কনফেডারেশন অফ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারস' অ্যাসোসিয়েশনস অফ ইন্ডিয়া (CREDAI) ভারতে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব নির্ধারণের জন্য ২২ মে এবং ৩ জুন, ২০২১ সালের উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে একটি সমীক্ষা চালায়, যার ফলাফল সদ্য প্রকাশিত হয়েছে।
স্তরবদ্ধ নমুনা পদ্ধতিতে, গবেষণামূলক সমীক্ষা দ্বারা ২১৭টি শহর থেকে ৪৮১৩ জন ডেভেলপার প্রথমবার এই রকম কোনও সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে, যা শিল্পের অনুভূতির উপর গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি এবং রিয়েল এস্টেট সেক্টরের দ্বারা চ্যালেঞ্জগুলির পরিসীমা সামনে এনে দিয়েছে।
সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, সরকার এবং RBI কর্তৃক জরুরী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ৯৫ শতাংশের বেশি ডেভেলপারের প্রকল্প অনিবার্য বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিলম্বগুলিকে বিভিন্ন কারণের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, ৯২ শতাংশ ডেভেলপাররা সাইটে শ্রমিকের ঘাটতি অনুভব করছেন, ৮৩ শতাংশ ডেভেলপাররা অর্ধেকেরও কম কর্মী নিয়ে কাজ করছেন, এবং ৮২ শতাংশের বেশি ডেভেলপাররা প্রকল্পের অনুমোদনের বিলম্বের মুখোমুখি হয়েছেন।
CREDAI-এর সভাপতি, হর্ষ বর্ধন পাতোডিয়া এই রিপোর্টের সম্বন্ধে বলেন, “রিয়েল এস্টেট সেক্টর প্রথম ঢেউ এর পর সামান্য ত্রাণ ব্যবস্থা সত্ত্বেও, সতর্কতার সাথে পুনরুদ্ধারের পথে ফিরতে দারুণ চেষ্টা করেছিল। তবে, দ্বিতীয় ঢেউ আমাদেরকে শিল্পের উন্নতির পথকে প্রতিফলিত ও পুনরায় মূল্যায়ন করতে উত্সাহিত করেছে এবং আমরা অনুভব করেছি যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে গ্রাহক এবং শিল্প অংশীদারদের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে রিয়েল এস্টেটকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।”
আরও ব্যপার হল স্টিল, সিমেন্ট ইত্যাদি সামগ্রীতে সাম্প্রতিক দাম বাড়ার ফলে ৮৮ শতাংশেরও বেশি ডেভেলপারদের নির্মাণ ব্যয় ১০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং টাকা লেন-দেনের সংকট এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ৭৭ শতাংশের ডেভলপাররা বর্তমান ঋণ শোধ করতে পারছেন না। ৮৫ শতাংশের ডেভেলপাররা পরিকল্পিত উপায়ে প্রাপ্য টাকা আদায় করতে পারছেন না এবং ৬৯ শতাংশ গ্রাহক গৃহ ঋণ শোধ না করতে পারার ফলে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা কর্তৃক সমীক্ষা গ্রাহকদের আচরণের পরিবর্তনের উপর আলোকপাত করেছে। দেখা গিয়েছে নতুন বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য অনুসন্ধান এবং সাইট ভিজিট চাহিদা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ ডেভেলপার নতুন আগ্রহী গ্রাহক পেতে ব্যার্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এবং ৪২ শতাংশ ডেভেলপারকে তাঁদের গ্রাহকরা শেষ মুহূর্তে ‘না’ বলে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ৯৫ শতাংশ গ্রাহক তাঁদের নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন।
CREDAI এর কোভিড ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস ফলাফল সম্ভবতঃ ভারতের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বাসযোগ্য রিয়েল এস্টেট সমীক্ষা। কেননা এটি সরাসরি দেশের ডেভেলপারদের কাছ থেকে এসেছে এবং বাস্তবকে তুলে ধরছে। এই ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস ফলাফলটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সমস্ত সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের কাছেও পাঠানো হবে।
CREDAI আরও মনে করে যে, নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় হ্রাস করা, প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সহজে ছাড়পত্র পাওয়া ও কাজ শুরু করা এবং সমস্ত সেক্টরের জন্য ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট প্রদান ব্যবসায়ের পক্ষে ভালো হবে। রিয়েল এসেস্ট ভারতের GDP-এর ৬-৭% ধরে রাখে এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের উৎস যা দেশের ২৭০টিরও বেশি আনুষঙ্গিক শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যবসার অগ্রগতির মূল কারণ। তাই CREDAI মনে করে যে, পর্যাপ্ত পরিকল্পনার সমর্থন পেলে রিয়েল এস্টেট ভারতের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য সহায়ক হতে পারে।