২০২৩ সালের বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে টুর্নামেন্ট। ১৯ নভেম্বর আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ। এই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। পাকিস্তান বারবার বলছে তারা ভারতে আসবে না। অতিসম্প্রতি অর্বাচীনের মতো মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী আহসান মাজারি। মাজারি বলেছেন,ভারত এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তান না এলে বিশ্বকাপে যাবে না পাক দল। তবে মুখে বললেই হল না! বিশ্বকাপের বাইরে চলে গেলে চড়া মূল্য চোকাতে হবে পাকিস্তানকে। এর পিছনে রয়েছে বিবিধ কারণ।
আইসিসি থেকে অর্থায়ন বন্ধ!
২০২৩ সালে পাকিস্তান বিশ্বকাপ বয়কট করলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) পিসিবিকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আয়ের ৫০ শতাংশ আসে আইসিসি থেকে। আইসিসির বন্টন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৪ বছরে (২০২৪-২৭) ২৮৫ কোটি টাকা পাবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। পাকিস্তানের একে ভাঁড়ে মা ভবানী, তার উপরে সেই তহবিল না আসলে সঙ্কট তীব্রতর হবে।
আইসিসি চার বছরে প্রায় $৬০০ মিলিয়ন (প্রায় ৪৯৫৬ কোটি টাকা) বিভিন্ন দলগুলির মধ্যে ভাগ করে দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশীদার ভারত। তারা পাবে মোট তহবিলের ৩৮.৫০ শতাংশ (প্রায় ১৯০৮ কোটি টাকা)। পাকিস্তান যদি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে ক্রিকেট দেশ হিসেবে সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের দায়িত্ব হাতছাড়া-
২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর বহু বছর ধরে পাকিস্তানে ক্রিকেট হয়নি। গত এক-দু বছরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলি পাকিস্তান সফর করেছে। এ অবস্থায় নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায় না পাকিস্তান। পাকিস্তানকে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করতে হবে। বিশ্বকাপের জন্য ভারত সফর না করলে আইসিসি সেই আয়োজনের অধিকার কেড়ে নিতে পারে। কারণ ভারত ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করা অসম্ভব।
পাকিস্তান নিষিদ্ধ হতে পারে
বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টে আইসিসির আয়ের একটি বড় অংশ আসে শুধুমাত্র ভারতের ম্যাচ থেকে। পাকিস্তান ২৯ বছর পর আইসিসি ইভেন্টের আয়োজন করার দায়িত্ব পেয়েছে। যা তারা কোনওমতেই হারাতে চায় না। ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করলে পাকিস্তান দলকেও নিষিদ্ধ করতে পারে আইসিসি। ক্রিকেট দলগুলির জন্য আইসিসি ইভেন্টে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।
আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে হবে পাকিস্তানকে। সেখানে ভারতের বিপক্ষে খেলতে চায় না পাকিস্তান। এছাড়াও পাকিস্তান চেন্নাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবং বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে রাজি ছিল না, তবে আইসিসির সামনে তাদের আপত্তি ধোপে টেকেনি।
উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন শরিফের
বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ওই কমিটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, সরকারি নীতি ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশ দেবে কমিটি। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ক্রীড়ামন্ত্রী আহসান মাজারি, মরিয়ম আওরঙ্গজেব, আসাদ মাহমুদ, আমিন উল হক, কামার জামান কায়রা এবং প্রাক্তন কূটনীতিক তারিক ফাতমি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই পিসিবিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পাকিস্তানের ম্যাচের মাঠগুলি পরিদর্শনের জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠানো হবে।