ইস্টবেঙ্গলে ডামাডোল অব্যহত। গত বেশ কয়েক বছর ট্রফি নেই। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঝামেল। এখনও এই মরশুমে ইমামির সঙ্গে চুক্তি সই হয়নি। এই অবস্থায় থমকে দল গঠনের কাজও। ফলে হতাশ লাল-হলুদ সমর্থকরা। রবিবারও চুক্তি সইয়ের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। দুই তরফেই কর্মকর্তারা চেষ্টা করছেন সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে দল গঠনের কাজে হাত লাগাতে। তবুও কোথাও একটা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এদিকে ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার জানিয়েছেন, তাঁরা সমস্ত টুর্নামেন্টেই খেলবেন। দল গঠন না হলে, কী ভাবে খেলবে লাল-হলুদ ব্রিগেড? কলকাতা লিগ হয়ত এই মাসের শেষ দিকেই শুরু হয়ে যাবে। হাতে এক মাসও নেই। এর মধ্যে দল গড়ে মাঠে নেমে খেলা সম্ভব লাল-হলুদের? প্রশ্ন তুলছেন সমর্থকরাই।
কোথায় সমস্যা?
লাল-হলুদের সমস্যা কী শুধুই কর্তাদের ইগো? না কি ইনভেস্টরদের পদক্ষেপও কিছুটা সমস্যা তৈরি করছে? আপাতভাবে মনে হতেই পারে, এই সমস্যার মূলে রয়েছে কর্তাদের নাছোড় মনোভাব। অনেকেই তেমনটা বলছেন। চেয়ার ছাড়তে না চাওয়া কর্তারা মেনে নিতে পারছেন না তাঁদের ক্লাবে অন্য সংস্থার অনুপ্রবেশ। কথাটা যে একেবারে ভুল নয়, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আসলে দল গঠন, ম্যানেজার হিসেবে কর্তাদের উপস্থিতি, ফুটবলারদের সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় দেখা, তাঁদের পাশে থাকা সবটাই প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। তবে শুধু ইস্টবেঙ্গল কেন? মোহনবাগান কর্তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে তাঁরা এটিকে-র সঙ্গে সংযুক্তির পথে হেঁটেছেন। তাঁদের ক্লাবেও দুই বছরে একটাও ট্রফি নেই। চারবার ডার্বি জিতেছেন প্রাপ্য বলতে এইটুকুই। অন্য দিকে ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে কোয়েস এসেছিল। তাঁরা, দল গঠনে কর্তাদের হস্তক্ষেপ মানতে পারেননি। প্রথম বছর আই লিগ অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়। দ্বিতীয় বছরে খারাপ দল গড়ে তাঁরা। ফলে তাঁদের বাদ দিয়ে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয়। ক্লাবের বেশিরভাগটাই কিনে নিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। এরপরই শুরু হয় আসল সমস্যা। টাকা দিয়ে এত সমর্থকের আবেগ কেনা যায় না। এটা সম্ভবত তাঁরা বোঝেননি। ব্যবসায়ী হলেও ফুটবল মাঠের আবেগ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল শ্রী সিমেন্ট কর্তাদের। এটা মানতেই হবে।
আরও পড়ুন: ATK মোহনবাগানের বড় চমক. রয় কৃষ্ণর জায়গায় দলে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার?
ইস্টবেঙ্গল হোক বা মোহনবাগান, সমর্থকরা দিনের শেষে প্রিয় দলের জয়ই দেখতে চান। কিন্তু লাল- হলুদ সমর্থকদের সেই আশা পূরন হয়নি। কারণ, প্রথম বছরে দল গঠন করার সময় ছিল না এসসি ইস্টবেঙ্গলের। তবে দ্বিতীয় বছরে তাঁদের কাছে ভাল দল গড়ার সুযোগ ছিল। অথচ ইস্টবেঙ্গল কর্তারা চুক্তি সই করছেন না এই অজুহাতে তাঁরা ভাল দল গড়েননি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, পূর্ব ভারতে ব্যবসায়িক দিক থেকে শ্রী সিমেন্ট তেমন পরিচিত নয়। ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরেই তারা পরিচিতি পেতে শুরু করেছিল। আর সেই ক্লাবই কার্যত দখলের পরিকল্পনা করে সমস্যা ডেকে আনে।
আরও পড়ুন; ATK Mohun Bagan-এর পাঁচ বঙ্গতনয়, চেনেন তাঁদের বউ-গার্লফ্রেন্ডদের?
উল্টোদিকে এটিকে মোহনবাগান ভাল ফুটবলার আনছে, ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে বারেবারে হারাচ্ছে। আর সেই কারণেই জোরাল হচ্ছে না 'রিমুভ এটিকে' আন্দোলন। এই আন্দোলনের খবর সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বা উৎসব পারেখরা জানেন না এমন নয়। তবুও এই আন্দোলন নিয়ে সরকারিভাবে কোনও বিবৃতি শোনা যায়নি তাঁদের পক্ষ থেকে। এটিকে নাম সরবে কি না তা সময় বলবে। সরলে তাতে যে সমর্থকরা খুশি হবেন তা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন: রোজগারে এগিয়ে রোহিতই, অনেক পিছনে বাকি দেশের ক্যাপ্টেনরা; কার কত আয় ?
ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে কর্তাদের আরও নমনীয় হতে হবে। বুঝতে হবে, ফুটবল তাঁরা অনেক বেশি বোঝেন এটা ঠিক কিন্তু তার সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থটাও বুঝে নেবেন। ইমামির সঙ্গে চুক্তি হলে যে নতুন বোর্ড হবে তাতে কতজন ক্লাবের প্রতিনিধি থাকবেন তা নিয়ে দর কষাকষি চলতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চুক্তির জট ক্রমশ বাড়তে থাকলে শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের ঐতিহ্যে দাগ লাগতে পারে। তাতে লক্ষ লক্ষ সমর্থকের আবেগও আহত হবে। যা ক্লাবের পক্ষে মোটেও সুখবর হবে না। এই বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে ক্লাব যদি পদক্ষেপ করে তবেই বোধহয় লাল-হলুদ সমর্থকদের মন জয় সম্ভব।