কয়েকদিন ধরেই খবরে রয়েছেন নিত্যানন্দ (Nithayananada)। নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে ভারত থেকে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি একটি জমি কিনে নিজের আলাদা দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি তাঁর দেশের নাম রাখেন 'কৈলাস'। রাষ্ট্রসংঘের একটি সমাবেশে বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ নামে এক মহিলা বক্তব্য রাখেন। বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ নিজেকে কৈলাস যুক্তরাষ্ট্রের (United States Of Kailasa) প্রতিনিধি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে তিনি রাষ্ট্রসংঘে কৈলাস যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত। বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ এই সমাবেশে বক্তব্যও রাখেন। তিনি দাবি করেন, কৈলাস যুক্তরাষ্ট্র হিন্দুদের প্রথম সার্বভৌম দেশ, যা নিত্যানন্দ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। নিত্যানন্দকে হিন্দুদের 'সর্বোচ্চ গুরু' হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিজয়প্রিয়া এবং অভিযোগ করেছেন যে তিনি 'নির্যাতিত' হচ্ছেন।
তিনি বলেছিলেন যে নিত্যানন্দ এবং কৈলাসের ২০ লক্ষ হিন্দু অভিবাসী জনসংখ্যার হয়রানি বন্ধ করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কৈলাস আসলে একটি কাল্পনিক দেশ। এর নামকরণ করেছেন নিত্যানন্দ। নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ভারতে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে ভারত থেকে পালিয়ে যান। তাকে 'পলাতক' ঘোষণা করা হয়েছে। নিত্যানন্দ কৈলাস সম্পর্কে অনেক দাবি করেছেন। এমন দাবি করেছেন যা শুনলে হতবাক হয়ে যাবেন যে কেউ।
আরও পড়ুন: UN-এর বৈঠকে সামিল নিত্যানন্দের দেশ 'কৈলাসা'? Tweet Viral
দাবি ১
ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে নিত্যানন্দ দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে জমি কিনেছিলেন এবং এটিকে তাঁর দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। এর নাম হল 'কৈলাস'। ভারত থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার।
দাবি ২
কৈলাসের ওয়েবসাইট দাবি করেছে, কৈলাস আন্দোলন শুরু হয়েছিল আমেরিকায়। এটি নিত্যানন্দ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রসংঘে বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ দাবি করেছিলেন যে এটিই হিন্দুদের একমাত্র এবং প্রথম সার্বভৌম দেশ।
দাবি ৩
কৈলাসের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে যে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ২০০ কোটি মানুষ তাঁদের দেশের নাগরিক। তাঁদের মধ্যে এক কোটি আদি শিব বিশ্বাসী। যাইহোক, বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ দাবি করেছেন যে কৈলাসে ২০ লক্ষ হিন্দু বাস করেন।
চতুর্থ ৪
সম্প্রতি ১৩ জানুয়ারি আমেরিকার সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার দাবি করেছে কৈলাস। আমেরিকা তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে কৈলাসের তরফে। বিজয়প্রিয়া নিত্যানন্দ দাবি করেছিলেন যে ১৫০টি দেশে দূতাবাস এবং এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছে কৈলাস।
দাবি ৫
কৈলাস তাদের নিজস্ব সংবিধান আছে বলে দাবি করে। এখানে ধর্মগ্রন্থ ও মনুস্মৃতি ভিত্তিক আইন চলে বলে দাবি করা হয়। এখানকার মানুষ মনুর নিয়ম মেনে চলে। কৈলাসের সরকার এটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রামাণিক ধর্মশাস্ত্র (হিন্দু আইনের বই) বলে মনে করে। ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মাত্র দেড় হাজার বছর আগে এই বইটির মাধ্যমে প্রাচীন ভারতে নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়েছিল।
দাবি ৬
কৈলাসের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, এ দেশে নির্যাতিত হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। এখানে বসবাসকারী হিন্দুরা বর্ণ, লিঙ্গের কোনও ভেদাভেদ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে।
দাবি ৬
ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কৈলাসে ইংরেজি, সংস্কৃত ও তামিল ভাষায় কথা বলা হয়। দেশের জাতীয় পশু 'নন্দী'। দেশের জাতীয় ফুল 'পদ্ম' এবং জাতীয় বৃক্ষ 'বট'।
দাবি ৮
কৈলাসও নিজেদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আছে বলে দাবি করেছে। এর নিজস্ব মুদ্রাও রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং মুদ্রা ২০২০ সালের আগস্টে চালু হয়েছিল।
দাবি ৯: ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে যে কৈলাসের নিজস্ব হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুকুলও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬ হাজার কোর্স পড়ানো হয় বলে দাবি করা হয়।
দাবি ১০
কৈলাসের জাতীয় পতাকা 'ঋষভ পতাকা'। কৈলাসের পতাকায়ও নিত্যানন্দের ছবি। শুধু তাই নয়, তাদের নিজস্ব জাতীয় সঙ্গীতও রয়েছে। কৈলাসের ওয়েবসাইটে জাতীয় সঙ্গীত হিন্দি, ইংরেজি এবং তামিল ভাষায় পাওয়া যায়।
নিত্যানন্দ কে?
নিত্যানন্দ ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অরুণাচলম এবং মাতার নাম লোকনায়কী। নিত্যানন্দ ১৯৯২ সালে স্কুলের পড়া শেষ করেন। ১৯৯৫ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১২ বছর বয়স থেকে তিনি রামকৃষ্ণ মঠে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন বলে দাবি করা হয়।
২০০৩ সালে নিত্যানন্দ বেঙ্গালুরুর কাছে বিদাদিতে তাঁর প্রথম আশ্রম খোলেন। এরপর তিনি অনেক আশ্রম খোলেন। ২০১০ সালে নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং অশ্লীলতার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাঁর একটি সেক্স সিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেই মামলায় নিত্যানন্দকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জামিন পেয়ে যান। ২০১২ সালে নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বরে আবার তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মেয়েকে অপহরণ করে বন্দি করে রাখার অভিযোগে মামলা করা হয়।