দুই ফিল্মি তারকার বাজিমাত। একজন বিহারের বাসিন্দা। আর একজন আসানসোলের। তবে দুজনের পরিচিতি মুম্বই থেকে। দুজনেই বলিউডের তারকা। একজন অভিনেতা আর অপরজন গায়ক। দুজনেই স্বনামধন্য। দুজনেই এক সময় বিজেপিতে ছিলেন। দুজনেই এখন তৃণমূলে। দুজনেরই কিছুদিন আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। একজন লোকসভা নির্বাচনে হেরেছেন। অন্য়জন মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন দলের রোষনজরে পড়ে।
দুজনেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসে তৃণমূলের হাত ধরেছিলেন। এখন দুজনেই নতুন করে আশার আলো দেখছেন। একজন বলিউড সুপারস্টার বিহারীবাবু শত্রুঘ্ন প্রসাদ সিনহা। অন্যজন সুপ্রিয় বড়াল ওরফে বাবুল সুপ্রিয়। দুজনেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিধায়ক পদে শপথ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আসুন জেনে নিই তাঁদের ব্যক্তিগত এ যাবৎকালের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
বাবুল সুপ্রিয়র প্রাথমিক জীবন ও ক্যারিয়ার
পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট শহর উত্তরপাড়ায় জন্ম বাবুল সুপ্রিয়র। ডন বস্কো লিলুয়া থেকে স্কুলের পাঠ নেওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সঙ্গীত অনুরাগী পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে গান-বাজনার প্রতি তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল, তবে গান গাওয়াকে পূর্ণ-সময়ের পেশা হিসাবে গ্রহণ করার আগে অল্প সময়ের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাঙ্কে কাজও করেন বাবুল। এরপর চাকরি ছেড়ে বলিউডে চলে যান। দেড় দশক বলিউডে সাফল্যের সঙ্গে গায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন
২০১৪ সালে তাঁর বিজেপি প্রার্থী হিসাবে রাজনীতিতে আগমন। নিজের প্রথম নির্বাচনেই ২০১৪ লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে পরাজিত করেন তৃণমূলের দোলা সেনকে। তিনি কেন্দ্রের নগর উন্নয়ন মন্ত্রক এবং গৃহ ও নগর দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হন।
পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের ভারী শিল্প এবং গণ উদ্যোগ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপির ফল খারাপ হওয়ার পরে ২০২১ সালের ৭ জুলাই তাঁকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই তিনি বিজেপি ছেড়ে দেন। কিছুদিন দলহীন থাকার পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন।
আরও এক বলিউড সুপারস্টার রাজেশ খান্নার বিপরীতে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন শত্রুঘ্ন সিনহা। প্রথম ভোটে ২৫,০০০ ভোটে হেরে যান তিনি।
২০০৯ সালে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিহারের পটনা সাহেব লোকসভা কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। তিনি আরেক সিনেমা সেলিব্রিটি শেখর সুমনকে পরাজিত করেন। তিনি ১৩ তম লোকসভা থেকে তৃতীয় বাজপেয়ী মন্ত্রকের মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং নৌপরিবহণ বিভাগের মন্ত্রী হন। মে ২০০৬ পর্যন্ত, তিনি বিজেপির সংস্কৃতি ও কলা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
৬ এপ্রিল ২০১৯-এ, শত্রুঘ্ন সিনহা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেনুগোপাল এবং রণদীপ সুরজেওয়ালার উপস্থিতিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন। সিনহা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির সদস্য হয়েছিলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৯-এ তাঁকে প্রার্থী না করায় কংগ্রেসের সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, সিনহা আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৬ এপ্রিল ২০২২ এ, শত্রুঘ্ন সিনহা ভারতীয় জনতা পার্টির অগ্নিমিত্রা পালকে ২ লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
তিনি দেব আনন্দের প্রেম পূজারি ছবিতে একজন পাকিস্তানি সামরিক অফিসারের ভূমিকায় প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, তিনি ১৯৬৯ সালে মোহন সেহগালের সাজন-এ পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসাবে একটি ছোট ভূমিকা পান। প্রেম পূজারির মুক্তি বিলম্বিত হয়েছিল, তাই তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল সাজন। পরে তিনি একাধিক সুপারহিট সিনেমায় অভিনয় করেন।