scorecardresearch
 

১ পয়সা ভাড়া বৃদ্ধিতে লাগাতার আন্দোলন, বাংলার ট্রাম ও রাজনৈতিক পালাবদলের ইতিহাস!

ট্রামের ইতিহাস প্রথম বড় পরিবর্তন এসেছিল ১৯৬৭ সালে। দীর্ঘ আন্দোলন পেরিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানিকে সরিয়ে ট্রামের জাতীয়করণ করা হয় সে বছরই। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন CPI নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

Advertisement
পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়।
হাইলাইটস
  • কলকাতায় ট্রামের ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের।
  • ট্রামের ইতিহাস প্রথম বড় পরিবর্তন এসেছিল ১৯৬৭ সালে।
  • এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন CPI নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

কলকাতার মানচিত্রের মোটামুটি ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ জুড়ে ট্রামের লাইন পাতা রয়েছে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে কলকাতায় ট্রামের ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের। এই শহরের পরিবহণ ঐতিহ্যের অন্যতম হল এই ট্রাম। শহরের এই ঐতিহ্যের যানকে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে ট্রামে বাতানুকুল কোচ, ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধা-সহ একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে ট্রামের ইতিহাস প্রথম বড় পরিবর্তন এসেছিল ১৯৬৭ সালে। দীর্ঘ আন্দোলন পেরিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানিকে সরিয়ে ট্রামের জাতীয়করণ করা হয় সে বছরই।

স্বাধীনতার আগেই ট্রামের রুট চেনাতে কলকাতায় চালু ছিল ‘কালার কোড’!

কলকাতার পরিবহণ ইতিহাসের অন্যতম সংগ্রাহক সৌভিক মুখোপাধ্যায় জানান, ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও ব্রিটিশ কোম্পানির দায়িত্বেই ছিল দেশের ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত লন্ডন থেকে ট্রামের কোচ তৈরি করে আনা হতো কলকাতার জন্য। কিন্তু ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীন কলকাতা ট্রাম কোম্পানির ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বাংলায় নতুন আন্দোলন দাবানলের মতো হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ওই আন্দোলনের বহুমুখী চাপে শেষে ব্রিটিশ কোম্পানিকে কলকাতার ট্রামের দায়িত্বভার ছাড়তে হয়।

ট্রামের ঐতিহ্যের রং CTC Grey এবার হারিয়ে যাবে নতুন রঙের বাহারে

১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীন কলকাতা ট্রাম কোম্পানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রামের সেকেন্ড ক্লাসের টিকিটের ভাড়া ১ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৩ সালের জুন মাসে কলকাতা ট্রামওয়েজ কোম্পানির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেকেন্ড ক্লাসের ভাড়া জুলাই থেকে ১ পয়সা বাড়বে। সে সময় কলকাতার সমাজতান্ত্রিক ঘরানার দল CPI (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া) এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আন্দোলনের ডাক দেয়। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক জোট হয় বাংলার বামপন্থী সব দল। ট্রাম-বাসের ভাড়া বৃদ্ধি বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গড়ে তোলা হয় 'প্রতিরোধ কমিটি'। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন CPI নেতা ও পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (প্রাক্তন) জ্যোতি বসু এবং ফরোওয়ার্ড ব্লকের নেতা হেমন্ত বসু।

Advertisement
History of Kolkata Tram

যখন ট্রামের ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বামপন্থীদের আন্দোলন জোরাল হচ্ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। ওই আন্দোলন ও বিক্ষোভকে দমন করতে তৎকালীন রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যপক ধরপাকড় শুরু হয়। জ্যোতি বসু, হেমন্ত বসু-সহ প্রায় ৬০০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। 

Jyoti Basu, Bidhan Chandra Roy

১৪৪ ধারা ভাঙতে ১৯৫৩ সালের জুলাইতে কলকাতা ময়দানে সমাবেশ ডাকা হয়। এই সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। আন্দোলনকামী সাধারণ মানুষ তো বটেই, এই সমাবেশে সাংবাদিকদের উপরেও চড়াও হয় পুলিশের একাংশ। ওই ঘটনায় গুরুতর জখম হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

Bidhan Chandra Roy

এই সমাবেশে সাধারণ মানুষ এবং সাংবাদিকদের উপর পুলিশি আক্রমণের ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর পরই তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার তড়িঘড়ি সকলকেই ছেড়ে দেয়, তুলে নেওয়া হয় ১৪৪ ধারাও। ট্রামের ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটিও গঠিত হয়।

Jyoti Basu

তবে এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীন কলকাতা ট্রাম কোম্পানি আর ভাড়া বাড়াতে পারেনি। ট্রামের এক পয়সা ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। ১৯৬৭ সালে ব্রিটিশ কোম্পানিকে সরিয়ে ট্রামের জাতীয়করণ করা হয় এবং উন্নয়নের একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময়েই শহরের সমস্ত ট্রাম বিশেষ ধূসর রঙে রং করা হয়। এই বিশেষ ধূসর রঙের নামই CTC Grey। কলকাতার ট্রামের ইতিহাসের সঙ্গে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেগে থাকা CTC Grey রঙের সৃষ্টি হয় এই সময়েই। এই সময়েই বাংলা পেয়েছিল নতুন এক বলিষ্ঠ নেতাকে যাঁর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের সরকার পরিচালিত হয়েছিল দুই দশকেরও বেশি সময়।


 

Advertisement