ডেঙ্গুর প্রকোপ আলিপুরদুয়ারে, আতঙ্ক স্বাস্থ্য় বিভাগে

একে করোনায় রক্ষে নেই দোসর হয়েছে ডেঙ্গু। আলিপুরদুয়ার জেলায় করোনার সাথেই লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকাতে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। জেলার কালচিনি ব্লকে নতুন করে আরও চার জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। করোনার সঙ্গে জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পুজোর আগে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তর ও সাধারণ মানুষ।
 

ডেঙ্গুর মোকাবিলায় জেলাশাসক সুরেন্দ্রনাথ মিনার নেতৃত্বে বুধবারই জেলা পর্যায়ের একটি মনিটরিং টিম তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালচিনিতে নতুন করে চার জনকে নিয়ে জেলায় চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। তারমধ্যে শুধু কালচিনি ব্লকেই ৩৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরে উত্তরবঙ্গে ডেঙ্গুতে প্রথম বলি হয়েছিল আলিপুরদুয়ারের কালচিনির গাড়োপাড়া পঞ্চায়েতের শালবাড়ি গ্রামের এক প্রৌঢ়। গত ২২ আগস্ট চেতানুল ঠাকুর(৫০) নামে ওই প্রৌঢ় মারা যান। সেই কালচিনি ব্লকেই নতুন করে ফের আরও  চার জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, কালচিনিতে ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্ত চার জনেরই চিকিৎসা চলছে বাড়িতে রেখে। আক্রান্তদের শরীরের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। 

জেলায় করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। কিন্তু তা সত্বেও করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ ছড়াচ্ছে জেলায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের উপসর্গ থাকাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: গিরিশচন্দ্র বেরা অবশ্য বলেন, কালচিনিতে নতুন করে আরও চার জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। উদ্বেগের কিছু নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলাশাসকের নির্দেশে জেলা পর্যায়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। সর্বত্র সচেতনতা প্রচার চলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের উপসর্গদের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

কালচিনি ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা হিসাবেই পরিচিত। ২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কালচিনিতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল। কালচিনিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটা কেন? স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, প্রতিবেশী ভুটান থেকেই জয়গাঁ দিয়ে গোটা কালচিনি ব্লকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। কালচিনিতে বিশেষ করে জয়গাঁয় প্রচুর মানুষ শুয়োর পালনের সঙ্গে যুক্ত। জয়গাঁয় বাড়ি বাড়ি শুয়োরের খামারও আছে।

ওই সব খামার থেকেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিল। জেলাশাসকের নির্দেশে জমা জল ফেলে দিতে বৃহস্পতিবার থেকে জয়গাঁয় জেডিএ’র কর্মীরাও বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছে। জেডিএ’র এক্সিকিউটিভ অফিসার ভূষণ শেরপা নিজেই কর্মীদের ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য তৈরি জেলা পর্যায়ের মনিটরিং কমিটিতে বিডিও, বিএমওএইচ, পঞ্চায়েতদের সঙ্গে পুরসভা ও জয়গাঁ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি(জেডিএ) কর্তৃপক্ষকেও রাখা হয়েছে।

বাড়ির আনাচে কানাচে জমা জল ফেলে দিতে ও বাড়িঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে স্বাস্থ্যদপ্তরের ভেক্টর কন্ট্রোল ডিজিজ টিমের লোকেরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। তাঁরা এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা নষ্ঠ করার অভিযানেও নেমেছে। জ্বরের উপসর্গ থাকাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।