স্বভাবে চরম বখাটে, অবাধ্য কুনকি হাতি মৈনাককে উচিত সবক শেখাতে আইসোলেশনে পাঠাল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কর্তারা।অবাধ্য মৈনাকের মেজাজ মর্জি বুঝতে দেশের প্রখ্যাত হস্তিবিশারদ আসামের পার্বতী বড়ুয়ার শরণাপন্ন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। প্রয়োজনে দক্ষিণ ভারতের আরেক প্রখ্যাত হস্তিবিশারদকেও জলদাপাড়া নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে বনকর্তারা।
গত ৫ নভেম্বর মৈনাককে খাবার দেবার সময় আচমকাই মেজাজ হারিয়ে মৈনাক পাতাওয়ালা জগন্নাথ ওঁড়াও-এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই হামলায় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন পাতাওয়ালা জগন্নাথ। মৈনাকের হাত থেকে জগন্নাথের প্রাণ রক্ষা করতে পিলখানার শিবলাল ধারালো অস্ত্র নিয়ে মৈনাকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন । ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই কুনকি হাতির পেছনের দু’পায়ে আঘাত করেন মাহুত। মাহুতের জন্য প্রাণে বেঁচে যান পাতাওয়ালা জগন্নাথবাবু। ওই আঘাতের পরেই বাগে আসে কুনকি মৈনাক।
বনদপ্তর সূত্রে খবর, ওই ঘটনার পর থেকেই পাল্টে গিয়েছে মৈনাক। জখম হওয়ার পর আরও বেশী করে ক্ষিপ্ত ও বদমেজাজী হয়ে উঠেছে মৈনাক। কিছুতেই ওই কুনকির পাশে আর ভিড়তে পারছে না কেউ। চিকিৎসাও হচ্ছে না জখম মৈনাকের পায়ের। তাই যে কোন দুর্ঘটনা এড়াতে আপাতত আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে জলদাপাড়ার ওই কুনকিকে। এবার মৈনাকের মেজাজ মর্জি বুঝতে অসম থেকে আসছেন হস্তিুবশারদ পার্বতী বড়ুয়া। প্রয়োজনে আনা হতে পারে দক্ষিণ ভারতের কোন দক্ষ হস্তিবিশারদকেও। হাতিদের জীবনশৈলি নিয়ে জাতীয় উদ্যানের মাহুত ও পাতাওয়ালাদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর।
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন, হাতিরা যন্ত্র নয়। হাতিদের যতই প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক না কেন কিছু ক্ষেত্রে তো ব্যতিক্রম থেকেই যায়। তার মেজাজ গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আপাতত তাই মৈনাককে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৪ সালে হলং পিলখানার কুনকি মীনাক্ষির গর্ভে জন্ম হয় মৈনাকের। ছোটবেলা থেকে পাতাওয়ালা ও মাহুতদের অত্যন্ত আদরে বেড়ে উঠে মৈনাক। আদরে কিছুটা বখাটে হয়ে উঠে মৈনাক। সুযোগ পেলেই পাতাওয়ালা ও মাহুতের উপরেও মাঝে মাঝে চড়াও হয় সে। তাই আপাতত হলং পিলখানা থেকে সরিয়ে মৈনাককে জলদাপাড়া পূর্ব রেঞ্জের পিলখানায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য বদমেজাজী মৈনাকের ধারে কাছে যেতে পারছেন না বনকর্মীরা। তাই দূর থেকেই বাধ্য হয়ে হাতিটির ক্ষতস্থানে ওষুধ ছিঁটিয়ে দিয়ে চিকিৎসা করছে বনদপ্তর।
মাহুত শিবলালবাবু বলেন, ওই দিন হাতিটিকে আমি আক্রমণ না করলে পাতাওয়ালা জগন্নাথবাবুকে বাঁচানো যেত না। তাই বাধ্য হয়ে বাগে আনতে কুনকিটিকে প্রতি আক্রমণ করতে হয়েছে।