১৬ নভেম্বর, ২০১৩। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সচিন তেন্ডুলকর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করলেন। তাঁর এই অবসর গ্রহণের সঙ্গেই কার্যত ক্রিকেটের একটা যুগ শেষ হয়ে গেল। সচিনের শেষ ম্যাচটা দেখতে প্রায় দশ হাজার ক্রিকেট সমর্থক ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছিলেন। আর এই ভরা স্টেডিয়ামেই চোখের জলে বিদায় নিলেন 'ক্রিকেটের ঈশ্বর'। ইতি টানলেন ২৪ বছরের লম্বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে।
অবসর ঘোষণা করলেন সচিন
সেদিন শুধুমাত্র সচিনই একা কাঁদেননি, কেঁদেছিল গোটা দেশ। প্রায় একমাস আগে অক্টোবরেই নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ় খেলে তিনি অবসর ঘোষণা করেন। শুধুমাত্র মুম্বই কিংবা ভারত নয়, ১৬ অক্টোবর গোটা বিশ্ব সচিনকে কুর্নিশ জানিয়েছিল।
Thank You @sachin_rt For Everything! 🙇#SachinTendulkar #ThankYouSachin pic.twitter.com/jGaCOuse19
— Sachin Tendulkar Trends (@TrendsSachin) November 16, 2020
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ১৮২ রানে অলআউট হয়ে যায়। জবাবে ভারত ৪৯৫ রান তোলে। এরপর ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে নামবে কি না, সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। সচিন আউট হওয়ার পরই গোটা স্টেডিয়াম কার্যত নিশ্চুপ হয়ে যায়। আর কোনওদিন দেশের জার্সি গায়ে তাঁরা তাঁদের প্রিয় তারকাকে দেখতে পাবেন না, এটা ভেবেই যেন সবথেকে বেশি কষ্ট হচ্ছিল। কয়েক সেকেণ্ডের নীরবতার পর ফের হাততালিতে গর্জে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম।
“My life, between 22 yards for 24 years, it is hard to believe that that journey has come to an end.”#OnThisDay in 2013 ... An emotional day for India fans 😢
— ICC (@ICC) November 16, 2020
Sachin Tendulkar bid adieu to international cricket after 🇮🇳 wrapped an innings victory over WI at the Wankhede 👋 pic.twitter.com/GDrfy7h4FJ
সেই ম্যাচে সচিন ৭৪ রান করেছিলেন। তিনি আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন বিরাট কোহলি।
সচিনের ফেয়ারওয়েল স্পিচ
ম্যাচের শেষে আবেগঘন কণ্ঠে সচিন বললেন, "আমার সকল প্রিয় বন্ধুরা। দয়া করে শান্ত হোন, আমাকে কথা বলতে দিন। আপনাদের থেকে আমি আরও আবেগপ্রবন হয়ে পড়ছি। এই ২২ গজের মধ্যে আমি জীবনের ২৪টা বছর কাটিয়ে দিলাম। আজ যে আমার যাত্রা শেষ হয়ে গেল, এটাই যেন আমি বিশ্বাস করতে পারছি। তবে আজ আমি সেইসব মানুষদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাঁরা আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি এই প্রথমবার আমি পকেটে করে একটা তালিকা নিয়ে এসেছি। যাতে আমি এই প্রত্যেকটা নাম মনে রাখতে পারি, কাউকে যেন ভুলে না যাই। আমি আশা করছি আপনারা বুঝতে পারছেন। আমার কথা বলতে যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু তাও চেষ্টা করছি।"
It's been 7 Yrs of retirement @sachin_rt sir❤️
— Mohammed Haris (@haris__vfc) November 16, 2020
People Luv @msdhoni, @imVkohli
& @ImRo45 bcoz of Cricket but People Luv Cricket bcoz of #SachinTendulkar 😇#ThankYouSachin Sir For Everything
Inspirational Forever 🙏❤️ pic.twitter.com/R4T8Z7TXaK
সচিনের এই কথা শুনেই কিশোর থেকে বৃদ্ধ সকলে কেঁদে ফেলেন। সচিন তাঁর বক্তব্যের একেবারে শেষদিকে বলেন, "আপনাদের সঙ্গে আমার যে ভালোবাসার স্মৃতি তৈরি হয়েছে, তা আমি সারাজীবন সঙ্গে নিয়ে বেড়াব। বিশেষ করে সচিন, সচিন ধ্বনি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ওটা আমার মনে থাকবে।"
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে করাচিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর ২৪ বছর এই ২২ গজে তিনি কাটিয়ে দেন। তাঁর কেরিয়ারে যুক্ত হয় ২০০টি টেস্ট ম্যাচের পালক। টেস্ট ম্যাচে সচিন ১৫,২৯১ রান করেন। এরমধ্যে রয়েছে ৫১টি সেঞ্চুরি এবং ৬৮টি হাফ সেঞ্চুরি। ব্যাটিং গড় ৫৩.৭৮। পাশাপাশি একদিনের কেরিয়ারে তিনি ১৮,৪২৬ রান করেন। গড় ৪৪.৩৮। এরমধ্যে ৪৯টি সেঞ্চুরি এবং ৯৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন।
তবে এর আগেই তিনি একদিনের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। এমনকী আইপিএলেও তিনি শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের এই অবসর যেন কফিনের শেষ পেরেকটাই পুঁতে দিল।