Honor Killing At North Dinajpur: ঠিক যেন ক্রাইম সিরিজের কাহিনী। অনার কিলিং করে মেয়েকে খুন করে নিজেরাই ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর মেয়ের আত্মহত্যার গল্প ফেঁদে পুলিশ ও প্রতিবেশীদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে সফল হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই পুলিশের জেরায় ধরা পড়ে গেল বাবা-মা। উত্তর প্রদেশ বা রাজস্থান নয়, বাংলার বুকে উত্তর দিনাজপুরে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শিউরে উঠেছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুনঃ শ্রদ্ধা খুনের চেয়েও ভয়ঙ্কর, আলমারি-ড্রামে ঠাসা মায়ের দেহের টুকরো; আতঙ্ক
পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে নানা গল্প বানিয়েও লাভ হল না। মেয়েকে খুনের অভিযোগে শুক্রবার গ্রেফতার করা হল বাবাকে। আর সত্য চাপা দেওয়া এবং পুলিশকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মা-কেও। দুজনেই অবশ্য় পরে পুলিশি জেরায় নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাবা ও মা-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
গত ৯ মার্চ কুশমণ্ডি থানার মালিগাও পঞ্চায়েতের কাঁঠালহাট গ্রামে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রুম্পা রায়ের ঝুলন্ত দেহ। ঘটনার পর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। প্রাথমিক তদন্তে গেলে পুলিশকে রুম্পার মা মণিকা রায় জানিয়েছিলেন, রাতে মেয়ে ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে কাঁদছিল। পরে ঘর থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আশপাশের লোকজনকেও একই কথা বলে তারা। এরপর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে বাবা অজয় রায় ও মা মণিকার বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি উঠে আসে।
আরও পড়ুনঃ নিজের ৭ বছরের ছেলেকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দিল বাবা, উস্থিতে হাড়হিম ঘটনা
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে রুম্পার ফোন থেকে রাত সাড়ে আটটা নাগাদই শেষ কথা বলা হয়। কিন্তু তারপর একাধিকবার ফোন এলেও কেউ ধরেনি। ধোঁয়াশা কাটাতে পুলিশ বারবার জেরা করে ওই মৃত কিশোরীর বাবা-মাকে। শেষ পর্যন্ত জেরায় মণিকা রায় ভেঙে পড়ে এবং স্বীকার করে, তার স্বামী অজয় রায়ই মেয়েকে খুন করেছে। এমনকী স্বামীর ভয়ে তিনি সত্যি কথা বলতে পারেননি বলেও জানান মণিকাদেবী। পুলিশ জানতে পেরেছে সম্প্রতি মেয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় তা মেনে নিতে পারেনি বাবা অজয়। সেই রাগ থেকেই মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে অজয়। পুলিশ অজয় ও মণিকাকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার ঘটনার পুনর্নিমাণ করতে অজয় ও মণিকাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ। রুম্পার বাবা পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক বলে জানা গিয়েছে।
এর আগে প্রচার করা হয়েছিল, দোলের দিন রাতে মাংস নিয়ে এসে বাবা তাঁর মেয়েকে ডাকলেও সারা পাননি ৷ ঘুমোচ্ছেন মনে করে তাঁরা আর ডাকেননি বলে জানিয়েছিলেন। পরদিন সকালেও তাঁর কোনও সাড়া শব্দ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা ভেতরে গিয়ে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পান। বিষয়টি সকালে দেখে তাঁরাই খবর দেন পুলিশকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কুশমণ্ডি থানার আইসি তপন পাল সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়। যদিও পুলিশ দেখে, মৃতের মুখ সহ গোটা শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। পাশাপাশি মুখের বেশির ভাগ অংশ থ্যাতলানো অবস্থায় ছিল। যা থেকে পরিষ্কার তাঁকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। এ দিকে পুরো বিষয়টি আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য মৃতের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দেওয়া হয়।