বক্সার জঙ্গলে দেখা মিলছে রংবেরঙের হরেক পাখির ঝাঁক। পাখির কলতানে মুগ্ধ জঙ্গলের নীরব পরিবেশ।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের লকডাউনে উত্তরবঙ্গের দূষনমুক্ত জঙ্গলের পরিবেশে ঝাঁকে, ঝাঁকে দেখা মিলেছিল বেশ কয়েক প্রজাতির বিরল পাখি।
যদিও লকডাউন শিথিল হতেই ফের জঙ্গলের পরিবেশে অবাধে চলতে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন। ফের দূষণ ছড়াতে থাকে জঙ্গলের পরিবেশে।ধিরে ধিরে জঙ্গল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বিরল প্রজাতির পাখিদের দল।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফের লকডাউন লাগু হয়েছে রাজ্যে। জঙ্গলের পথে বন্ধ হয়েছে সমস্ত রকমের যানবাহন চলাচল।
আলিপুরদুয়ার জেলার জঙ্গলের পরিবেশে এই সময়ে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জঙ্গল এলাকায় গাড়ির চলাচলের সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমে গেছে।
বক্সার জঙ্গলে গত দশ বছর ধরে পাখিদের পর্যবেক্ষণ করে আসছেন অম্লান জ্যোতি ঘোষ এবং কৌশিক সেন। অম্লান জ্যোতি ঘোষ বলেন, নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পাখিদের প্রজননের সময়।
তবে এই সময়ে জঙ্গলে পর্যটক থাকায় এতদিন পাখিদের পরিবেশ খানিকটা নষ্ট হতো। তবে লকডাউনের জেরে এখন পরিবেশ দূষণমুক্ত। স্ত্রী পাখিরা জঙ্গলের ধারে কাছেই বাসা বাঁধছে এবং ডিম পাড়ছে।
আলিপুরদুয়ার জেলার রাজাভাতখাওয়া, সিকিয়াঝোড়া, গদাধর, রায়মাটাং, ডিমা, সমস্ত জায়গাতেই এখন বিরল পাখিদের অবাধ বিচরণ।
কৌশিক সেন বলেন, সম্প্রতি জয়ন্তীতে Rufous Horn bill দেখা গেছে। এছাড়াও বেশ কিছু বিরল প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে বক্সা, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে।
লকডাউনের জেরে দূষনমুক্ত জঙ্গলের পরিবেশে স্কারলেট ব্যাক জর্ডন ভাজা, এশিয়ান ব্যারেড ওউলেট, সুলতান টিট, ওরিয়েন্টাল হানি বুজার্ড এর মতো পাখি এখন অহরহ দেখা মিলছে।
আগামী জুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে তিন মাসের জন্য জঙ্গল বন্ধ হয়ে যাবে। একে লকডাউন অন্য দিকে বর্ষার মরশুমে টানা তিনমাস জঙ্গল বন্ধ থাকার কারণে জঙ্গলের পরিবেশ আরো দূষনমুক্ত হয়ে উঠবে।
এর ফলে জঙ্গলে আরো নানা প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে বলে আশাবাদী পাখিপ্রেমীরা। সেই আশাতেই একদল পাখিপ্রেমী রোজ ঢুঁ মারছেন জঙ্গলের গভীরে।
বন দফতরও জানে, এদের তরফে বন্যপ্রাণের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই তাঁদের জন্য ছাড় রয়েছে বারোমাস।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁরাও নানা রকম ভালো ছবি তুলে আনেন। যা বন দফতরের পাশাপাশি পাখিপ্রেমীদেরও আর্কাইভ সমৃদ্ধ করে।
গত বছর অনেক দুষ্প্রাপ্য পাখি এসেছিল। অসম এলাকায় কাজিরাঙা বা মানস বনাঞ্চলের কিছু পাখিও এবার দেখা গিয়েছে এই এলাকায়।
এত রকম পাখির সমাহার যে শুধুমাত্র পাখি দেখতেই এ জঙ্গলে পারি দেওয়া যায় বলে মনে করেন পাখিপ্রেমী ও বিশারদরা।