আজ রবি-পার্বণ। আজ চির নূতনের ডাক দেওয়ার দিন, আজ ২৫ বৈশাখ। আজ দিকে দিকে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করার উৎসব চলবে। এপার বাংলা হোক বা ওপার বাংলা রবি ঠাকুরের কীর্তি ভোলার নয়। দুই বাংলারই জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা তিনি। অথচ সেই বিশ্ব বরেণ্য কবিগুরুকেই অপমান করেছিলেন বাংলাদেশের বিতর্কিত গায়ক মইনুল আহসান নোবেল।
দুই বাংলাতেই নোবেল তাঁর কীর্তিকলাপ-একাধিক মন্তব্যের জেরে বিতর্কের শীর্ষে চলে এসেছেন। তাঁর আপত্তিকর মন্তব্য থেকে রেহাই পাননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো নোবেলজয়ী কবিও। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতাকে অপমান করায় তাঁকে আইনি নোটিসও পাঠানো হয়েছিল। বছর দুই আগের সেই ঘটনা আজও রবীন্দ্র প্রেমীদের মনে দগদগে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক হিরো আলমের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া নিয়ে সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঠিক তখনই হিরো আলমের পাশে দাঁড়িয়ে নোবেল সোশ্যাল মিডিয়ায় করে বসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য।
আরও পড়ুন: 'মাকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠায়', নোবেলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক প্রাক্তন স্ত্রী
ঠিক কী লিখেছিলেন নোবেল? নোবেল লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর রাবীন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে বয়কট করা হোক। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল! বিদ্রোহী কবি; যখন আমাদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ছিলেন। রোজ রোজ ব্রিটিশদের কাছে কারাবন্দি হতেন। কনডেম সেলে টর্চারের শিকার হচ্ছিলেন। তখন ব্রিটিশদের চাটুকারিতা করে সো-কল্ড বিশ্বকবি বিন্দাস আমাদের বাপ-দাদার রক্ত চুষে খাচ্ছিল।’ এই পোস্টের তীব্র সমালোচনা করেন বহু নেটিজেন। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট দেন নোবেল।
এখানেই অবশ্য থেমে থাকেননি নোবেল। সেই প্রসঙ্গ টেনে নোবেল তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ-নজরুল তো আর নবী কিংবা দেবতা না যে তাদের গান প্যারোডি আকারে গাওয়া যাবে না! রবীন্দ্রনাথ এদেশের কবিদের মূল্যায়ন করে যাই নাই। তারে নিয়ে যে এদেশে চর্চা হয় এটাই রবীন্দ্রনাথের জন্য বেশি। বাংলাদেশের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান নিতান্তই কম বা নেই বললেই চলে।’
আরও পড়ুন: 'হালকা ফিল নিতে মদ খেয়েছিলাম,' বলছেন নোবেল
বিতর্ক নিয়েই বাঁচতে ভালোবাসেন নোবেল। তাই রবীন্দ্রনাথও তাঁর কটাক্ষ থেকে বাঁচতে পারেনি। নোবেলর কথায় বাংলাদেশের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের কোনও অবদান নেই। নোবেলের এই বিবৃতিতেই চটেছিল নেটপাড়া। সেই রেশ কিন্তু আজও বজায় রয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও রবি ঠাকুরের লেখা। বলা যায়, দুই বাংলার মিলন সেতু রবীন্দ্রনাথ। দুই দেশেই সমানভাবে সমাদৃত তিনি। জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টার অপমান করে দেশের অপমান করেছেন নোবেল। তবে নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন এই বিতর্কিত গায়ক।
আরও পড়ুন: 'এই নোবেল আমার কাছে অচেনা,' অবাক স্ত্রী
এর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নোবেল। ‘সারেগামাপা’ অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী থাকাকালীন কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির থেকে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেশি উপযুক্ত। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে করা সেই আঘাতের ঘা এখনও শোকায়নি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে থেকেই।