বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সবাই। তবে এখন শিগগিরই বিপজ্জনক ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তি পেতে চলেছে মানুষ। আসলে, বিজ্ঞানীরা এমন একটি 'বিশেষ মশা' তৈরি করেছেন যা ডেঙ্গি ছড়ানো মশাকে নির্মূল করবে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এমন বিশেষ স্ত্রী মশা (মশকি) তৈরি করেছে। এদের লার্ভা থেকে জন্ম নেওয়া মশার শরীরে ভাইরাস থাকবে না।
ICMR-VCRC-এর ডিরেক্টর ডঃ অশ্বিনী কুমার সংবাদ সংস্থা ANI-কে জানিয়েছেন যে, বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ ধরনের মশা তৈরি করেছেন যা ধীরে ধীরে ডেঙ্গি এবং চিকুনগুনিয়া দূর করবে।
ICMR-VCRC-এর ডিরেক্টর বলেন, 'আমরা এমন স্ত্রী মশা ছেড়ে দেব যা পুরুষ মশার সংস্পর্শে এসে এমন লার্ভা তৈরি করবে, যাতে এই ভাইরাস থাকবে না। আমরা মশা ও ডিম প্রস্তুত করে রেখেছি এবং যে কোনো সময় এগুলো ছেড়ে দিতে পারি।
ICMR-VCRC-এর গবেষকরা এডিস অ্যাপটিসের দুটি নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন করেছেন। গবেষকদের আশা, এই দুটি প্রজাতিই ডেঙ্গি নির্মূল করবে। অন্তত পরীক্ষাগারে গবেষণায় তেমনটাই প্রমাণ মিলেছে।
এই বছর ভারত সরকার ডেঙ্গি মোকাবেলায় DNDI ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের (Drugs for Neglected Diseases Initiative) সঙ্গে চুক্তি করেছে৷ বর্তমানে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই করার কোনও ওষুধ নেই৷
ভারতে বর্ষাকালে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে জ্বর, শরীরে অস্থিরতা, বমি ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। রোগীদের রক্তের প্লেটলেট দ্রুত কমতে শুরু করে।
ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ায় কখনও কখনও রোগীর অভ্যন্তরীণ রক্তপাত শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অবশেষে রোগীর মৃত্যুও হয়।
উত্তর ভারতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি। এ বছর দেশের রাজধানী দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির ১৫০টি কেস নথিভূক্ত হয়েছে। দিল্লিতে জানুয়ারিতে ২৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৬টি, মার্চে ২২টি, এপ্রিলে ২০টি এবং মে মাসে ৩০টি ডেঙ্গির নতুন কেস সামনে এসেছে। ১১ জুন পর্যন্ত ১৫টি মামলা রিপোর্ট করা হয়েছে।
প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে যে, উপসর্গ বদলে আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে ডেঙ্গি।
উপসর্গ বদলে যাওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রাণহানীর ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। ICMR-VCRC-এর গবেষকদের এই গবেষণা আর প্রচেষ্টা সফল হলে আগামী দিনে ধীরে ধীরে ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের উপর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে।