গরমের মরশুম চলে এসেছে। আর গরমকাল মানেই প্রতিদিনের মেনুতে আমের (Mango) সংযুক্তিকরণ। রসালো আমের স্বাদ চেখে দেখতে ভালবাসেন প্রায় প্রত্যেকেই। বাংলায় আম উৎপাদনের অন্যতম প্রধান দুই জেলা হল মালদা ও মুর্শিদাবাদ। গ্রীষ্মের মরশুমে (Summer Season) এরাজ্যর আমের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ করে এই দুই জেলা। এবার ঠিক কেমন ফলন হতে চলেছে মালদা ও মুর্শিদাবাদে?
চলতি মরশুমে মালদা (Malda) জেলার বাগানগুলিতে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবারও রেকর্ড ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মালদা জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মরশুমে জেলায় মোট ৩১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। আমের ফলন হয়েছিল ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ জেলায় হেক্টর প্রতি আমের ফলন ছিল ১১.৯৩ মেট্রিক টন। হেক্টরপ্রতি সবথেকে বেশি ফলন হয়েছিল মানিকচক ব্লকে। এবছর জেলা উদ্যানপালন দফতরের উদ্যোগে নতুন করে আরও ৪৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তবে কৃষকদের আম গাছে রাসায়নিক প্রয়োগ বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা।
মনিকচক ব্লকের এক আম চাষি যাদব মণ্ডল বলেন, এই বছরে প্রচুর আমের মুকুল এসেছে। তাই মালদায় ফজলি, ল্যাংড়া,হিমসাগরের ফলেন যথেষ্টই হবে বলে আশা করছেন তিনি। ওই চাষি আরও জানান, ইতিমধ্যেই পরিচর্যা শুরু হয়েছে। যাতে মুকুল বা ফলে কোনওভাবে পোকা না লাগে তার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত যা মুকুল এসেছে তা সব ঠিক থাকলে ভাল আম হবে। যা জেলার পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করা যাবে। ইংরেজবাজারের অমৃতি এলাকার আম চাষি সুবীর ঘোষ জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার আরও ভাল মুকুল এসেছে। পরিচর্যাও করা হচ্ছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফলন ভাল হবে বলে আশা তাঁরও।
উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের পক্ষে অনুকূলে। আমের মুকুল ফোটার আগে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেকটাই উপকার হয়েছে। তাই সঠিক সময়ে জেলার প্রতিটি বাগানে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। মুকুল ফোটা থেকে আমের গুটি হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া ঠিক থাকলে আমের ফলন ভাল হবে।
আরও পড়ুন - ছিল ১১০ কেজি, ৪০ কেজি ঝরিয়ে এখন বডিবিল্ডার মহিলা
পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) দিকে নজর দিলে দেখা যাবে সেখানেও ভাল ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। মুর্শিদাবাদের আমের সুখ্যাতি জগতজোড়া। কান্দি বাদে জেলার প্রতিটি মহকুমাতেই রয়েছে শয়ে শয়ে আমের বাগান। শোনা যায়, নবাবি আমলে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় দুশো প্রজাতির আম গাছ ছিল। বর্তমানে নবাবী তালুক মুর্শিদাবাদের বাগানগুলিতে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোলাপখাস, রাজাপসন্দ, বিমলি, চম্পা, সারেঙ্গা, রানিপসন্দ, কিষাণভোগ, বোম্বাই, ভবানী, মল্লিকা প্রভৃতি শতাধিক প্রজাতির আমগাছ রয়েছে।
আমচাষিদের তথ্য অনুযায়ী, এবছর মুর্শিদাবাদ জেলায় আমের মুকুল একটু দেরিতে এসেছে। তবে মুকুল দেরিতে এলেও আমের ফলন ভালো হবে বলেই আশা করছেন আমচাষিরা। এই প্রসঙ্গে এক আমচাষী বলেন, আগাম মুকুল এলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেশি থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ফলন আশানুরুপ হয় না। কিন্তু দেরিতে মুকুল এলে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বেশি থাকে। অন্যান্য বছরে আগাম মুকুল আসার কারণে একটি বোঁটায় সাধারণত একটিই গুটি লক্ষ্য করা যায়। তবে চলতি বছরে দেরিতে মুকুল আসায় একটি বোঁটায় তিন থেকে পাঁচটি গুটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তবে এই সময়ে আমের শোষক পোকার উপদ্রব শুরু হয়েছে। জেলা উদ্যানপালন দফতরের পরামর্শ মেনে শোষক পোকা দমনে ইমিডা ক্লোরোপিড ১৭.৮% বা অ্যামিপেড ৭৫% জলে মিশিয়ে স্প্রে করে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। আমের আরও একটি শত্রু হল শূলি পোকা। শূলি বা আমের আঁটি ছিদ্রকারী পোকা চাষিদের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ। শূলি পোকা দমনের জন্য ল্যামডেক্স গ্রুপের ওষুধ প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায় বলে জানান জেলা উদ্যানপালন দফতরের এক আধিকারিক।