সালটা ছিল ২০০১। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়ার বিজয়রথ থামিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। এই ম্যাচে জয়ের পরই ভারতীয় ক্রিকেট দলের মেজাজে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এই ম্যাচের জয় ভারতীয় ক্রিকেট দলকে একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল এই ঐতিহাসিক জয়লাভ করেছিল। এর একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ভারত ফলোঅনে ব্যাট করতে নামে এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের মধ্যে তৈরি হওয়া ঐতিহাসিক জুটি। কিন্তু, এই জয়ের ভিতটা ভারতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালীন তরুণ অফস্পিনার হরভজন সিংয়ের হ্যাটট্রিকই তৈরি করেছিল।
সেইসময় হরভজনের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে তিন বলে লাগাতার তিনটে উইকেট তিনি শিকার করেন। অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডের চার উইকেটে ২৫২ রান জ্বলজ্বল করছিল। অধিনায়ক স্টিভের সঙ্গে উইকেটে ছিলেন রিকি পন্টিং। কিন্তু, তিন বলের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার স্কোর সাত উইকেটে ২৫২ রান হয়ে যায়।
ভাজ্জি বললেন, "এটা আমার জীবনের একটা বিশেষ মুহূর্ত ছিল। ওই হ্যাটট্রিকের পর আমি যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করি। আমি যে বড় দলের বিরুদ্ধে এমন পারফরম্যান্স করতে পারি, সেই আত্মবিশ্বাসটাও পাই। আমি ভেবেছিলাম, যদি এই ক্রিকেটারদের আমি আউট করতে পারি, তাহলে বিশ্বের যে কোনও ক্রিকেটারকেই আমি আউট করতে পারব। দলের বাকি ক্রিকেটাররাও আমার উপরে ভরসা করতে শুরু করেন। তাঁরা মনে করেন, এই ছেলেটাও কিছু করতে পারবে। ওই হ্যাটট্রিকটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।"
হরভজন ফুল লেংথে ডেলিভারি করেছিলেন। পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ব্যাকফুটে ওই বল খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাইনে পৌঁছতে পারেননি। শেন ওয়ার্ন বলে ব্যাট ঠেকালেও বলটা নিচে রাখতে পারেননি। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে সদগোপান রমেশ ক্যাচ ধরে নেন।
আজ হরভজন জানালেন, "সত্যি কথা বলতে কী, ওই হ্যাটট্রিকের আগে আমি বিশেষ কিছুই চিন্তাভাবনা করিনি। আমি নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ বোলিংটা করতে চেয়েছিলাম। সেইসময় ডিআরএস ছিল না। কেউ যদি জেনেশুনে বলটা প্যাড দিয়ে খেলতে চাইত, তাহলে এলবিডাব্লিউ আউট কেউ দিত না।" পন্টিং এবং গিলক্রিস্ট আউট হওয়ার পর হরভজন ভেবেছিলেন, ওয়ার্ন হয়ত প্যাড দিয়েই বলটা খেলবেন।
হরভজন বললেন, "আমার মাথায় একটাই কথা ঘুরছিল যে ফুল লেংথ ডেলিভারি করতে হবে। এটা ওর প্রথম বল ছিল। আমি ভেবেছিলাম প্যাড দিয়েই হয়ত বলটা বাঁচানোর চেষ্টা করবে। আমি ফুল লেংথে বল করেছিলাম। কিন্তু, উনি বলটি ফ্লিক করলেন। আর সদগোপান রমেশ বোধহয় জীবনের সবথেকে শ্রেষ্ঠ ক্যাচটা ধরে নেয়। সেইসঙ্গে আমারও কেরিয়ার তৈরি হয়ে যায়। মাঠে উপস্থিত প্রত্যেকটা দর্শকের কাছেই এটা উৎসবের মুহূর্ত ছিল। আমি শুধু দেখছিলাম, রাহুল কীভাবে রমেশকে জড়িয়ে ধরছে এবং এই উৎসবের মুহূর্তটাকে উপভোগ করছে। এটাই তো দল। ওরা এমনভাবে উৎসবের মুহূর্তটাকে উপভোগ করছিল, যেন মনে হচ্ছিল যে এটা ওদের হ্যাটট্রিক।" এই ম্যাচ থেকেই হরভজন সিং এবং রিকি পন্টিংয়ের মধ্যে টক্কর শুরু হয়ে যায়। হরভজন সিংই ভারতের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার যিনি হ্যাটট্রিক নিয়েছেন।