মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের পাশে বসে চার নাাবালক সন্তানের অসহায় আত্মসমর্পণের দৃশ্য এখন ভাইরাল।
মায়ের মৃতদেহ আগলে ৪ নাবালক সন্তান
একবিংশ শতাব্দীতে ডিজিটাল ভারতে খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে তিলে তিলে মারা গেল বছর তিরিশের এক গৃহবধূ। নাম রুপন বিবি। বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়াগাছি গ্রামে।তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
১৫ বছর ধরে অত্যাচার !
জানা গিয়েছে, প্রায় পনেরো বছর আগে মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোবিন শেখের বড় মেয়ের বিয়ে হয় মুড়াগাছি গ্রামের বাসিন্দা চনা শেখের ছেলে লালচন শেখের সঙ্গে। অভিযোগ, বিয়ের এক বছর কাটতে না কাটতেই শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমনকী তার খাবার পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাসের পর মাস অনাহারে ও অর্ধাহারে কাটাতে হতো রুপনকে। স্বামী ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে স্ত্রীর কোনও খোঁজ নিত না। এমনকী পরিবারে খরচ পর্যন্ত দিত না বলে অভিযোগ। অনাহারে- অর্ধাহারে থাকার ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। হাঁটা চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। ইতিমধ্যে বছর দুয়েক আগে লালচন পার্শ্ববর্তী গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে।
অসহায় ঠাকুমা
মৃত রুপন বিবির দুই নাবালিকা মেয়ে ও দুই নাবালক ছেলে রয়েছে। কারওই আধার কার্ড ও রেশন কার্ড তৈরি করা হয়নি। ফলে সরকারি সুযোগ সুবিধাও পায়নি। দুবছর ধরে দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে চার ছেলে-মেয়ের আহার জোগাড় করত। শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে ভিক্ষা করাও তার বন্ধ হয়ে যায়। মাস খানেক আগে বাবার বাড়ি ভবানীপুর গ্রামে চলে আসে। মঙ্গলবার ভোরে মারা যায় বলে খবর।চার নাবালক নাতি-নাতনিকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছে ঠাকুমা কাইসারা বিবি।
খাবার ও চিকিৎসার অভাব !
মৃতার মা কাইসারা বিবির অভিযোগ খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেল তার মেয়ে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে হামেশাই ঝগড়া লেগে থাকত। শ্বশুর বাড়িতে খাবার তো দূরের কথা খরচ পর্যন্ত দিত না স্বামী। ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বছরের পর বছর থেকে যেত।চার নাবালক সন্তানকে রেখে মঙ্গলবার চিরবিদায় নিলেন তার মেয়ে। কিভাবে চার নাতি-নাতনিকে লালন পালন করবেন তা চিন্তায় উড়েছে ঘুম।