ষ্যের বাইরে আর একটি শট ব্লক হয়েছে। পাঁচটি কি-পাস ও ৪টি সফল লং বল দিয়ে প্লেমেকিংয়েও রেখেছেন দারুণ ভূমিকা।
এদিন একটা রেকর্ডও গড়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর থেকে পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করা ও ৫টি সফল ড্রিবল করা সবচেয়ে বয়স্ক তারকা এখন মেসিই। ভেঙে দিয়েছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপে তাঁদের দেশের ফুটবলের ভগবান দিয়েগো মারাদোনার গড়া রেকর্ড।
কিন্তু এত কিছুর পরও এদিন আর্জেন্টিনার করা দুই গোলের কোথাও নেই মেসির নাম। হুট করে কেউ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পড়লে হয়তো টেরই পাবেন না যে, মেসি ছিলেন এই ম্যাচে!
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে। ডানপাশ থেকে নাহুয়েল মলিনার লো ক্রস থেকে প্রথম টাচেই নিচু শটে ভয়েচেক সেজনিকে পরাজিত করেন এই ব্রাইটনের তারকা।
৬৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা এসেছে তারুণ্যের হাত ধরে। নতুন সেনসেশান এঞ্জো ফার্নান্দেজ বল বাড়ান বক্সে থাকা ইউলিয়ান আলভারেজকে। তার বুলেট শটে বল জড়িয়ে যায় জালে। ২-০ ব্যবধানে জয় পায় আর্জেন্টিনা।
দুই গোলের কোথাও নেই মেসির নাম। অথচ বড় ম্যাচ মানেই এতকাল আর্জেন্টিনা তাকিয়ে থেকেছে মেসির দিকে। স্ক্যালোনি এই মেসিনির্ভরতা থেকেই বের করে আনার চেষ্টা করেছেন শুরু থেকেই। মেসি ব্যর্থ হলেও যে জয় বের করে আনতে পারে তার একটা শোডাউন অবশ্য গত কোপা আমেরিকা আসরেই দেখা গিয়েছিল। ফাইনালে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা গোল করেছিল ৮টি। যার ৭টিতেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভবে ছিল মেসির নাম। ফাইনালে মেসি ব্যর্থ, দলও পারেনি শিরোপা জিততে। কাতার বিশ্বকাপে তাই মেসি নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে চায় আলবিসেলেস্তেরা।