১. হোবার্টে হারিকেন (২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৩৩ রান)
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বিরাট কোহলি এখনও পর্যন্ত আটটি সেঞ্চুরি করেছেন। তবে ২০১২ সালে কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক সিরিজ়ে বিরাটের ইনিংসটা ছিল মনে রাখার মতো। এই ত্রিদেশীয় সিরিজ়ে বিরাট ৮৬ বলে ১৩৩ রান করেন। ৩৭ ওভারের মধ্যেই ভারত ৩২১ রান তুলে ফেলে। এই ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গাকে বিরাট পিটিয়ে ছাতু করেছিলেন। এই ইয়র্কার স্পেশালিস্টের এক ওভারে তিনি ২৪ রান নিয়েছিলেন।
২. এশিয়া কাপ ক্লাসিক (২০১২ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৮৩ রান)
এশিয়া মহাদেশে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের থেকে বড় আর কিছু বোধহয় হতে পারে না। শ্রীলঙ্কাকে অমন কচুকাটা করে আসার কয়েকমাস পরেই শুরু হয় এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান ৫০ ওভারে ৩২৯ রান তুলেছিল। এরপর ব্যাট করতে নামে ভারত। গৌতম গম্ভীর কোনও রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। এরপর ব্যাট হাতে নামেন বিরাট। তিনি ২২টি বাউন্ডারি এবং একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে কেরিয়ারের সেরা ১৮৩ রানের ইনিংস ভারতীয় দলকে উপহার দেন। এই ম্যাচটি ৪৮ ওভারের মধ্যেই ভারত জিতে গিয়েছিল। তবে এই ম্যাচে সচিন এবং রোহিতও হাফ সেঞ্চুরি করে বিরাটকে সঙ্গত দিয়েছিলেন।
৩. মোহালি এপিক (২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অপরাজিত ৮২ রান)
২০১৬ সালটা কোহলির আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে স্বপ্নের বছর ছিল। টি-২০ বিশ্বকাপে বিরাটের হাতে সিরিজ় সেরা পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ইনিংসটা ছিল মনে রাখার মতো। ১৬১ রান তাড়া করতে নেমে ৪৯ রানের মধ্যেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। এরপর কোহলি এবং যুবরাজ ভারতীয় দলের হাল ধরেছিলেন। ৯৪ রানে যুবরাজ ফিরে গেলেও কোহলি কিন্তু উইকেটে টিকে ছিলেন। এরপর ধোনিকে সঙ্গী করে তিনি জয়ের দিকে এগিয়ে যান। কোহলি হাফ সেঞ্চুরি করলেও সেটা কারোর নজর কাড়তে পারেনি। কিন্তু, দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর এই ইনিংসের প্রশংসা সকলেই করেছিলেন।
৪. ইংল্যান্ডের ভুতকে গলা টিপে দেওয়া (২০১৮ সালে বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৪৯ রান)
২০১৪ সালে কোহলির ইংল্যান্ড সফরের কথা মনে আছে? শুধু আপনাদের নয়, কোহলির কাছেও এই সফরটা দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম কিছু ছিল না। ১৩.৫০ ব্যাটিং গড় নিয়ে তিনি এই সিরিজ় শেষ করেছিলেন। তারপর কেটে গেছে চার বছর। চারবছর পর আবারও ইংল্যান্ড সফর। এবার যেন এক অন্য বিরাটকে দেখল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। পাঁচ ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ়ে কোহলি করেন ৫৯৩ রান ব্যাটিং গড় ৫৯.৩০। বার্মিংহামে আয়োজিত প্রথম টেস্টেই বিরাট ১৪৯ রানের ঝকঝকে এই ইনিংস থেকে ইংল্যান্ডকে বিপদশঙ্কা দিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে অন্য ব্যাটসম্যানরা ২৬ রানের উপরে উঠতেই পারেনি। এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৪-তেও এই অ্যান্ডারসনই কোহলির যম ছিলেন। যাইহোক, তৃতীয় টেস্টে কোহলি দুটো ইনিংসে যথাক্রমে ৯৭ এবং ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন। যদিও এই সিরিজ়ে ভারত ১-৪ ব্যবধানে হেরে যায়। তবে এই সিরিজ়ে কোহলি ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৪ সালের ভুতকে গলা টিপে হত্যা করতে পেরেছিলেন।
৫. অ্যাডিলেডে ব্যাটিং নির্বাণ প্রাপ্তি (২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১১৫ এবং ১৪১ রানের ইনিংস)
অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির প্রথম টেস্ট ম্যাচ। আঙুলে চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁর বদলে প্রথম টেস্টে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দেন বিরাট কোহলি। অ্যাডিলেডে তিনি জোড়া সেঞ্চুরি করেন। প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া সাত উইকেটে ৫১৭ রান করে ডিক্লেয়ার করে। জবাবে বিরাট কোহলির ১১৫ রানের দুরন্ত ইনিংসের উপরে ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে ৪৪৪ রান তোলে। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া পাঁচ উইকেটে ২৯০ রান তুলে ডিক্লেয়ার ঘোষণা করেছিল। ভারতের সামনে ছিল ৩৬২ রানের লক্ষ্যমাত্রা। মুরলী বিজয়কে সঙ্গী করে কোহলি ১৪১ রানের আরও একটি দুরন্ত ইনিংস খেলেন। ২৪২ রানে দুই উইকেট হারায় ভারত। মনে হচ্ছিল, ভারত বোধহয় সিরিজ়ে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করবে। এরপর বল হাতে আসেন নাথান লিয়ন। তিনি একাই ১৫২ রান দিয়ে সাত উইকেট তুলে নেন। সেদিন ভারতীয় ক্রিকেট দলে অন্যতম সেরা ব্যাটিং বিপর্যয় হয়েছিল। মাত্র ৭৩ রনের মধ্যে ভারতের আটটি উইকেট পড়ে যায়। ৩১৫ রানেই শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস।