পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। চারিদিকে এখন সাজ সাজ রব। বাকি আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন। রাজ্যজুড়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি । বড় পুজো মন্ডপগুলির পাশাপাশি ঐতিহ্যময় পুজোগুলিতে এখন চরম ব্যস্ততা সকলের মধ্যে। শিলিগুড়ির দ্বিতীয় প্রাচীন পুজো হল মিত্র সম্মিলনীর দুর্গাপুজো। বিগ বাজেট নয়, তাঁদের পুজোয় মানুষ ভিড় জমান, ইতিহাস আর নিষ্ঠার টানে।
আরও পড়ুনঃ Durgapuja 2022: প্রথমা থেকে নবমী, পুজোয় কোন পোশাক পরলে মা-দুর্গার কৃপা পাবেন?
১৯০৯ সালে শুরু হয় পুজো
শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিগ বাজেটের পুজো হয় এখন। তার মধ্যেও কিছু পুজো আছে, যেগুলি বাজেটে নয়, ঐতিহ্যে লোক টানে। প্রায় একশ বছর আগে যখন শহর ঠিক শহর ছিল না, ছিল পাহাড়ের পাদদেশের একটি ছোট জনপদ, তখন মাত্র হাতেগোনা কয়েকটাই পুজো হত। তাদের মধ্যে প্রথম পুজো হয় শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের রেলের বাসিন্দাদের পুজো। আর দ্বিতীয় পুজো শুরু হয় এই মিত্র সম্মিলনীতে। ১৯০৯ সালে কিছু নাটক পাগল লোকেরা মিত্র সম্মিলনী স্থাপন করে। ১৯২৬ সালে মিত্র সম্মিলনীতে প্রথম দুর্গাপুজো করা হয়। সাবেকিয়ানার মোড়কে শুরু হওয়া সেই পুজো আজও একইভাবে নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে পালন করা হয়। আর শহরের মানুষের কাছে এখন এটা ঐতিহ্যের পুজোও।
তখন শিলিগুড়ির জনসংখ্যা ছিল হাতেগোনা
শোনা যায়, সেই সময় শিলিগুড়ির জনসংখ্যা ছিল মাত্র হাজার খানেক। শহরের হিলকার্ট রোডই ছিল একমাত্র রাস্তা। বর্তমানে যেখানে মিত্র সম্মিলনীর ভবন, তার সামনে রাস্তার ধার দিয়ে ছিল বেশ কিছু কাঠের দোকান। মিত্র সম্মিলনী ভবনও ছিল কাঠের। জানা গিয়েছে তখন মিত্র সম্মিলনীর প্রথম সভাপতি ছিলেন প্রিয় গোপাল সেন, প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুরেন্দ্র ভট্টাচার্য। এ ছাড়াও বেশ কিছু উৎসাহী ছিলেন। রীতি মেনে সেই সময় থেকে শুরু করে প্রতি বছর উল্টো রথের দিন কাঠামো পুজো মধ্যে দিয়ে পুজোর শুরু হয়। এমনকী মিত্র সম্মিলনীর তখন পুজোর প্রতিমা তৈরি হত সম্মিলনীর ভিতরেই। প্রতিমা নিরঞ্জন করা হতো মহানন্দা নদীতে।
আরও পড়ুনঃ ওঁরা এখন মণ্ডপে যান, দুর্গার উপর রাগ খানিক কমেছে মহিষাসুরের বংশধরদের
টয়ট্রেনে প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ে যাওয়া হতো
সেই সময় টয় ট্রেন চলত হিলকার্ট রোডের এক পাশ দিয়ে। মিত্র সম্মিলনীর সামনে দিয়ে যেত ট্রেন। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য টয়ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হতো। মিত্র সম্মিলনী থেকে প্রতিমা ট্রেনে তুলে এবং মহানন্দা ব্রিজ এর কাছে গিয়ে প্রতিমা নামিয়ে ভাসান দেওয়া হতো। মিত্র সম্মিলনীর ঐতিহ্য রয়েছে। প্রতিমা নিরঞ্জন হতো দুপুর ১২ টা নাগাদ। সেই ঐতিহ্য ধরে রেখএ রেখে এখনও দুপুর ১২ টার সময় প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। তবে ঐতিহ্য নিয়ে মিত্র সম্মিলনী পুজোয় বাহাড়ম্বর না থাকলেও প্রতি বছরই শহরের দর্শকদের পুজা ভ্রমণের তালিকায় এই পুজো থাকেই। তবে করোনার কারণে তেমন জাঁকজমক বড় আকারে পুজো না হলেও সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্য রীতিনীতি মেনে এবারও পুজা হচ্ছে মিত্র সম্মিলনীতে।
স্মৃতি জড়িত প্রাক্তন ও মেয়র ও মন্ত্রীর
এই পুজোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন ডান-বাম সব দলের নেতা-মন্ত্রীরাই। কংগ্রেস-বাম হয়ে তৃণমূল। রাজ্যে পালাবদল হলেও মিত্রসম্মিলনীর সঙ্গে আত্মীয়তায় জড়িত থাকতে কারও কোনও অসুবিধা হয়নি।