গত এক বছর ধরে করোনা ভাইরাস (Corona Virus) ছন্দপতন ঘটিয়েছে সমস্ত ক্ষেত্রেই। অতিমারী আবহে দীর্ঘদিন ধরে রুজি- রুটির সংকটের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এই সমস্ত শিল্পীদের কথা মাথায় রেখে সমস্ত সুরক্ষাবিধি ও নিয়মাবলী মেনে গত বছর নভেম্বরের শেষ দিকে যাত্রা, মঞ্চ, লোকশিল্পীদের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক করতে রাজ্য সরকার মুক্ত মঞ্চের পাশাপাশি বদ্ধ জায়গায়ও অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সব ঠিক হওয়ার আগেই দেশে ফের থাবা বসায় করোনা।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সমস্ত ক্ষেত্রেই ফের সংকটে পড়েন মানুষ। অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ শিথিল হলেও একই জায়গায় রয়েছেন সঙ্গীত শিল্পীরা। আর এই সমস্ত শিল্পীদের হাল হকিকত নিয়ে আজতক বাংলার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে আলোচনা করলেন জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী (Rupankar Bagchi)।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করে রূপঙ্কর বাগচী লেখেন, "সঙ্গীত শিল্পীরা অত্যন্ত সংকটে রয়েছেন। বন্ধুরা, আমরা কি দেখা করে এর জন্য ভাল কিছু আলোচনা করতে পারি?" তাঁর এই পোস্টে সম্মতি জানিয়েছেন বাংলার বহু শিল্পী। সেই সঙ্গে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথাও ব্যক্ত করে লিখেছেন "আমরা সাথে আছি "।
রূপঙ্কর বলেন, "সঙ্গীত শিল্পীরা সবত্রই শোয়ের ওপর ভরসা করে বসে থাকেন। কোনও মানুষের যদি ৭০-৮০ কিংবা ১০০ শতাংশই কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সে যতটা সংকটে পড়বেন। আমরাও এখন ঠিক সেই অবস্থায় রয়েছি। এটা শুধু গায়কদের কথা নয়! নামী-অনামী গায়ক হোক কিংবা কোনও যন্ত্রবাদক। এমনকি যারা স্টেজ তৈরি করেন, নেপথ্যে কাজ করেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন সকলে সংকটে ভুগছেন।"
আরও পড়ুন: প্রথমবার রাহুল- সৃজিত দ্বৈরথ! সামনে এল 'REKKA"-র টিজার
তিনি আরও যোগ করলেন, "গত বছর ডিজিটাল কনসার্ট কিছুটা চললেও, এখন আর সেটাও চলছে না। যদিও অন্য কনসার্টে ১০ টাকা পাওয়া গেলে, ডিজিটালের ক্ষেত্রে ২ টাকা পান শিল্পীরা। তাই এটি কখনও বিকল্প হতে পারে না। আর সেই ভাবে খুব বেশী কনসার্ট হয়ও না এখানে। এভাবে তো চলা সম্ভব না।"
রূপঙ্কর বাগচি জানালেন তাঁকে রাজ্যর বিভিন্ন জায়গার শিল্পীরা যোগাযোগ করছেন শোয়ের জন্য। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে অনেকে এই পেশা ছেড়েও দিচ্ছেন। তাঁরই পরিচিত এক শিল্পী সাইকেলে করে প্লাস্টিক বিক্রি করছেন পেটের টানে। রূপঙ্করের গলায় ক্ষোভের সুর সমগ্র বিষয়টা নিয়েই। তিনি বললেন, "সব ইন্ডাস্ট্রি অতিমারীর জন্য ধুঁকছে। কিন্তু তাদের কিছু অন্তত কাজ হচ্ছে। সিনেমা, ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং শুরু হয়েছে। আমাদের কী হবে? ইউরো কাপ, কোপা আমেরিকা হল, আইপিএল হবে, নির্বাচনও হচ্ছে, ওয়ার্ক ফর্ম হলেও অন্যান্য পেশার মানুষদের চাকরী আছে। সকলেই সমস্যায় থাকলেও অন্তত কিছুটা কাজ হচ্ছে। সঙ্গীতশিল্পীরা কোন দিকে এখন ফোকাস করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।"
আরও পড়ুন: করণ জোহারের ছবিতে টোটা! কীভাবে এগোল কথা, জানালেন অভিনেতা
ইন্ডাস্ট্রি নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দিলেন রূপাঙ্কর বাগচি। তাঁর কথায়, "আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রি কখনও ঐক্যবদ্ধ হয়নি। সেই জন্যে একজন যোগ্য লিডার পাওয়াও খুব প্রয়োজন। অ্যাসোসিয়েশন অফ পারফর্মিং আর্টস (Association Of Performing Arts) কিংবা ক্যালকাটা সিনে মিউজিসিয়ানস অ্যাসোসিয়েশন (Calcutta Cine Musicians Association) থাকলেও তারা বিন্দুমাত্র সক্রিয় নয়। কোন ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে আমরা এগোবো সেটা জানি না।"
আরও পড়ুন: 'বয়কট' ট্রেন্ডকে ছাপিয়ে আসছে 'তুফান'! চরিত্রের স্বার্থে 'বডি ট্রাফর্মেশন' কতটা কঠিন? জানালেন ফারহান
তবে রূপঙ্করের পোস্টে অনেক শিল্পী সহমত প্রকাশ করলেও,তিনি বললেন, "অনেকই বলেছে 'আমায় ডেকো'! কিন্তু তা না বলে যদি তাঁরা বলেন 'চলো করি' তাহলে মনে হয় কিছুটা সাহস পেতাম। এই 'আমায় ডেকো'-তে সত্যি কথা বলতে ভরসা করতে পারছি না। এক্ষেত্রে যেন মনে হয় আমারই সব দায়িত্ব। তবে এখনও পর্যন্ত কিছু ঠিক হয়নি কীভাবে এগোবো। দেখি হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করবো।"