করোনা পরিস্থিতিতে রথের জৌলুস ফিকে অনেক জায়গাতেই। তার মধ্যেও নিয়মরক্ষার রথ চলছে বিভিন্ন জায়গায়। অনাড়ম্বর এবং নিরুপদ্রবভাবে।
এবার করোনাকেই হাতিয়ার করে তাক লাগিয়ে দিলেন শিলিগুড়ির একগুচ্ছ কচিকাঁচা। রথের দড়িতে টানও হল সঙ্গে করোনা নিয়ে সামাজিক বার্তা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনও করলেন তাঁরা।
করোনা বিধি নিষেধের কারণে বন্ধ স্কুল, কলেজ। আর তাই বাড়িতে বসে কোভিড সচেতনতার বার্তা দিতে শিলিগুড়ির ভারতনগরের কঁচিকাঁচারা তৈরি করল অভিনব রথ।
রথেই রয়েছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার এবং ইঞ্জেকশন। সেই সঙ্গে শহরবাসীকে এই রথ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিধি মানার আবেদন কচিকাঁচাদের।
রথের আকার বড় নয়, তবে তাতে কী, উদ্যোগের ইচ্ছাটা তো বড়ই। ফলে নিজেদের মতো করে তাঁদের আয়োজন করেছেন রথযাত্রার। যা প্রশংসা কুড়োচ্ছে।
কোভিডকালে জীবন যাপণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। তার উপর রয়েছে সরকারি বিধি নিষেধ। রথযাত্রাতেও তার প্রভাব পড়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে রথ উৎসব। এমন অবস্থায়, ছোটদের উদ্যোগে তৈরি হল এক অভিনব রথ, যার মধ্যে রয়েছে মাস্ক, সানিটাইজার, করোনার ভ্যাকসিনের সিরিঞ্জ এবং শহরবাসীকে সচেতন করার বার্তা।
এই রথটি তৈরি করেছে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী প্রেরণা চৌধুরী, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সায়নী সরকার ও নবম শ্রেণীর ছাত্র অরিত্র সেন শর্মা।
দিন পনেরো আগে তাঁদের মন খারাপ ছিল রথের মেলায় শামিল হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে। তখনই মাথায় আসে এই পরিকল্পনা। যেমন ভাবা তেমনই কাজ।
গত দশ দিন ধরে পরিশ্রম করে তৈরি করা এই রথ সোমবার তিথি মেনে নেমেছে রাস্তায়। রথের গায়ে সাজানো রয়েছে হাতে প্ল্যাকার্ড ধরা উলের পুতুল।
কি বলছে তারা ? তাদের হাতেই লেখা সচেতনতার বার্তা। কোনও পুতুল জানান দেবে মাস্ক পড়ুন। কেউ আবার বলবে অবিলম্বে ভ্যাকসিন নিন।
কেউ আবার সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। দূরত্বল না মানলে কী হবে, তা অবশ্য মুখেই জানিয়ে দিচ্ছে খুদেরা।
অনেকটা অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার মতো তাঁদের রাস্তায় রথ টানতে দেখে যেই পথ আটকাচ্ছে, তাদের শুনে যেতে হচ্ছে কচি কণ্ঠে সাবধানবাণী।
বড়রা মজা পাচ্ছেন, কেউ পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন, সম বয়সীরা রাস্তায় সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রথম প্রয়াসেই সুপারহিট খুদেদের রথ।
একজন অভিভাবকের মতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে, এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর সচেতনতা অনেকটাই প্রয়োজনীয়।
তাই এত ভাল উদ্যোগ যখন বাচ্চারা নিজেরাই বুদ্ধি করে নিয়েছে, তখন তাদের বাধা দেওয়ার কোনও মানে হয় না। ছোটদের এই উদ্যোগে সাহায্য করতে পেরে তিনি খুশি।
সেই সঙ্গে রথের সাজানোতেও ইঞ্জেকশনের রিফিল ব্যবহার করা হয়েছে। যা রথের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বার্তাকে আরও জোরালো করেছে।
এ বছরই প্রথম তারা এই উদ্যোগ নিয়েছে। অভিভাবকদের সমর্থন থাকায় তাদের উৎসাহ আরও বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে সাহসও।
তাই সুযোগ পেলে বা সুযোগ তৈরি করে পরের বছরও এভাবে রথের আয়োজন করতে চায় তারা। তবে এত আয়োজনের পর তাঁরা ঠাকুরের কাছে কি চাইলেন?
এক খুদে জানালো, আমরা হাত জোড় করে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেছি, ঠাকুর করোনা যেন আর না থাকে। এবার যেন বিদায় নেয়।
করোনা চলে গেলে তারাও মেলা বসাতে চায়, তা হোক না ছোট। সবার সামনে দিয়ে রাস্তায় রথ নিয়ে মাসির বাড়ি পাঠাতে চায় তিন ভাইবোনকে।