দুর্গা পুজো, কালী পুজো, ভাইফোঁটার পরে বাঙালি অপেক্ষায় থাকে আরও এক বড় উৎসব- জগদ্ধাত্রী পুজোর। পার্বতীরই অপর রূপ দেবী জগদ্ধাত্রী। জগতের ধাত্রী অর্থাৎ ধারণ কর্ত্রী। পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জায়গায় পুজো হলেও মূলত চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরেই জগদ্ধাত্রী পুজো সবচেয়ে জনপ্রিয়। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মূলত আলোর কাজের জন্যে বিখ্যাত। তবে অনেকেরই অজানা, নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন হয় ১৯৬৬ সালে।
কৃষ্ণনগরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন
শোনা যায়, নদীয়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকালে নবাব আলিবর্দি খাঁ, তাঁর থেকে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সেই অর্থ দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মুর্শিদাবাদে বন্দী করা হয়। বন্দিদশা কাটিয়ে যখন রাজা কৃষ্ণনগরে ফিরছিলেন, তখন তিনি শুনতে পান দুর্গাপুজোর বিসর্জনের বাজনা বেজে গেছে।
দুর্গাপুজোয় সেখানে উপস্থিত না থাকতে পারে অত্যন্ত কষ্ট পান তিনি। সেই রাতেই মা জগদ্ধাত্রী রাজার স্বপ্নে দর্শন দিয়ে তাঁকে পুজোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে মা দুর্গার বিকল্প হিসেবে মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা শুরু হয় বাংলায়। পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্র রাজার পুজোর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন ফরাসডাঙ্গা অর্থাৎ বর্তমানের চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন।
রাজবাড়ীতে বসেই জগদ্ধাত্রীর দর্শন করতেন রানিমা
তৎকালীন সময়ে কৃষ্ণনগরের রানিমা রাজবাড়ীতে বসেই জগদ্ধাত্রী মায়ের দর্শন করতেন। তাই সেই সময় থেকে নিয়ম মেনে দেবীর বিসর্জনের আগে রাজবাড়ীর সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনতে হয় জগদ্ধাত্রী প্রতিমাকে। জগদ্ধাত্রী পুজোর সকালে পালকিতে দেবীর ঘাট জলঙ্গীর জলে ভরে আনার প্রথা রয়েছে। তবে যোগাযোগ উন্নত হলেও এখনও প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী সাঙে করে অর্থাৎ কাঁধে চেপেই রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন মা জগদ্ধাত্রী।
জলঙ্গী নদীর তীরে প্রতিমা নিরঞ্জন
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সামনে থেকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় জলঙ্গী নদীর তীরে। সেখানে মা জগদ্ধাত্রীকে প্রদক্ষিণ করিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় নদীতে। রাজবাড়ীতেও ধুমধাম করে উদযাপন হয় পুজো। নিয়ম অনুযায়ী সবার আগে বিসর্জন হয়, রাজবাড়ীর প্রতিমা। বছরের যে তিনদিন মূলত দর্শনার্থী বা ভ্রমণার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর দরজা, তার মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো একটি।
জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়মকানুন
কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। দুই প্রথায় এই পুজো করার প্রচলন আছে। কেউ দুর্গাপূজার ধাঁচে পুজো করেন সপ্তমী থেকে নবমী, আবার অনেকে নবমীর দিনই তিনবার পুজোর আয়োজন করেন। এই পুজোর অনেক প্রথাই দুর্গাপুজোর অনুরূপ।
জগদ্ধাত্রী পুজো ২০২৩ -র নির্ঘণ্ট
* ১৯ নভেম্বর, রবিবার - ষষ্ঠী ও সপ্তমী
* ২০ নভেম্বর, সোমবার - অষ্টমী
* ২১ নভেম্বর, মঙ্গলবার - নবমী
* ২২ নভেম্বর, বুধবার - দশমী
১৯ নভেম্বর রাত ৫/২৮/২২ থেকে ২০ নভেম্বর রাত ৩/৮/২০ অবধি থাকবে অষ্টমী তিথি। ২০ নভেম্বর রাত ৩/৮/২১ থেকে ২১ নভেম্বর রাত ১২/৪৫/৩২ অবধি থাকবে নবমী তিথি।