Lalit Modi: রাজস্থান ছিল তাঁর গড়, কী করে ললিত মোদী-সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল?

২০২৩-২৭ সালের জন্য আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্বের জন্য বিড করার পরে, ললিত মোদী টুইট করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি খুশি যে আইপিএল, বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছেছে এবং এই টুর্নামেন্টটি কেবল দেশকে একত্রিত করে। শুধু তাই নয় এটি বিশ্বের কাছে ভারতের ইন্যতম সেরা ব্র্যান্ড। ললিত মোদি একের পর এক টুইট করেছেন এবং ভক্তদের ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি পুরনো ছবি, পরিসংখ্যান ইত্যাদি শেয়ার করেছেন। একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে চলেছেন ললিত মোদী।

Advertisement
রাজস্থান ছিল তাঁর গড়, কী করে ললিত মোদী-সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল?ললিত মোদী

দীর্ঘদিন পর ফের খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন ললিত মোদী। বিসিসিআই আইপিএল সম্প্রচারের দরপত্র থেকে বিপুল মুনাফা পাওয়ার পরেই একের পর এক ট্যুইট করতে থাকেন  বিসিসিআই-এর প্রাক্তন কর্তা। আইপিএলের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে পরিচিত এবং প্রথম তিন মরশুমে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্রিকেট লিগের চেয়ারম্যান এবং কমিশনার ছিলেন। এই মুহূর্তে ললিত মোদী ভারত সরকারের কাছে পলাতক।

২০২৩-২৭ সালের জন্য আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্বের জন্য বিড করার পরে, ললিত মোদী টুইট করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি খুশি যে আইপিএল, বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছেছে এবং এই টুর্নামেন্টটি কেবল দেশকে একত্রিত করে। শুধু তাই নয় এটি বিশ্বের কাছে ভারতের ইন্যতম সেরা ব্র্যান্ড। ললিত মোদি একের পর এক টুইট করেছেন এবং ভক্তদের ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি পুরনো ছবি, পরিসংখ্যান ইত্যাদি শেয়ার করেছেন। একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে চলেছেন ললিত মোদী। 

কিন্তু ব্যবসায়ী পরিবার থেকে আসা ললিত মোদীর যাত্রা কেমন ছিল? ধনী পরিবার হলেও ক্রিকেটের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই ললিত মোদীর পরিবারের। সেখান থেকে এসে তিনি রাজস্থান ক্রিকেটের মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে পা রাখেন, আইপিএলের জন্ম দেন। তিনটি মরশুম এর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাঁকে।  

৯০-এর দশকের মাঝামাঝি, ললিত মোদী এনবিএ-র আদলে ভারতীয় শহরগুলির উপর ভিত্তি করে একটি টুর্নামেন্ট শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন।  ললিত মোদী ডিজনিকে এতে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিসিসিআই তা পছন্দ করেনি। সেই সময় সমস্ত ক্ষমতা জগমোহন ডালমিয়ার হাতে ছিল এবং ললিত মোদীর এই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। ললিত মোদি বুঝেছিলেন জগমোহন ডালমিয়া ও তাঁর দলকে ছাড়া তিনি বেশিদূর যেতে পারবেন না। এই কথা মাথায় রেখেই কাজ শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে, ললিত মোদী হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে ১২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। ছোট সংস্থার জন্য এটি একটি বিশাল পরিমাণের টাকা। সেই সময়ে ধর্মশালা স্টেডিয়ামও ছিল না এবং এই রাজ্য কোনও বড় টুর্নামেন্ট জেতেনি। সেখানে সরকার বিজেপির হলেও ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে শুধু কংগ্রেস নেতাদের কথাই চলত। হামিরপুরের জেলা সভাপতি রাজিন্দর জার এবং আরেক কংগ্রেস নেতা রঘুবীর ঠাকুরের কথাতেই সংস্থা চলত। আর সেই সঙ্গে ছিলেন রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতিতে মগ্ন মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমালের ছেলে অনুরাগ সিং ঠাকুর।

Advertisement

ললিত মোদী বুঝতে শুরু করেছিলেন যে তাঁকে এই রাজ্যে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। সবচেয়ে বড় বাধা হতে চলেছেন অনুরাগ ঠাকুর। তাই রাজস্থানের দিকে নজর দেন তিনি। রাজস্থান ক্রিকেটে আবার ক্রিকেটে কিষাণ রুংতা ও কিশোর রুংতার আধিপত্য ছিল। এই রাজ্যের ক্রিকেট কয়েক দশক ধরে এই পরিবারের নির্দেশ মেনে চলেছিল। এর পাশাপাশি রুংটা ভাই দু'জনেই জগমোহন ডালমিয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই ললিত মোদি জানতেন তাদের বের করে দিতে না পারলে তাঁর কাজ হবে না। আর সেটাই করেছিলেন তিনি। তবে এটা একেবারেই সহজ বিষয় ছিল না। আর তাই তিনি সিন্ধিয়া পরিবারের সাহায্য নেন। মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া তাঁকে রুংতা ভাইদের উৎখাতের দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বোরিয়া মজুমদারের বই
বোরিয়া মজুমদারের বই

 

ললিত মোদী এবং সিন্ধিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠতা কারও কাছ থেকে গোপন ছিল না। কথিত আছে, ললিত যখনই জয়পুরে থাকতেন, বিলাসবহুল হোটেল রামবাগ প্যালেসের দামি কক্ষে থাকতেন। ললিত মোদীকে রাজস্থানের 'সুপার সিএম' বলা হয়। তাঁর এই উচ্চতায় পৌঁছানোর পেছনে বিনা কিলাচাঁদের অনেক হাত ছিল। বিনা এবং বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যখন বিনা এবং বসুন্ধরা রাজের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল দেখা দেয়, তখন ললিত মোদি এর সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে তিনি কয়েক ধাপ উপরে উঠেছিলেন। আর এভাবেই রাজনৈতিক মহলে নিজের ছাপ ফেলতে শুরু করেছিলেন ললিত মোদী।

সাংবিধানিকভাবে, ২০০৪ সালে রাজ্যে একটি বড় পরিবর্তন ঘটেছিল। সরকার তখন রাজস্থান ক্রীড়া আইন নিয়ে এসেছে। আর এখান থেকেই বদলে গেল পুরো খেলা। এই আইন কার্যকর হওয়ার পর জেলাগুলোতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ৩২টি জেলায় ভোট নেওয়া হয়। যার ভিত্তিতে রাজ্যের ক্রিকেট কে শাসন করবে তা ঠিক হয়। রুংতা ভাইরা নিশ্চিত ছিলেন যে প্রচুর মানুষ তাদের ভোট দেবেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার এটাই ছিল সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু রাজস্থান স্পোর্টস অ্যাক্ট ললিত মোদীর জন্য পথ তৈরি করেছিল। 

বেশিরভাগ জেলা রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এবং সিন্ধিয়া-মোদীর হাতকে আরও শক্ত করেছে। এখান থেকেই ললিত মোদীর যাত্রা শুরু হয় যা ডালমিয়াকে ক্রিকেট প্রশাসন থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখিয়েছিল।  ললিত মোদী ডালমিয়া বিরোধী সকলকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। ললিত মোদী এবং শশাঙ্ক মনোহর একত্রিত হন এবং উভয়েই শরদ পাওয়ারের নির্বাচনী ব্যবস্থাপক হন। ২০০৪ সালে, জগমোহন ডালমিয়া, শারদ পাওয়ারের বিরুদ্ধে মাত্র এক ভোটে জিতে যান। ২০০৫ সালে,  শরদ পাওয়ার, শশাঙ্ক মনোহর এবং ললিত মোদীর দল জগমোহনকে সরিয়ে দেন।  

ক্রিকেট ও রাজনৈতিক মাঠে ললিত মোদি যত দ্রুত উপরে উঠেছিলেন ততই দ্রুত তাঁর পতন হয়েছে। ললিত মোদী ২০০৮ সালে আইপিএল চালু করেছিলেন। তিনি অনেক বড় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। এদিকে, ২০০৮ সালে রাজস্থানে কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়েছিল বিজেপি। ২০০৯ সালে রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে, ললিত মোদী, সঞ্জয় দীক্ষিতের কাছে ১৯-১৩ ভোটে পরাজিত হন। ২০১০ সালে ললিত মোদিকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে চতুর্থ T20 ম্যাচেই হয়তো টিমে ডি'কক

আরও পড়ুন: ব্য়র্থ আবেশ, রাজকোটেই টিম ইন্ডিয়ায় অভিষেক উমরানের?
 

ললিত মোদী সম্পর্কে এই বিষয়গুলি সম্প্রতি প্রকাশিত বই ম্যাভেরিক কমিশনার: দ্য আইপিএল-ললিত মোদি সাগা-তে পাওয়া যায়।  ক্রীড়া সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদারের লেখা বইটি প্রকাশ করেছেন সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। 

Advertisement

POST A COMMENT
Advertisement