রাতভর মৃত গন্ডারের খড়গ পাহারা দিয়ে বনদফতরের পুরস্কার পাওয়া আমিরুল হককে পিষে মারল বনদফতরেই শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত কুনকি হাতি শারুল। অভিযোগ, ঘটনাটি জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে হলেও আমিরুল হকের মৃতদেহটি ময়নাতদন্ত না করেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সমস্ত কর্মী মুখে তালা দিয়েছে।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও দীপক এম বলেন, এক ব্যক্তির দেহ জঙ্গলের ভেতর মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কী ভাবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মৃতদেহ কেন ময়নাতদন্ত না করেই ওই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হলো?এই প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দেননি। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর রাতে আমিরুল হক প্রতিদিনের মতো জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায় তোর্ষা নদীতে। মাছ ধরে ফেরার পথে মালঙ্গী বিটের কুনকি হাতির মাহুত তাঁর কাছে মাছ চেয়েছিলেন। শাহরুলের মাহুতকে মাছ দিতে আমিরুলের উপর আক্রমণ করে বসে হাতিটি।
মাহুতের থেকে খবর পেয়েই বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমিরুল হকের মৃত দেহটি উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্ত না করেই পরিবারের হাতে তুলে দেয়। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য আশরাফুল হক জানান, হাতিতে মেরেছে বলে শুনেছেন। তবে কোন হাতি কীভাবে মারল আমি জানিনা। আমিরুলকে গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর মাদারিহাট প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত বিশ্ব গন্ডার দিবসে বনদফতর থেকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। ঘটনা প্রসঙ্গে সেদিন জলদাপাড়া পূর্ব রেঞ্জের রেঞ্জার স্বপন মাঝি বলেছিলেন, ২০১৭ সালে তোর্ষা নদীর ধারে একটি গন্ডার মৃত অবস্থায় পড়েছিল। চোরা শিকারিদের হাত থেকে গন্ডারটিকে বাঁচাতে আমিরুল বাবু ভোররাত থেকে পাহারা দিয়েছিলেন। বন ও বন্যপ্রানীদের প্রতি তাঁর এমন ব্যবহারে তাঁরা মুগ্ধ হয়েছিলেন সেদিন। এমন পশু প্রেমী আমিরুল হকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তবে আমিরুল বাবু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন কিনা তা এখনও জানা যায়নি। অনেক সময় কুনকি হাতিদের সামনে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় কোনও মাহুত, পাতাওয়ালা বা সাধারণ মানুষ গেলে তাঁরা আক্রমণ করে বসে। এক্ষেত্রেও সেই ঘটনা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। যদিও আমিরুল নেশা করতেন না বলে জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। তবে কেন শান্ত স্বভাবের শারুল আমিরুল হককে হত্যা করল, এই নিয়ে ধন্ধে পড়েছেন সকলেই।