প্রয়াত হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন! এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছিল হংকং টিভি। গত এপ্রিলে করা এমন দাবি জন্ম দিয়েছিল নানা জল্পনার। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচক কিম বিভিন্ন সময় আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন।
এপ্রিলেই অস্ত্রোপচার হয় কিম জং উনের। তার পর থেকেই মধ্য তিরিশের নেতার শরীর ভালো যাচ্ছিল না বলে খবর প্রকাশ পায়। এরমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমের তরফে জানানো হয়, সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন কিম জং উন। উত্তর কোরিয়ার শাসকের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি পিয়ংইয়ংয়ে চিকিৎসক প্রতিনিধি দল পাঠায় চিন। এমন সময়েই হংকং টিভিতে সম্প্রচারিত হয়, প্রয়াত হয়েছেন কিম জং উন। এমনকী উত্তর কোরিয়ার শাসকের মৃতদেহ শায়িত রয়েছে, এই ছবিও দেখা যায় হংকং টিভিতে।
১৫ এপ্রিল ঠাকুর্দা কিম ইল সুংয়য়ের জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন কিম জং উন। তখন থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমে খবর অনুযায়ী, কিং জং উনকে শেষবার দেখা গিয়েছিল এপ্রিলের ১১ তারিখ। সেদিন তিনি একটি বৈঠকে যোগ দেন। এরপর থেকেই তাঁর বিষয়ে আর কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছিল না।
অত্যধিক ধূমপান, স্থূলতা-সহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন কিম জং উন। তার উপর ছিল মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ। এর জেরেই হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার এবং তারপর থেকেই গুরুতর অসুস্থ ছিলেন কিম জং উন। হার্টে জটিল অস্ত্রোপচারের পর গুঞ্জন রটে যে, উত্তর কোরিয়ার এই একনায়ক আর নেই।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি ছিল কিমের পর তাঁর আসনে বসবেন বোন কিম ইয়ো জং। যিনি দাদা কিম জং উনের মুখ্য পরামর্শদাতা। ২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়া-র পলিটব্যুরোতেও মনোনীতও হন তিনি। উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মহিলাও বলা হয় কিম ইয়ো জং-কে।
বাবার মৃত্যুর পর ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা অধিকার করেন কিম জং উন। তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সারা বিশ্বের আগ্রহ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমও কিমের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য দাবি করতে থাকেন, অসুস্থতার খবর সত্যি নয়।
কিমের স্বাস্থ্যের অবনতি গুঞ্জন চাউর হলেও উত্তর কোরিয়ার কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কেসিএনএ ও রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক রোদং সিনমুন, কিম জং উন কোথায় আছেন কিংবা তার শারীরিক অবস্থা কেমন এ নিয়ে কোনও সংবাদ প্রকাশ করেনি। যা নিয়ে জল্পনা আরও বাড়তে থাকে।
কিম জং উনের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা যখন ক্রমশ জোরালো হতে শুরু করে, তখনই মে দিবস উপলক্ষে প্রকাশ্যে আসেন তিনি! এই ঘটনায় অনেকেই খুব অবাক হয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন টানা প্রায় ৩ সপ্তাহ অজ্ঞাতবাসে কাটালেন উত্তর কোরিয়ার শাসক? সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে চিনা ব্লগারের দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় নেট দুনিয়ায়! নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে চিনা ব্লগার জেনিফার জেং প্রশ্ন তোলেন, মে দিবসে যিনি প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি কি আদৌ কিম জং উন! জেনিফার জেং-এর দাবি, ১ মে সামনে আসা কিমের দাঁতের আকার, কানের গড়ন, চুল বা ঠোঁটের উপরে কিউপিড বো সম্পূর্ণ আলাদা!
চিনা ব্লগারের এই দাবির পর অনেকেই মনে করছেন, হিটলার, জোসেফ স্টালিন, সাদ্দাম হুসেনদের মতো একনায়কদের ‘বডি ডবল’ ছিল। উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনেরও হয়তো এমনই ‘বডি ডবল’ রয়েছে। বিশ্বজুড়ে তাঁকে নিয়ে চলা জল্পনায় জল ঢালতেই কিমের ‘বডি ডবল’কে এখন সামনে আনা হয়েছে।
আজব কথা এই যে, কিম জং উনকে নিয়ে যখনই কোনও বিতর্ক দানা বাঁধে, তখনই তিনি কীভাবে যেন বেপাত্তা হয়ে যান। এর আগেও দেখা গেছে, ২০১৪ সালের প্রথম দিকে তিনি টানা ৪০ দিন গায়েব ছিলেন। এবারেও, ২০ দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পরে হঠাৎ করেই আবার ফিরে আসেন তিনি। অথচ পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে কিম জং উন মারা গেছেন এই খবরটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সেই পরিস্থিতি থেকে হঠাৎ আবার উদয় হয় তাঁর।
গত সেপ্টেম্বরেই উত্তর কোরিয়ার দাপুটে শাসক কিম জং উনের অসুস্থতা এবং বোন কিম ইয়ো জংয়ের হাতে ক্ষমতা যাওয়া নিয়ে জোর জল্পনার ইতি পড়ে । তবে এই জল্পনায় নাকি অত্যন্ত অখুশি ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বেসর্বা কিম। এমন খবর রটে যায় ছোট বোন কিম ইয়ো জং-কে ত্যা করিয়েছেন কিম স্বয়ং।
পারিবারিক ধারা মেনেই কিম জং ইয়ো সম্পর্কে বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে কিম জং উনের অসুস্থতার খবরের পর থেকেই ধোঁয়াশার পিছনে থাকা ৩৩ বছরের এই তরুণীই আন্তর্জাতিক আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রে ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকেই রকেটের গতিতে খবরের শিরোনামে উঠে আসেন কিম জং ইয়ো। দাদা কিম জং উনের পরে বোন কিম জং ইয়ো-এর হাতেই উত্তর কোরিয়ার শাসনভার যাবে বলে দাবি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দাদা কিমের 'চিফ অব স্টাফ' হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কিম জং ইয়ো। এছাড়াও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোরিয়ার কিমের মিত্রতা স্থাপনের চেষ্টাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বোনের। মার্কিন কূটনীতিবিদ মাইকেল ম্যাডন দাবি করেছেন, ছেলের চেয়েও মেয়ের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত শাসক ও কিম জং উনের বাবা, কিম জং ইল।