scorecardresearch
 

করোনায় 'পৌষমাস'! পরিযায়ী পাখিদের ভিড় বাড়ছে সাঁতরাগাছির ঝিলে

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কথায়, 'এই বছরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ভাল হবে। কালীপুজোয় বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কম হয়েছে দূষণ। রেলের ট্রেন কম চলার কারণে দূষণের মাত্রা আরও কমেছে। এই বছরে বাতাসে দূষনের মাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। এই ঝিল প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিযায়ী পাখিদের শীতকালীন আবাসস্থল।'

Advertisement
সাঁতরাগাছি ঝিলে পরিযায়ী পাখিরা সাঁতরাগাছি ঝিলে পরিযায়ী পাখিরা
হাইলাইটস
  • দীর্ঘ লকডাউনের বাতাসে দূষণের মাত্রা কমেছে খানিক
  • ইতিমধ্যেই প্রায় হাজার তিনেক নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে পৌঁছেছে
  • পাখি এসে পৌঁছেছে সাঁতরাগাছি ঝিলে

শীতের হাওয়া শুরু হতেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে দিয়েছে সাঁতরাগাছি ঝিলে। পরিবেশবিদরা বলছেন, করোনার ফলে বিশ্বে অতিমারি চললেও, দীর্ঘ লকডাউনের বাতাসে দূষণের মাত্রা কমেছে খানিক। বিগত কয়েক বছর ধরেই পরিবেশগত কারণে বেশি কিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখি বদলে ফেলছিল তাদের শীতকালীন গন্তব্য। কিন্তু এই বছরে শীতের শুরুতে ইতিমধ্যেই প্রায় হাজার তিনেক নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে পৌঁছেছে সাঁতরাগাছি ঝিলে। 

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কথায়, 'এই বছরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ভাল হবে। কালীপুজোয় বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কম হয়েছে দূষণ। রেলের ট্রেন কম চলার কারণে দূষণের মাত্রা আরও কমেছে। এই বছরে বাতাসে দূষনের মাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। এই ঝিল প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিযায়ী পাখিদের শীতকালীন আবাসস্থল।'

সাঁতরাগাছি ঝিলে পরিযায়ী পাখিরা

 
হাওড়ার জেলা বন  আধিকারিক রাজু সরকার জানান,সাধারণত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে সাঁতরাগাছি ঝিলে পাখি সুমারির কাজ করা হয়। তবে এবার এখনও পর্যন্ত প্রায় হাজার চারেক পাখি এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পাখি গবেষক তথা শ্যামপুর সিদ্ধেশ্বরী মহাবিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রসেনজিৎ দাঁ বলেন, 'বর্তমানে কোভিড অতিমারীর পরিস্থিতিতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, গাড়িঘোড়ার ব্যবহার, কল-কারখানার কাজকর্ম বেশ কিছুদিন যাবৎ বন্ধ থাকার কারণে আমাদের পারিপার্শ্বিক দূষণের পরিমাণ কিছুটা কম হয়েছে। সেটা আমরা সবাই বুঝতেও পারছি। সেই একই কারণে আমরা বেশ কিছু পাখির স্বভাবেও বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। যেমন যে পাখিগুলিকে আগে লোকালয়ে খুব বেশি দেখা যেত না তাদের দেখা গেছে অথবা বেশ কিছু নতুন পাখি খুঁজে পাওয়া গেছে আমাদের আশপাশে।'

Advertisement

তিনি আরও জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরেও সাঁতরাগাছি ঝিলের কচুরিপানা পরিস্কারের কাজ যথাসময়ে শুরু করা হয়েছে এবং পরিযায়ী পাখিদের জন্য ভাসমান দ্বীপ তৈরির কাজ সময়ের মধ্যেই শেষ করা হয়েছে। খুশির খবর এই যে ইতিমধ্যেই সাঁতরাগাছিতে লেসার হুইসলিং ডাক চলে এসেছে। আমরা আশাবাদী যে এই বছর পাখির সংখ্যা অনেকটাই বেশি হবে যা বিগত পাঁচ ছয় বছরের সংখ্যাকে অনেকটাই পেরিয়ে যাবে। দূষণের পরিমাণ কম হওয়া অথবা বর্তমান প্যানডেমিক পরিস্থিতির জন্য মানুষের ক্রিয়া-কলাপ সীমিত থাকাকে পাখির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায় কিনা এখনই বলা সম্ভব নয় কিন্তু এর সম্ভাবনা থেকেই যায়। বিগত পাঁচ ছয় মাস মাসে পরিবেশের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে সেটা আমরা সবাই জানি এবং খুব সম্ভবত সেই কারণে এ বছর আমরা পাখির সংখ্যা বেশ খানিকটা বেশি হবে বলে আশা করছি। আরেকটি কারণ অবশ্যই সঠিক সময়ের মধ্যে যথাযথ উপায়ে এই সাঁতরাগাছি ঝিলের সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা, বিগত কয়েক বছর ধরে যে কাজটি নেচার মেটস নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা করে আসছে এ বছরেও তারা যথাসময়ে পাখিদের জন্য ভাসমান দ্বীপ তৈরি এবং কচুরিপানা পরিস্কারের কাজ শেষ করেছে যার ফলে অন্য বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা আগেই অনেক বেশি সংখ্যায় পরিযায়ী পাখিদের ইতিমধ্যেই আমরা সাঁতরাগাছি ঝিলে আসতে দেখছি। এবং আমি আশা করছি শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী ১ - ২ মাসের মধ্যে পাখির এই সংখ্যাটা আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে। 

অন্যদিকে, হাওড়া পুরসভার বিদায়ী পুরবোর্ডের প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, পুরবোর্ড থাকাকালীন পরিবেশ বাস্তুতন্ত্রের নিয়ম মেনে সাঁতরাগাছি ঝিল পরিষ্কার করার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল আজও তাই মেনে চলা হচ্ছে। সাঁতরাগাছি স্টেশনের একদম কাছে হওয়ার ফলে ট্রেনের হর্নের আওয়াজ বিঘ্ন ঘটতো পরিযায়ী পাখিদের জীবনযাত্রায়। আমরা উদ্যোগ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওই এলাকাকে 'নো হর্ন জোন ' করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম।

Advertisement