আরও একটা জন্মদিনের আয়োজন করা হচ্ছিল। তার এক মাস আগেই জীবনাবসান হলো খোঁড়া বাদশা ওরফে রাজার। ভারতের সবচেয়ে পুরনো বন্দি বাঘ ছিল রাজা।
আলিপুরদুয়ারের দক্ষিণ খয়েরবাড়ি বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রে সে ছিল রাজকীয় স্টাইলেই। সেভাবেই সোমবার ১১ জুলাই মারা যাবেন তাঁরা। বন দফতর সূত্রে খবর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর। খয়েরবাড়িতে শোকের ছায়া।
গত বছরই ২৫ এ পা দিয়েছিল রাজা। বন দফতরের পক্ষ থেকে ধুমধাম করে পালন করা হয়েছিল রাজার ২৫ তম জন্মদিন। শেষ ১৫ বছর থেকে রাজা খয়েরবাড়িতেই ছিল।
আসলে রাজা সুন্দরবনের পুরুষ কেঁদো বাঘ। কিন্তু ২০০৮ সালে সুন্দরবনের মাতলা নদী পার করার সময় পিছনের বাঁ দিকের পা খুবলে খেয়ে নিয়েছিল কুমির।
সেই সময় থেকেই রয়েছে জলদাপাড়া বন বিভাগের দক্ষিণ খয়েরবাড়ির বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বেশ কয়েকমাস চিকিৎসার পর রাজা ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে ওই পা স্বাভাবিক করা যায়নি। তার পর থেকেই তার নাম দেওয়া হয় খোঁড়া বাদশা।
আজ সোমবার সেই রাজাই বয়সের ভারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সেই সঙ্গে খয়েরবাড়ি বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রে আপাতত আর কোনও রয়্যাল বেঙ্গল থাকলো না।
এ দিন দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন জলদাপাড়া ডিএফও দীপক এম, আলিপুরদুয়ার জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা।
বাঘের আয়ু সাধারণত ১৮-২০ বছর। তবে সুন্দরবনের রাজা সময়ের চেয়ে বেশি বেঁচেছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মনীদের যত্নে রাজা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০০৮ সালে রাজা-কে যখন দক্ষিণ খয়েরবাড়ি বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ১১ বছর।
কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁ দিকের পা চলে যাওয়ার পরেও থেকে গিয়েছিল ১০টি ক্ষত। যা জলদাপাড়ার পশু চিকিৎসক ও তার টিম মিলে সারিয়ে তোলেন। মেজাজের দিক থেকেও রাজা ছিল রয়্যাল। তার চাহনি, লোহার গারদ কাঁপা গর্জন ঘুম কেড়ে নিত বনকর্মীদের।
লোহার গারদের সামনে লোকজন খুব একটা পছন্দ করত না রাজা বলে জানা গিয়েছে। নিরিবিলি না থাকলেই খেপে যেত সে। রাজাপ্রতিদিন দশ কেজি মাংস খেত। জলের সঙ্গে গ্লুকোজ, ওআরএস মিশিয়ে দেওয়া হত রাজাকে। স্নান না সারলে রাজা ঘুমতো না।
২৩ অগাস্ট রাজার জন্মদিন। গতবারও ধুমধাম করে রজতজয়ন্তী পালন করা হয়েছে রাজার। কেক, বেলুন, মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল রাজার এনক্লোজার। কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়েছিল।