সিকিমের পর দুয়ার খুলে দিয়েছে নেপাল। অথচ আটকে দার্জিলিং-পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স। পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয়দের দুর্দশা যেন কাটছেই না। ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে। একের পর এক আবেদন-নিবেদন পৌঁছে গিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। তবুও এখনও কোনও রকম সুরাহা মেলেনি। কবে মিলবে, কেউ জানে না। ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করছেন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষ। যাদের বিকল্প কোনও উপায় নেই। তারা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
১ ফেব্রুয়ারি ভাগ্য বদলাবে?
সবাই আশা করছেন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হয়তো কিছুটা ছাড় মিললেও মিলতে পারে। অনেকে ভাবছেন খুলে যাবে সমস্ত পর্যটনকেন্দ্র, সাইটসিইং, ফরেস্ট। যাতে চলতি মরশুমে লাভ না হলেও সদর্থক বার্তা পৌঁছতে পারে গোটা পৃথিবীতে। পাশাপাশি নেপাল শর্ত-সাপেক্ষে খুলে গেলেও দার্জিলিং সহ গোটা তরাই-ডুয়ার্স, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ।
আরও পড়ুন ঃ ঠাণ্ডায় কাঁপছে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং, শুক্রবার ফের তুষারপাতের সম্ভাবনা পাহাড়ে
তুষারাবৃত পাহাড়, পাহাড়তলি
পাহাড়ে বহু বছর পর লাগাতার তুষারপাত হয়ে চলেছে। সান্দাকফু থেকে দার্জিলিং, ঘুম থেকে জোড়বাংলো।বারবার সাদা বরফে ঢেকে যাচ্ছে এলাকা। তার ওপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলে গিয়েছে টয়ট্রেন। ফলে আদতে বাধা কিছু নেই। খোলা রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ সবকিছুই। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় সাইটসিইং বন্ধ। পাশাপাশি জঙ্গল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যা নিয়ে মূলত সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাইট সিইং বন্ধ থাকলে পর্যটকেরা ঘুরতে এসে দেখবেন কী? ফলে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও লাভ হচ্ছে না। পর্যটকরা পাহাড় মুখো হচ্ছেন না। মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছেন সিকিমের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে।
ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে
উত্তরবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্য দেশের পর্যটন পরামর্শদাতা রাজ বসু জানিয়েছেন, ফরেস্ট বন্ধ রাখার মধ্য দিয়ে রাজ্যের তরফে একটা প্রক্রিয়াকে বাধাপ্রাপ্ত করা হয়েছে। বনের রিহ্যাবিলিটেশন প্রক্রিয়ার চলে ট্যুরিজম এর মধ্য দিয়েই। ট্যুরিজম বন্ধ থাকায় বনের এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটেছে বলে মনে করেন রাজবাবু। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, বারবার পর্যটনের ওপর আঘাত নেমে আসায় বহু মানুষ বিপাকে পড়েছেন। আমরা আগেও বলেছি কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটা মানুষের মধ্যে হতাশা গ্রাস করেছে। বহু বছর পর যেভাবে উপর্যুপরি তুষারপাত হচ্ছে তা উপভোগ করার মতো পর্যটক নেই ভেবেই আমাদের হাত কামড়াতে হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে এবং খোলার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আরও পড়ুন ঃ "চাইনা আর গুগল, জুম, আমরা চাই স্কুল রুম", মালদায় ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন এখন
অন্ধকারের পথে উত্তরবঙ্গের পর্যটন
পর্যটন বিশেষজ্ঞ পার্থ গুহ জানিয়েছেন, আমরা আশা করছি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটন সমস্ত দিক খুলে দেওয়া হবে। তা না হলে নর্থ বেঙ্গল ট্যুরিজম সার্কিট অন্ধকারের দিকে ডুবে যেতে থাকবে। অপর এক পর্যটন ব্যবসায়ী তাপস সাধন রায় জানিয়েছেন, পর্যটনের পাশাপাশি এলাকার পুরো মেরুদন্ডটা ভেঙে গিয়েছে। আমরা বারবার সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন জানাচ্ছি। দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে, অন্যথায় উত্তরবঙ্গের পর্যটন মুছে যাবে। অন্যদিকে রমরমিয়ে চলবে নেপাল-ভুটানের পর্যটন। ইস্টার্ন হিমালায়ান ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুরস অপেরাটরস অ্যাসোসিয়েশন এর সম্পাদক দেবাশিস মৈত্র জানিয়েছেন, টয়ট্রেন খুলে গিয়েছে। সার্কিটের অন্যান্য এলাকায় খোলা শুধুমাত্র এ রাজ্যের পর্যটন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমাদের ঘরের মানুষদের এই আশা করছি। দু'চারদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।