scorecardresearch
 

১০ বছর পর উত্তরপ্রদেশ থেকে উদ্ধার শিলিগুড়ির নিখোঁজ যুবতী

নিখোঁজের সময় ছিল কিশোরী। দশ বছর পর যখন ফিরলেন তখন রীতিমতো ২৩ বছরের যুবতী। মাঝে কেটে গিয়েছে দশ-দশটা বছর। প্রায় এক যুগের কাছাকাছি পর ঘরে ফিরে আত্মহারা তিনি। আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে পরিবারেও। শিলিগুড়ির যুবতী উদ্ধার উত্তরপ্রদেশের বৈশালী থেকে।

Advertisement
পরিবারের সঙ্গে উদ্ধার যুবতী পরিবারের সঙ্গে উদ্ধার যুবতী
হাইলাইটস
  • দশ বছর কোথায় ছিল জানার চেষ্টা করা হচ্ছে
  • নিখোঁজ কিশোরী ফিরল যুবতী হয়ে
  • উত্তরপ্রদেশ থেকে উদ্ধার যুবতী

দশ বছর বাড়ি ফিরল নিখোঁজ 

চা বাগান এলাকা থেকে নিখোঁজ ১৩  বছর বয়সী নাবালিকাকে প্রায় ১০ বছর পর খুঁজে পেল পরিবার। দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরাম ও দার্জিলিং জেলা পুলিশের নকশালবাড়ি থানার পুলিশের উদ্যোগে উত্তরপ্রদেশের বৈশালী থেকে উদ্ধার হয় ওই নাবালিকা। এখন আর ও অবশ্য নাবালিকা নেই। দশ বছরে যুবতীতে পরিণত হয়েছে। শনিবার আদালতের নির্দেশে ওই যুবতীকে তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। ঘটনা তদন্তে দার্জিলিং জেলা পুলিশ।

চা বাগানে নারী পাচার

উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকাগুলি থেকে নারী পাচারের মতো ঘটনা প্রায়শই খবরের শিরোনামে থাকে। মূলত চা বাগান এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সেখানকার যুবতীদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর এই চক্রের সাথে রয়েছে বড় একটা দালাল চক্র। তবে এই নারী পাচার রুখতে সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে। যাতে চা বাগান এলাকার মানুষকে সচেতন করা যায়।

লিগাল এইড ফোরামের উদ্যোগে ঘরে ফেরা

বছর দশেক আগে শিলিগুড়ি মহকুমার অন্তর্গত নকশালবাড়ি ব্লকের ত্রিহানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ১৩ বছরের নাবালিকা। প্রায় ১০ বছর থেকে ওই নাবালিকা নিখোঁজ থাকার পর দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এইড ফোরাম ওই এলাকায় গিয়ে নারী পাচার নিয়ে সার্ভে করার সময় এই নাবালিকা নিখোঁজের তথ্য তাদের কাছে উঠে আসে। এরপরই নাবালিকাকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করে লিগ্যাল এইড ফোরাম।

পুলিশ ও সরকারি সহায়তায় বাড়িতে যুবতী

সম্প্রতি মাস কয়েক আগে ফোরামের তরফে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার ও শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং বিভাগে অভিযোগ জানানো হয়। একই সাথে ন্যাশনাল চাইল্ড রাইট কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশন ও দার্জিলিং জেলা শিশু সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ বিষয়টি জানান হয়। এরপরই দার্জিলিং জেলা পুলিশের নকশালবাড়ি থানার পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করলে নিখোঁজ ওই নাবালিকার সন্ধানে বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করে। পুলিশ ঘটনা তদন্তে জানতে পারে ওই নাবালিকা উত্তরপ্রদেশের বৈশালী এলাকায় রয়েছে। এরপরই চলতি সপ্তাহে নকশালবাড়ি থানার পুলিশের একটি টিম উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বৈশালী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। শনিবার আদালতের নির্দেশে ওই কিশোরীকে তুলে দেয়া হয় তার পরিবারের হাতে।

Advertisement

প্রলোভনে পা দিয়েই পাচার

নিখোঁজ ওই কিশোরীর পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে তার বয়স যখন ১৩ বছর ছিল, সেই সময় পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে সে মামা বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন একদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে আর ফেরেনি। তারপর থেকেই তার পরিবার ওই নাবালিকার খোঁজ চালাচ্ছিল। জানা গিয়েছে, সে মামা বাড়ি থেকে যে কোনো প্রলোভনে দিল্লিতে চলে গিয়েছিল। আর তারপরই দিল্লি থেকে ওই নাবালিকা দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে উত্তরপ্রদেশে পাচার হয়ে যায়। তবে মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেও থানায় নিখোঁজ অভিযোগ জানানো হয়নি তার পরিবারের তরফে।

উদ্ধারকারীদের দাবি

দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার জানান, ২০১০ সালে ওই মেয়েটিকেকেও দিল্লী হয়ে উত্তর প্রদেশের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে । তিনি আরো বলেন এখনও বেশকিছু নাবালিকা নিখোঁজ রয়েছে তাদেরও উদ্ধারের কাজ শুরু করা হয়েছে।

আত্মহারা যুবতী ও তার পরিবার

নিখোঁজ নাবালিকার মা জানান, মে মামা বাড়ি থেকে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। বহু খোঁজার পরও মেয়েকে না পেয়ে তার ফিরে আসার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি কিন্তু প্রায় ১১ বছর পর মেয়েকে পেয়ে খুশি তার পরিবার। অন্যদিকে মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তারা পুলিশ ও লিগাল এইড ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

 

Advertisement