scorecardresearch
 

প্রস্তুতি শেষ, সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় শিলিগুড়ি-ঢাকা ট্রেন

দু'তরফেই পরিকাঠামো তৈরি। হয়তো করোনার প্রকোপ ফের না বাড়লে এতদিনে চালু হয়ে যেত শিলিগুড়ি-ঢাকা রেল যোগাযোগ। সেজেগুজে শুধুমাত্র সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে এনজেপি-ঢাকা দুই স্টেশন। এই ট্রেনটি চালু হয়ে গেলে শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ, পাশের রাজ্য সিকিম, বিহার, প্রতিবেশী দুই দেশ নেপাল ও ভুটানের অর্থনীতিও বদলে যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও রাজ্যের এ প্রান্তের মানুষের যাতায়াত বাড়বে।

Advertisement
ফাইল ছবি ফাইল ছবি
হাইলাইটস
  • প্রস্তুতি শেষ, ছুটতে তৈরি শিলিগুড়ি-ঢাকা ট্রেন
  • সপ্তাহে দুদিন করে যাবে-আসবে
  • কয়েকটি দেশের পর্যটনে সরাসরি প্রভাব

পরিকাঠামো তৈরি শুধু সবুজ সংকেতের অপেক্ষা

দু'তরফেই পরিকাঠামো তৈরি। হয়তো করোনার প্রকোপ ফের না বাড়লে এতদিনে চালু হয়ে যেত শিলিগুড়ি-ঢাকা রেল যোগাযোগ। সেজেগুজে শুধুমাত্র সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে এনজেপি-ঢাকা দুই স্টেশন।শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত ওই ট্রেন সপ্তাহে দু'দিন করে চলবে বলে দুদেশের তরফে জানানো হয়েছে।

বদলে যাবে অর্থনীতি

এই ট্রেনটি চালু হয়ে গেলে শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ, পাশের রাজ্য সিকিম, বিহার, প্রতিবেশী দুই দেশ নেপাল ও ভুটানের অর্থনীতিও বদলে যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও রাজ্যের এ প্রান্তের মানুষের যাতায়াত বাড়বে। পর্যটক আদানপ্রদানের মধ্যে দিয়ে বড় সংখ্যায় অনায়াসে আসতে পারবেন, তেমনই সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষদেরও বাংলাদেশ যেতে সুবিধা হবে।

মোট ৫৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে ট্রেনটি

মোট ৫৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে ট্রেনটি। রেলপথের মধ্যে শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি  ৮৪ কিলোমিটার পথ ভারতের মধ্যে দিয়ে আর বাকি ৪৪৬ কিলোমিটার পথ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে।

সপ্তাহে দুদিন যাতায়াত করবে আপাতত

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে থেকে ট্রেন ছেড়ে জলপাইগুড়ি জেলার হলদিবাড়ি হয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে। সেখান থেকে ওদেশের চিলাহাটি, নীলফামারি, পার্বতীপুর, হিলি, নাটোর, ঈশ্বরদী আর টাঙ্গাইল হয়ে ট্রেন পৌঁছবে ঢাকায়। এনজেপি স্টেশন থেকে সোমবার আর বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রেন ছাড়বে এবং রাত ১১টায় ঢাকা পৌঁছবে। ওই দিনই রাতে ঢাকা থেকে ফিরতি পথে ট্রেনটি ভারতের দিকে রওনা হবে, পৌঁছবে পরদিন সকালে।

বাস থাকলেও ট্রেনে অনেক সুবিধা

হিমালয়ান হসপিটালিটি এবং ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "এই ট্রেনটি চালু হয়ে গেলে এলাকার চালচিত্রই বদলে যাবে। পর্যটনের একটা দিগন্ত খুলে যাবে। এমনিতেই ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে নেপাল বাস পরিষেবা ব্যপক সুবিধা তৈরি করেছে। তবে বাসে সামান্য কিছু লোকই আসতে পারেন। ট্রেন চালু হয়ে গেলে প্রচুর মানুুষ ওদেশে যেতে পারবে ও আসতে পারবে।

Advertisement

দুদেশেই পুরনো টান রয়েছে

এমনিতেই বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক দার্জিলিং-ডুয়ার্স-সিকিম বেড়াতে আসেন। এর মধ্যে সিকিমেও কয়েক বছর হল বাংলাদেশি নাগরিকদের যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতদিন তাদের ফুলবাড়িতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে আসতে হত। যেখানে কাছাকাছি কোনও স্টেশন নেই। এখন তাদের অনেক সুবিধা হবে। ওদিক থেকে যেমন পর্যটক আসবেন, এদিক থেকেও বহু মানুষ বাংলাদেশ যেতে চান। তারাও এখন সরাসরি ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারবেন। এটা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছেন সম্রাটবাবু।

পর্যটনে লাভবান হবে দুদেশই

আবার দার্জিলিং পাহাড় এবং সিকিমের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও বাংলাদেশের সোমপুর মহাবিহার, মহাস্থানগড় এবং মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনীর মতো বৌদ্ধবিহারগুলি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন রাজ বসু। তিনি মনে করেন, এই অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে বোধগয়া বা নালন্দায় যান, সহজেই এখন তারা সোমপুর মহাবিহার বা মহাস্থানগড় এসব বৌদ্ধ তীর্থ ক্ষেত্রে যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মতো পরিচিত পর্যটন স্থানগুলো তো আছেই।

খাবারের টান 

এছাড়া বাংলাদেশের খাবারের টানেও তার আস্বাদ নিতেও অনেকে সেদেশে যেতে চান। তাদের পক্ষেও সরাসরি ট্রেন অনেকটাই সুবিধা করে দেবে বলে রাজবাবু মনে করেন। ইলিশ থেকে দই, নানা রকম খাবারের সম্ভার রয়েছে যা শুধু ওপার বাংলাতেই পাওয়া যায়।

চিকিৎসায় সুবিধা ওদেশের

শুধু পর্যটন নয়, চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর প্রচুর বাংলাদেশি নাগরিক কলকাতা তো বটেই, শিলিগুড়িতেও চলে আসেন ফুলবাড়ি ও চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে। তাদের পক্ষেও সরাসরি শিলিগুড়ি কিংবা স্টেশন থেকে কলকাতার ট্রেন ধরে চলে যাওয়া অনেকটাই সুবিধা হবে।

প্রয়োজন শুধু শিলিগুড়িতে একটি ভিসা অফিসের

তাই এই নতুন ট্রেনে যাতায়াত দুদেশের মানুষের কাছেই সুবিধাজনক করতে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা ব্যবস্থা দ্রুত চালু করা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। কারণ, শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কোনও ভিসা কেন্দ্র নেই। তাই কলকাতায় গিয়ে ভিসা করিয়ে তারপরে শিলিগুড়ি ফিরে এসে ট্রেন ধরতে হবে। তবে কলকাতা থেকে ভিসা করিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার লোকও কম নেই বলেই মনে করছেন অনেকে। কলকাতায় বাংলাদেশের হাইকমিশন অবশ্য় ভিসার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবেল ট্রেন চালু হয়ে গেলে সে সমস্যাও মিটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

Advertisement