দীপাবলীর আগে বালাসন সেতু ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। দু'ধারে থাকা মৃৎশিল্পীরা আজ চরম অসহায় রয়েছে। সারা বছর ধরে দীপাবলীর এই সময়টা অপেক্ষা করে থাকলেও মৃৎশিল্পীরা আজ দীপাবলীর সময় ক্ষতির মুখে। শুধু তাই নয় এই ব্যবসার ওপর ওই মৃৎশিল্পীদের সংসার হলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
আধুনিকতার যুগে দীপাবলিতে টুনি লাইটের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে এমনিতেই অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে মাটির প্রদীপ। বর্তমানে শুধুমাত্র রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য মেনে দীপাবলিতে মাটির প্রদীপ জ্বালায় শহরবাসী। যার জেরে আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে বিক্রি।
তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রদীপের নকশায় পরিবর্তন করায় বর্তমানে প্রদীপের বাজার কিছুটা থাকলেও দীপাবলীর আগে বাড়তি আয় হয়। নিত্য নতুন ডিজাইনের প্রদীপের বিক্রি করে।
কিন্তু চলতি বছর একটানা বৃষ্টি, মাটিগাড়ার মৃৎশিল্পীদের দীপাবলির আগে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ করে নিয়েছে। প্রসঙ্গত গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বালাসন সেতু। একটি পিলার বসে যাওয়ায় দুর্ঘটনার আসংখ্যায় পুলিশের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয় ভারী যানচলাচল।
শুক্রবার থেকে সেতুর মেরামতের কাজ শুরু হওয়ায় সমস্ত রকম যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে স্থানীয় কিছু মানুষ টোটো অটো চেপে বালাসন নদীর এপারে নেমে হেঁটে ভাঙা সেতু পার হয়ে অন্য পাড়ে থেকে আবার টোটোতে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
কিন্তু তাতে এখানকার মৃৎশিল্পীদের কোনও লাভ হচ্ছে না। কারন সেতু দিয়ে যানচলাচল বন্ধ হওয়ায় অনেকে চাইলেও ওই পথে যেতে চাইছে না। তবে যেতে হলে প্রায় ১০ কিমি ঘুরে যেতে হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে ওই পথ ধরছে না শহরবাসী।
স্থানীয় মৃৎশিল্পী উত্তম চৌধুরী বলেন, মাটির নানা ধরনের টব, চায়ের গ্লাস, গৃহসজ্জার আকর্ষণীয় সামগ্রী দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করেন তিনি। তার তৈরি জিনিস কোচবিহার জেলা জুড়ে এবং অসমের কিছুটা অংশে যায়। আগে দিনে ২৫থেকে ৩০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হতো। কিন্তু সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে কেউ আর ঘুরপথে আমার এখানে জিনিস কিনতে আসছে না। ফলে এখন দিনে হাজার টাকার জিনিসও বিক্রি হচ্ছে না।
আর এক শিল্পী মাধাই পালেরও একই বক্তব্য। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে এই রাস্তার ধারে মাটির টব, প্রদীপ সহ নানা ধরনের গৃহসজ্জার আকর্ষনীয় সামগ্রী বিক্রি করছি। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দীপাবলির প্রদীপের ধরন ও নকশাতেও আমরা পরিবর্তন এনেছি। প্রত্যেক বছর এই সময় দীপাবলীর প্রদীপ কেনার জন্য এখানে প্রতিটি দোকানে মানুষের ভিড় জমে যেত। কিন্তু এবার সেতু ভেঙে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ। ঘুর পথে কেউ আর সেভাবে এখানে আসছেন না।
প্রশাসনের তরফে অস্থায়ী সমাধানের জন্য বেইলি ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়ক বিভাগ জানিয়েছে ৩০ নভেম্বরের আগে এই বেইলী ব্রীজে যান চলাচল চালু করা সম্ভব নয়। আর তা চালু হলেও সেখান দিয়ে ভারী কোনও যানবাহন চলবে না। সব মিলিয়ে চলতি দীপাবলিতে মাটিগাড়া এলাকায় মৃৎ শিল্পীদের ঘরেই অন্ধকার।