কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে সকালে স্বাস্থ্য়ভবন অভিযানে আসেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। দুপুর গড়িয়ে রাতভর তাঁরা আন্দোলনস্থলে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক রাত ১২টা। আন্দোলনস্থলে এসে পৌঁছন নির্যাতিতার বাবা-মা সহ পুরো পরিবার।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে নির্যাতিতার মা বলেন, "আমার ছেলেমেয়েরা আজ রাস্তায়, তাই বাড়িতে থাকতে পারিনি, ছুটে এসেছি এখানে। তোমরা রোগী পরিষেবা দেবে, তা না প্রশাসন তোমাদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? যে প্রশাসন তোমাদের সুরক্ষা দিতে পারেন না, উল্টে তাদের শাস্তির কথা বলছেন? মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে যোগ দিতে বলেছেন, তবে আমার কাছে এটাই উৎসব। প্রশাসন কেন বারবার তোমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকাচ্ছেন, প্রশাসন কি ভয় পাচ্ছে? আমি চাই ব্যারিকেড তুলুন, ওদের সঙ্গে কথা বলুন।"
আন্দোলনস্থল থেকে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "তোমরা একটু ধৈর্য রাখো। আমি চাইব প্রশাসনের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন হোক। প্রশাসন খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করবে। আমি জানি যারা ডাক্তার হন, তাঁরা ভগবান তুল্য। তোমরা বাধ্য হয়েছ এই আন্দোলন করতে। তোমাদের যে দাবি, জাস্টিস যেন অবশ্যই পায়। বিচার আমরা পাবই।"
নির্যাতিতার কাকিমা বলেন, "আমরা যাই দাবি করি, মুখ্যমন্ত্রী সব দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন। মিথ্যে বলছেন। উনি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছেন। কোনও বাবা মা কি ওই পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন? এটা সম্ভব? তাঁদের ওই মানসিক অবস্থায় তা সম্ভব? উনি যা বলেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যে। উনি প্রমাণ চেয়েছেন, তার মানে আমাদের ভিডিও করা উচিত ধিল। আমি পাল্টা প্রশ্ন করছি, উনি যে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলেন তা মিথ্যে? তোমরা আমাদের পাশে থাকো, আমরা ঠিক আমাদের মেয়ের বিচার পাব।"
জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার দাদা বলেন, "আমি তিলোত্তমা, অভয়ার দাদা। প্রশাসন কী লুকিয়েছে জবাব দিতে হবে। আমরা চাই প্রশাসন যেন সমস্ত দাবি গ্রহণ করে আর আপনাদের দাবি মিটিয়ে দেয়। াপনাদের আমার পরিবারের তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমরা চাই যতদিন না তিলোত্তমা বিচার পাচ্ছে আমাদের সঙ্গে থাকুন।"
দুপুর থেকে রাত গড়িয়েও তাঁরা অবস্থানরত। আন্দেলন চালাচ্ছেন জুনিয়য়র চিকিৎসকেরা। হাতে জলের বোতল দিয়ে সেখানে বসে রয়েছেন ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, দাবি না মানা পর্যন্ত এই অবস্থান চলছে।
এদিন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়ে মেল পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব। তবে সেই মেল অপমানজনক বলে আলোচনায় তাঁরা গেলেন না। জানালেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, যে ভাষায় মেল করা হয়েছে তা অপমানজক। সেজন্য তাঁরা আলোচনায় যাননি। এদিকে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠকের জন্য নবান্নে অপেক্ষা করেছেন সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁরাও চান আলোচনা হোক। তবে সেই আলোচনা যেন সঠিকভাবে হয়। যেভাবে মেল এসেছে তাতে আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নেই। যদি পরে মেল আসে সেক্ষেত্রে তাঁরা ভেবে দেখবেন আলোচনায় বসবেন কি না।
আরজি করকাণ্ডের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবন কর্মসূচি করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ভবন থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ করছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য ভবনে রয়েছে ভ্রাম্যমান শৌচাগার আনা হয়।
'প্রতীকী শিড়দাঁড়া'-র পর এদিন 'প্রতীকী মস্তিষ্ক', রজনীগন্ধার মালা হাতে স্বাস্থ্যভবনের কাছে জুনিয়র চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবার 'স্বাস্থ্যভবন সাফাই অভিযান' -এর দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তাঁরা। দাবি তোলেন 'স্বাস্থ্য ভবন'-এর 'ঘুঘুর বাসা' ভাঙার। সঙ্গে স্লোগান তোলেন 'স্বাস্থ্য ভবন হায় হায়!'
বিকেল ৫টা পেরোলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতভর স্বাস্থ্য়ভবনের সামনেই অবস্থান করছেন।