NOTIFICATIONS
5th Nov
গাছে গাছে ভর্তি হাজারো পাখি। গাছে পাখি থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। গ্রাম-বাংলার এ তো পরিচিত দৃশ্য। এতে নতুনত্ব কি ?
নতুনত্ব তো রয়েইছে। আসলে যে পাখিদের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি কোনও স্থানীয় পাখি নয়, সবগুলিই সুদূর বিদেশ থেকে আগত।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাধানগরের ভিনদেশি পাখি এখন পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ ! পাখির আগমন নতুন না হলেও বাইরের জগতের কাছে তা নতুনই বটে। ফলে তা দেখতে ভিড় জমছে এলাকায়।
এগুলি সবই উত্তর গোলার্ধের উত্তরের বরফের দেশ সাইবেরিয়ার বাসিন্দা। পাখিগুলির নাম সাইবেরিয়ান ক্রেন বা সারস।
গ্রীষ্ম শেষে বর্ষা পর হতেই ঠাণ্ডার দেশ থেকে তারা দলে দলে চলে আসে এই এলাকায়। বছরের পর বছর ধরে তাঁদের এটাই শীতকালীন আস্তানা।
মেঘে কালোর উপর সাদা আঁকিবুঁকি, ভিনদেশের রাস্তা চিনে ফেলে ওরা। কোনও ভুলচুক হয় না রাস্তা চিনতে। কারণ ওরা পরিযায়ী পাখি।
হ্যাঁ, পরিযায়ী পাখি এমন এক প্রাণী, যারা প্রতি বছর এক সময়ে, এক জায়গায় হাজার হাজার কিলোমিটার উড়ে আসে শুধুমাত্র এক বিশেষ কারণে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বংশবিস্তারের কারণেই তারা প্রতি বছর নিজেদের দেশ ছেড়ে উজিয়ে আসে। এদেশের শীতকালীন উষ্ণতা উপভোগ করতে
ডারউইনের মতবাদ অনুযায়ী, অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামের এক জলজ্যান্ত উদাহরণ এই পরিযায়ী পাখি। এই ধরণের পাখি দেশের আরও বেশ কিছু জায়গায় যায় এ সময়।
আর প্রকৃতির এই মহান সৃষ্টির মুখ বছরের কয়েক মাসের জন্য দেখে সাইবেরিয়া থেকে বহুদূরের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর সংলগ্ন রাধানগরও।
কারণ, এপ্রিল থেকেই রাধানগর পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বেশ কিছু শিমুল ও তেঁতুল গাছে এসে বসে ১০-১৫ হাজার সাইবেরিয়ান ক্রেন বা স্থানীয় নাম শামুকখোল।
আর বছরের প্রায় অর্ধেকটা সময় কাটিয়ে তারা আবার ফিরে যায় তাদের বরফের দেশে। আর এই মাঝের কয়েকটা মাস এই পাখিগুলি এখানকার মনোরম পরিবেশ উপভোগ করে।
মনোরম পরিবেশে সঙ্গম ক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিম পাড়ে এবং সেই ডিমে তা দিয়ে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়, আর সেই বাচ্চাকে উড়তে শিখিয়ে নভেম্বর নাগাদ শীতের শুরুতেই বিদায় নেয় তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনুমানিক সাত দশক ধরেই পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা রয়েছে রাধানগরের কয়েকটি প্রাচীণ শিমুল ও তেঁতুল গাছে।
বছরের এই মাঝের সময়ে সকাল সন্ধ্যা মাঠে ঘাটে খাবারের সন্ধানে চলে পাখিদের আনাগোনা। আর এই পরিযায়ী পাখি দেখার জন্য প্রায়ই ভিড় জমে রাধানগরের এই পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায়।
এদিকে এই পরিযায়ী পাখির দৃশ্য দিনের পর দিন জুড়ে যাচ্ছে মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে। বাড়তি লাভ হচ্ছে পর্যটনের।
কারণ বিষ্ণুপুরে আসা পর্যটকের অনেকেই এগিয়ে এসে ভিনদেশি এই পাখিদের লীলাখেলার অপরূপ দৃশ্য চাক্ষুষ করতে এগিয়ে আসেন।
ফলে রেস্ত আসছে যখন, তখন এই এলাকাকে সৌন্দর্যায়নের দিকে পদক্ষেপ করা ব্যাপারেও ভাববে প্রশাসন, এমনটাই মত বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসকের।
তাঁরা চান পর্যটনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পাখি দেখা ও মন্দির ভ্রমণ একসঙ্গে জুড়ে দিতে। তাহলে আরও বেশি পর্যটন রেস্ত ঢুকবে সরকারি কোষাগারে।
