এবারের আইপিএল (IPL) থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (Kolkata Knight Riders) বিদায়ের পরেও আলোচনার কেন্দ্রে রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। বুধবার লখনউ সুপার জায়েন্টসের (LSG) বিরুদ্ধে প্রায় ম্যাচটা বের করে ফেলেছিলেন রিঙ্কু। মাত্র ১৫ বলে ৪০ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে আউট হন তিনি। ৪টে ছক্কা আর দুটো চার দিয়ে সাজান তাঁর ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ২৬৬.৬৭। এই মরশুমে সে ভাবে খেলারই সুযোগ পাননি রিঙ্কু। আর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফ্যানরা। কেন পরপর ম্যাচ হারার পরেও খেলান হল না রিঙ্কুকে? এই প্রশ্নই তুলছেন তাঁরা।
যেকোনো সময় ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। তবে, আলীগড় থেকে রিংকুর জন্য এখানে যাত্রা সহজ ছিল না। দারিদ্র্যের কারণে প্রাথমিক দিনগুলোতে তাকে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। এই যাত্রা কতটা কঠিন ছিল তা রিংকু নিজেই জানিয়েছেন। এরই একটি ভিডিও আপলোড করেছে কলকাতা তার সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না
এই ভিডিওতে, রিঙ্কু ২০২১ সালের কথা উল্লেখ করেছেন। এই সময়েই বিজয় হাজারে ট্রফি খেলতে গিয়ে তাঁর হাঁটুতে চোট লেগেছিল এবং তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে অংশ নিতে পারেননি। রিংকু জানান, চোটের পর তাঁর বাবা ২-৩ দিন কোন খাবারই মুখে তোলেননি। রিংকু বলেন, 'গত বছরটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। বিজয় হাজারে ট্রফি খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলাম। একটি ম্যাচে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে পড়ে যাই। পড়ে যেতেই গুরুতর চোট লাগে। আমার চোখ তখন আইপিএল-এ। স্যার বললেন সুস্থ হতে ৬-৭ মাস লাগবে। চোট লাগার পরে আমার বাবা ২-৩ দিন খাবার খাননি। আমি বললাম, ক্রিকেটে চোট লাগতেই পারে। তবুও চিন্তায় ছিলেন বাবা। কারণ আমি আমার বাড়ির জন্য সবকিছু করি, এবং আমি যদি ক্রিকেট খেলতে না পারি, তবে আমার পরিবার সমস্যায় পড়বে।''
রিংকু খুব গরীব ঘর থেকে এসেছেন। তাঁর বাবা ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। আর পুরো পরিবার একই সিলিন্ডার ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্সির লাগোয়া দুই কামরার বাড়িতে থাকত। আলীগড় স্টেডিয়ামের কাছে বসবাসকারী এই পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন নম্বরে রিংকু। তাঁর বড় ভাই অটোরিকশা চালান। অন্যজন কোচিং সেন্টারে কাজ করেন। নিলামে বিক্রি হওয়ার পaর রিংকু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দেবেন্দ্র পান্ডেকে বলেন,'ভেবেছিলাম ২০ লাখেই কেউ আমাকে কিনবে। কিন্তু আমি ৮০ লক্ষ পেয়েছি। টাকা পাওয়ার পর আমার মাথায় প্রথম যেটা আসে সেটা হল আমি আমার ভাইয়ের বিয়ে দিতে হবে। আর আমিও আমার বোনের বিয়ের টাকা জমাতে পারব। আমরা আরও ভাল একটা বাড়িতে চলে যাব।''
আসলে তিন বছর আগে রিঙ্কুর পরিবারের পাঁচ লক্ষ টাকা দেনা ছিল। আর পরিবারের উপার্জনের এই টাকা ফেরত দেওয়া একেবারেই সহজ ছিল না। নবম শ্রেণিতে ফেল করা রিংকু পড়াশোনায় খুব একটা ভাল ছিলেন না। সে কারণেই তিনি জানতেন যে তাঁর ভাগ্য কেবল ক্রিকেটেই ঘুরিয়ে দিতে পারে। এমতাবস্থায় তিনি এ বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেন রিঙ্কু।
উত্তরপ্রদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার সময় এই ঋণ শোধ করতে রিংকু প্রতিদিনের খরচের টাকাসহ সব টাকাই খরচ করেন। এ বিষয়ে রিংকু বলেছিলেন, ''বাবা আর ভাই মাসে আয় করতেন মাত্র ৬-৭ হাজার। আমার পরিবার একটু বড়, তাই ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি।''
দিল্লিতে একটি টুর্নামেন্টে ম্যান অফ দ্য সিরিজ নির্বাচিত হওয়ার পরে রিংকু একটি মোটরসাইকেল পুরষ্কার হিসেবে পান। তাঁর পরিবারও তাঁকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। পরে রিংকুর বাবা এই মোটরসাইকেলের মাধ্যমে সিলিন্ডার সরবরাহ শুরু করেন। যদিও পরিস্থিতি তখনও খুব একটা ভাল ছিল না। এমতাবস্থায় রিংকু তাঁর ভাইকে কিছু কাজ আনতে বলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন,
'ভাই আমাকে যেখানেই নিয়ে গেছে, সেখানেই আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করান হয়েছে। ঘরে ফিরে মাকে বললাম আমি আর সেখানে যাব না। আমাকে ক্রিকেটই খেলতে হবে।''
আর তারপরই আইপিএলে পৌঁছে যান রিংকু। যেখানে তিনি ২০১৮ মরশুম থেকে কেকেআর-এর দলে রয়েছেন। কেকেআর, তাঁকে ধরে রেখেছে, এই নিলামে কলকাতা ৫৫ লক্ষ টাকায় রিঙ্কুকে কিনেছে।
আরও পড়ুন: উইকেট হারিয়ে ক্ষিপ্ত ওয়েড, ভাঙচুর চালালেন ড্রেসিংরুমে, VIDEO
আরও পড়ুন: ফর্মে ফিরে আবেগতাড়িত স্পিচ বিরাটের, কী বললেন?
রিংকু সিং আইপিএল ২০২২-এ অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তিনি ৭ ম্যাচে ১৪৮.৭১ স্ট্রাইক রেট সহ ১৭৪ রান করেছেন। এই সময়ে তার গড়ব ৩৪। বুধবার লখনউয়ের বিপক্ষে ম্যাচে রিংকু সিংয়ের ১৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস দলকে প্রায় জয় এনে দেয়।