প্রায় একশো বছর আগে পেরুতে একটি যুবকের মৃতদেহ পুঁতে ফেলা হয়েছিল। কবর দেওয়া ওই ব্যক্তিকে মানুষ মমি বলে দাবি করেছেন। তার দেহ বিশেষ পদ্ধতির কাপড় জড়িয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর তার মুখের উপর রেখে তা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পা বাঁধা ছিল এ রকম দেখে মনে করা হচ্ছে যে ওই ব্যক্তিকে বসা অবস্থায় বেঁধে ফেলা হয়। ওই মমি ইন্ডিয়ান মাউন্টেন এলাকায় পাওয়া গিয়েছে।
এই মমিটি প্রায় হাজার বছর ধরে ওই একই জায়গায় পড়েছিল। এই বছর শুরুর দিকে এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সাইন মার্কোসের তরফে এই অনুসন্ধান চালিয়েছিল। ইয়োমিরা সিলভিয়া হওয়ামেন এবং পিয়েটার ডালমেন ছিলেন খোঁজের দায়িত্বে এবং পুরনো মৃতদেহটি খুঁজে বের করেন। দুজনে মিলে গুহার ভেতরে ঢুকে মমি দেখতে পান এবং তারা অবাক হয়ে যান। কারণ এর পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল ছিল এবং একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। পেরুর এই এলাকায় মমির পাওয়া যাওয়া একটা বড় ইতিহাসের পথ খুলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইয়ামিরা সিলভিয়া জানিয়েছেন, যে মমি পাওয়া যাওয়ার পর আমাদের পুরো দল অত্যন্ত খুশি। কারণ আমরা ইতিহাসের এই নতুন খোঁজ তুলে ধরতে পারব বলে আশা করছি। আমরা এতো ভালো একটা ইতিহাসের পাতা জোগাড় করতে পারব তা আশা করিনি। এখন আরও কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদ গহবর এবং চারদিকে আরও অন্য মমি পাওয়া যায় কি না তা নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছেন। মমি না পাওয়া গেলেও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কিছু পাওয়া যেতে পারে বলে তারা আশা করছেন এবং যদি ওই ধরনের আরও দেহ এখানে সমাধিস্থ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা পাওয়া যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ইয়ামিরা জানিয়েছেন এটা যে সময়ের মমি, ওই সময়ে ইনকা সভ্যতা শুরু হচ্ছে। এই মমি আজ থেকে আমরা হিস্পানিক সময়ে ইতিহাস সংস্কৃতি এবং পরম্পরা জানতে পেরেছি এবং জানতে পারব মনে করা হচ্ছে। যে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন তখনই হয়েছিল, যখন স্পেনীয়রা ষোড়শ শতাব্দীতে হামলা করে।
আর্কিওলজিস্ট এখনও পর্যন্ত এটুকুই তথ্য জোগাড় করতে পেরেছেন যে এটি একটি পুরনো প্রায় হাজার বছরের কাছাকাছি সময়ের মমি। মোটামুটি ১০০ বছর পুরনো বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটি পুরুষ না মহিলা মৃতদেহ তা এখনও পর্যন্ত তারা ঠাহর করতে পারেননি। কিন্তু যখন এই মানুষটি মারা গিয়েছিলেন তখন তার বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ইয়ামিরা জানিয়েছেন যে, আমরা রেডিও কার্বন ডেটিং এর সাহায্যে এর বিষয়ে আরও সঠিক তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি।
ইয়ামিরা জানিয়েছেন যে মমিটি যে এলাকা বা কসবায় পাওয়া গিয়েছে, তা একটি ডিম্বাকার গুহার মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। এটি লিমা শহরের সীমায় অবস্থিত। গোটা শহর মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এক সময়ে এটি পেরুর সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল। এ বিষয়ে বেশি জানা যায়নি। সমুদ্রতীরের পাশে এই pre-historic স্থান অধ্যায়ন করা উচিত।
মনে করা হচ্ছে যে এই গুম্ফা গহ্বরে মেলা মমির পিছনে যে ব্যক্তি ছিলেন, তিনি কোনও ব্যবসায়ী ছিলেন। যিনি পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে শহরে গিয়ে থাকবেন।আকার এবং পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে যে তিনি কোন মহত্বপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে থাকবেন। কারণ এটি কসবার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। যার চারিদিকে বড় একটা খাঁচার মতো তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ ওই সময় তাকে সম্মান করা হতো।
পেরুর ঐতিহাসিক দস্তাবেজে এ বিষয়ে জানা গিয়েছে যে, ইনকা সাম্রাজ্যের সময়ে তাদের বড় নেতা, মহত্বপূর্ণ লোকেদের মমি বানানো হতো। তাকে বিশেষ পদ্ধতিতে অন্তিম সংস্কার এবং সমাধিস্থ করা হতো। বিশেষ ব্যক্তিত্বদের মমি বানিয়ে এ কারণে রাখা হতো, যাতে তাদের আত্মা তাদের মধ্যে থেকে তাদের সুরক্ষা প্রদান করেন, অথবা ঘরে যদি নতুন কোনও সদ্যোজাত জন্ম নেয়, তার মাধ্যমে তারা ফিরে আসতে পারে।