নগরায়নের দৌড়ে পাল্লা দিতে গিয়ে কংক্রিটের বহুতল নির্মাণ করতে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা। আর এতেই আজ ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে বনভূমি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাখিদের বাসস্থান না থাকায় আজ বহু বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে।
তার ওপর আবার টেকনোলজির দাপট, মোবাইলের রেডিয়েশন ও জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ তো আছেই। একটা সময় ছিল যখন সকালে পাখির কিচির মিচির ডাকে ঘুম ভাঙতো মানুষের। আজ সেই সব প্রায় অতীত। শহরেতো দূরের কথা গ্রামাঞ্চলেও এখন পাখিদের সেই কিচিরমিচির শব্দ আর নেই বললে চলে।
দিনের পর দিন এভাবেই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে শালিক, চড়ুই, বাবুই ,ফিঙ্গে,ঘুঘু সহ নানা প্রজাতির পাখি। তাই এবার পাখিদের বাঁচানোর বার্তা দিয়ে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এক নং গ্রাম পঞ্চায়েতের "আসরা সেবা ট্রাস্ট"।
শুধু উত্তরবঙ্গেই নয়, বলা ভালো উত্তর-পূর্ব ভারতেই এই প্রথমবার প্রায় ৫০০০ পাখিকে একসাথে রাখা, খাওয়ার ও স্নানের ব্যবস্থা করেছে এই ট্রাস্ট। পতিরাম এলাকায় ট্রাস্টে জমিতেই লোহার একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পাখিদের রাখতে প্রায় ২০০০ রংবেরঙের মাটির হাঁঁড়ি ঝোলানো হয়েছে।
পাশাপাশি পাখিরদের বাসস্থানের জন্য আরো ২০০০ কাঠের ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে পাখিদের খাবারের জন্য রয়েছে গম ও চাল । এখানেই শেষ নয় পাখিদের স্নানের জন্য ব্যবস্থা করেছে এই ট্রাস্ট। প্রায় কুড়িটি বড় বড় মাটির পাত্রে জল রাখা হয়েছে যেখানে সহজেই পাখিরা এলে আনন্দ সহকারে স্নান করতে পারবে।
এছাড়াও পাখিরা এসে যাতে কিছুটা সময় নিজেদের মতো করে আনন্দে এখানে কাটাতে পারে, সেজন্য তারা আলাদা করে দোলনার ব্যবস্থা করেছেন পাখিদের জন্য।
অন্যদিকে পাখিরা যেহেতু বনভূমি পছন্দ করে সে জন্যই এই লোহার স্ট্রাকচারের নিচেই গাছপালা লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে বনভূমি তৈরি করার কাজ করছে ট্রাস্ট।
জানা গিয়েছে আপাতত এখানে একসাথে পাঁচ হাজার পাখি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।তবে আগামী দিনে পরিকাঠামা আরো বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে ট্রাস্টের। জানা গিয়েছে প্রতিদিনই এখানে কয়েকশো পাখি রাতে থাকছে।
আসরা সেবা টেস্টের সভাপতি সুভাষ কুম্বট বলেন, কংক্রিটের বড় বড় বিল্ডিং হওয়ায় বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই আজ বহু নানা প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। তাই আমরা ট্রাস্ট করে পাখিদের থাকা, খাওয়া ও স্নানের ব্যবস্থা করেছি। প্রাথমিকভাবে আমাদের এই প্রকল্পে পাঁচ হাজার পাখিকে একসাথে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা চাই পাখিদের স্বাভাবিক প্রজনন হোক। পাখিদের সংখ্যা বাড়ুক।