এপ্রিল ২০২১- জনগণের রায়ে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া ঝড়। আর সেই ঝড়ে ধুয়ে মুছে সাফ সমস্ত ঘাসফুল বাহিনী।শিলিগুড়িতে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে পদ্ম ফুটেছিল অনেক আশা জাগিয়ে। ঠিক তা থেকে ১১ মাসের মাথায় শিলিগুড়িতে তৃতীয় স্থানে নেমে এলো বিজেপি। পাশাপাশি শিলিগুড়ির বিধায়ক হিসেবে প্রথমবার বিধানসভায় পা রাখা প্রাক্তন বামপন্থী থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শংকর ঘোষ বিপুল ভোটে হেরে গেলেন নিজের ওয়ার্ডেই। গোটা শিলিগুড়ির আশীর্বাদ যাঁর সঙ্গে ছিল, নিজের ওয়ার্ডেই কেন তিনি কলকে পেলেন না, তা নিয়ে আগামী কয়েক মাস বিচারে-বিশ্লেষণে মাথার চুল ছিঁড়তে পারে গেরুয়া শিবির।
তৈরি প্লাটফর্মেও উঠতে পারলেন না শঙ্কর
অথচ প্ল্যাটফর্ম তৈরি ছিল। একে সদ্য বিধায়ক হয়েছেন। শহরে জনপ্রিয়তা নেহাত মন্দ নয়। যুব সম্প্রদায়ের কাছে পছন্দের আইকন হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে তিনি হয়তো বুঝতে পারেননি প্রদীপের মত আলোর নীচের অন্ধকারের মতো নিজের বাড়িতেই তাঁকে পিছিয়ে পড়তে হবে। তাও শেষ পর্যন্ত তিন নম্বরে শেষ করবেন সেটি হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি তিনি নিজেও।
তৃণমূলের অন্তর্কলহও জেতাতে পারলো না শঙ্করকে
উপরন্তু ওয়ার্ডের তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে উঠেছিল নির্বাচনের আগে। তৃণমূলের তরফে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা প্রতুল চক্রবর্তীকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। তাতে বিদ্রোহ করে নির্দল থেকে গোঁজ হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিকাশ সরকার। ফলে দু'জনের মধ্যে ভোট কাটাকাটিতে শঙ্কর ঘোষের বেরিয়ে যাওয়াই অঙ্কের হিসাব ছিল। কিন্তু প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে দাঁড়িপাল্লার মত ওঠানামা করেছেন বিকাশবাবু এবং প্রতুলবাবু। শেষমেষ সামান্য ভোটে জয় পান প্রতুলবাবুই।
সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজ্যে বিজেপির পিছিয়ে পড়ার প্রভাব পড়েছে এই ভোটে
কিন্তু সে সব আলোচনা এখন পিছনের বেঞ্চে। মূল প্রশ্ন এসে যাচ্ছে, জয়ের এক বছরের মধ্যে কী এমন হলো, যাতে শঙ্করবাবুকে পরাজয় স্বীকার করতে হলো। এ বিষয়ে শঙ্করবাবু কী বলছেন তা অবশ্য জানা যায়নি, তিনি একাধিকবার ফোন করলেও ফোন সুইচ অফ করে রাখায়। তবে দলের তরফে সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির আসতে না পারার কারণকেই দায়ী করা হচ্ছে। বিজেপির তরফেও দাবি করা হয়েছে যে সিপিএম ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে এই পুরভোটে। ফলে বিজেপির কাছে আসন বাড়াটাই শিলিগুড়িতে সার্বিক লাভ। তবে শঙ্করবাবু কেন হেরেছেন, তাঁর যুক্তিগ্রাহ্য কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁরা।
বিশ্বাস হারিয়েছেন শঙ্কর
যেখানে শুধু বিধায়কই নন, এর আগে নিজের ওয়ার্ড থেকে গতবারের পৌর নির্বাচনে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন শঙ্কর ঘোষ। তখন অবশ্য তিনি সিপিএম নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আজীবন এসএফআই- ডিওয়াইএফআই করে উঠে আসার শঙ্কর ঘোষকে বিশ্বাস করেছিলেন এলাকার মানুষ। পরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তিনি জিতলেও, পড়ে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের পতাকা ওড়ায় শিলিগুড়িতে ক্রমশ প্রভাব কমেছে বিজেপির। তারই ফল হিসেবে এবং চলতি ট্রেন্ডে তৃণমূলের প্রবল আসন বন্যায় ভেসে গিয়েছেন তিনি।
বিধায়ক হিসেবে কার্যফল শূন্য!
তাছাড়া বিধায়ক হিসেবে তিনি গত এক বছরে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ করে উঠতে পারেননি।শিলিগুড়ির জন্য বলে তার এলাকারই একাংশের অভিযোগ বলে বিজেপিকে জিতিয়ে ফের এলাকাকে বঞ্চিত করে রাখার কোন মানে হয় না। এমনটাই মনে করছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। যার ফলে পরপর দুটি নির্বাচনে জেতার পর প্রথমবার নির্বাচনে হার স্বীকার করতে হয়েছে শঙ্করবাবুকে।