সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর পুজোর মরশুমে পেটপুজোও চলবে সমান তালে। সেখানে খাবারের তালিকায় যদি যোগ হয় বাংলাদেশ থেকে আসা খাঁটি পদ্মার ইলিশ তাহলে আর খাদ্যরসিক বাঙালিকে পায় কে। পুজোর আগে সেরকমই সুখবর মিলল।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের তরফে অনুমতি মিলেছে। বুধবার সকালেই অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন হাওড়ায় ঢুকতে চলেছে খাঁটি পদ্মার ইলিশ। আগেই জানানো হয়েছিল, এবার মোট ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার কথা। মঙ্গলবার আরও এক বিবৃতি জারি করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে। সেখানে কোন প্রতিষ্ঠানের তরফে কত পরিমাণ ইলিশ ভারতে আসবে তার একটা বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় নাম রয়েছে মোট ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের। সব মিলিয়ে ৩৭টি সংস্থাকে ২০-৫০ টন করে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ঢাকা।
রাজ্যের ফিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, ‘বুধবারই হাওড়ায় পদ্মার ইলিশ ঢুকছে। ১৬০০ টাকা থেকে মাছের দাম শুরু হতে পারে। তবে মাছের পরিমাণ অনেকটা হলেও সময়টা বড্ড কম’।
তবে জানা যাচ্ছে বিশ্বকর্মা পুজো থাকায় বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তের কর্মীরা মঙ্গল ও বুধবার ইলিশ নামানো-ওঠানোর কাজ করতে চাননি। সেই কারণে ফিস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনগুলির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার তাঁরা ইলিশ লোডিং-আন লোডিংয়ের কাজ করবেন। কলকাতায় (Kolkata) মাছ মিলতে পারে বৃহস্পতিবার বিকালে।
১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি, সতর্কতা জারি করে দেওয়া হয়েছে যে, যেকোনও সময় এই অনুমতি বাতিলের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। একাধিক নিয়মনীতি সামলে ৫ অক্টোবরের মধ্যে কত টন ইলিশ ভারতে আসবে এবং তা মজুত করার ব্যবস্থা হবে তা নিয়েই কপালে চিন্তার ভাঁজ পরেছে বিক্রেতাদের।
সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ আরও জানান, 'গতবার ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত ৫৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে এরাজ্যে এসেছিল। কারণ সময়টা খুব কম পাওয়া গিয়েছিল। এবার সময়টা যেহেতু বেশি পাওয়া গিয়েছে সেজন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব ইলিশ মাছ এদেশে নিয়ে আসার।’
স্থল বন্দর দিয়েই মূলত মাছ বাংলাদেশ থেকে এদেশে নিয়ে আসা হয়। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ট্রাকে করে আসা ইলিশ নিয়ে আসা হয় হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন পাইকারি মাছ বাজারে। সেই ইলিশ গোটা রাজ্যে নিয়ে যান খুচরো বিক্রেতারা। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর পুজো উপলক্ষে বাংলাদেশের ইলিশ এদেশে আসা নিয়ে একটা দোলাচল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার শেষপর্যন্ত ইলিশ মাছ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এবার সব কিছু ঠিক থাকলে বুধবারই বহু প্রতীক্ষিত পদ্মার ইলিশ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে ঢুকবে। কলকাতার বাজারে এই ইলিশের দেখা মিলতে পারে বৃহস্পতিবার। নানা হাত ঘুরে খুচরো বাজারে ও-পার বাংলার ইলিশের দাম কেজিতে ২০০০ টাকার বেশি থাকার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে কেজি প্রতি ইলিশের ন্যূনতম রফতানি মূল্য ধার্য হয়েছে ১২.৫ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৫২৫ টাকা। কলকাতার পাইকারি বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৬০০ টাকা, তবে খুচরো বাজারে তা বেড়ে ২০০০–২২০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
মানিকতলা মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাবলু দাস bangla.aajtak.in-কে জানিয়েছেন, বর্তমানে মানিকতলা বাজারে ফ্রেস ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায়। বাংলাদেশের ইলিশের সঙ্গে স্থানীয় দিঘা, নামখানার ইলিশ এলে দাম কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু স্থানীয় ইলিশের যোগান না থাকলে আরও দাম বাড়বে বাংলাদেশি ইলিশের।