দার্জিলিংয়ের ভিনটেজ ল্যান্ডরোভার গাড়ি এক একটি যেন বিস্ময়। ৭৫ বছর ধরে রানিং গাড়িগুলি এখন আর আরামদায়ক নয় বটে, কিন্তু অতীতের কুয়াশা গায়ে মাখা এই গাড়িগুলি কত ইতিহাসের সাক্ষী তা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। এই গাড়িগুলি এখন আর কোম্পানি তৈরি করে না, কতবার রূপান্তর হয়ে কোম্পানির আধুনিক গাড়িগুলি বদলে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে। কিন্তু দার্জিলিংয়ের সান্দাকফু যাঁরা গিয়েছেন তাঁরা জানেন, ইতিহাস সেখানে থমকে রয়েছে। যেন টাইম মেশিনে ৭৫ বছর পিছিয়ে যাওয়া।
ইতিহাস আছে, নস্টালজিয়া আছে। অথচ সেটি টিঁকিয়ে রাখতে গেলে যে খরচ,তা মিটিয়ে তাকে আধুনিক পর্যটনের সঙ্গে আর খাপ খাওয়ানো যাচ্ছে না। অনেকেই আর আরামহীন ওইগাড়িগুলো চড়তে চাইছেন না। ফলে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে ল্যান্ড রোভার। তাই এটিকে নতুন করে প্রচারের মুখে আনতে এবার ল্যান্ডরোভার উৎসবের আয়োজন করবে জিটিএ।
এই উৎসবেই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) এবং রাজ্য সরকারের শীর্ষকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অনিত থাপা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "ল্যান্ড রোভার নিয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ল্যান্ড রোভারকে হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি দিলে ভালো হয়। আমরাও এই নিয়ে পদক্ষেপ করব।"
ব্রিটিশ আমলে ১৯৪০ সালে দার্জিলিংয়ে প্রথম এই ল্যান্ড রোভারগুলি আসে। পাহাড়ি অঞ্চল বিশেষ করে বরফ কিংবা,পাথুরে দুর্গম রাস্তাতে খুব সহজেই এই বাহন চলতে পারে। এমনকি প্রায় ৬-৭ কুইন্টাল পণ্য পরিবহণের ক্ষমতাও রয়েছে। তাই এই এলাকায় এটি একসময় জনপ্রিয় ও কার্যক্ষম ছিল।
দীর্ঘদিন ধরেই দুর্গম সান্দাকফু, ফালুটে যাতায়াতের জন্য পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এই ল্যান্ড রোভারের ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হওয়ায় এখন চার চাকার বহু গাড়িই এই পথে অনায়াসে মানেভঞ্জন, ফালুট, সান্দাকফুতে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে ল্যান্ড রোভারের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন আর নেই বললেই চলে। তা ছাড়া এই গাড়িগুলি মান্ধাতার আমলের। ফলে এতে আধুনিক কোনও সুবিধাই নেই।
ল্যান্ড রোভার চালক সংগঠন সিঙ্গালিলা ল্যান্ড রোভার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ৩৫টি ল্যান্ড রোভার চালু রয়েছে। কিন্তু একটা সময় যেভাবে এই গাড়ির ব্যবসা চলত,তা এখন আর নেই। শখের বসে কিছু পর্যটক ল্যান্ড রোভারে চড়লেও বেশিরভাগ পর্যটকই এখন নিজস্ব গাড়িতে সান্দাকফু,ফালুটে পৌঁছে যাচ্ছেন। অনেকে অন্য গাড়ি নিলেও পুরনো গাড়িগুলি নিচ্ছেন না। ফলে এটিকে বাঁচিয়ে রাখা মুশকিল।